বয়রা গাছের নীচে গড়ে উঠেছে তাঁর মন্দির। মা এখানে বয়রা কালী নামেই পরিচিত। উত্তরবঙ্গে সীমান্ত রাজ্য উত্তর দিনাজপুর। তারই এক ছোট শহর কালিয়াগঞ্জ। সেখানে প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে অধিষ্ঠিত মা কালী।
শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে শ্রীমতি নদী। যদিও এখন আর তেমন গতি নেই নদীতে। তবে একটা সময় এই পথেই নৌকা ভাসাত সওদাগরেরা। পাল তুলে যেত বাণিজ্যে।
এ হেন শহরেই রয়েছে দেবী বয়রা কালীর মন্দির। মন্দিরের পাশ দিয়ে গিয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। জনশ্রুতি রয়েছে, ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যে আসা যাওয়ার পথে পুজো দিয়ে যেতেন। বয়রা গাছের তলায় মা কালীর মন্দির থাকায় ব্যবসায়ীরাই নাম দেন বয়রা কালীর মন্দির।
তবে বদলেছে সময়। এক দিনে জলভরা শ্রীমতি নদীর জলও ধীরে ধীরে শুকিয়ে গেল। সময়ের সঙ্গে শ্রীমতি নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকা পরিণত হয় জঙ্গলে। দিনে দিনে কমেছে লোকের আনাগোনা।
জঙ্গলে গড়ে ওঠে ডাকাতদের রাজত্ব। তার জন্য কিন্তু ভাটা পড়েনি মায়ের আরাধনায়। সেই সময়ে ডাকাতদের কাছেই পুজিতা হতেন মা বয়রা কালী।
পরবর্তীকালে ব্রিটিশ আমলে, ১৯৩২ সালে এই জায়গার দারোগা হয়ে আসেন অন্য সম্প্রদায়ের এক ব্যাক্তি। শোনা যায় ডাকাত দমনের জন্য তিনিও নাকি শরণাপন্ন হন মা কালীর।
পরে তিনিই চাঁদা তুলে ও বিভিন্ন ভাবে টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠা করেন মন্দির। তার পর থেকেই কার্ত্তিকি অমাবস্যার রাতে বেশ ধুমধাম করে হয় মায়ের আরাধনা।
দেবী বয়রা কালীর মাহাত্ম্য কথা ছড়িয়ে রয়েছে দেশ বিদেশে। তাই কালী পুজোর রাতে ভক্ত সমাগম হয় দূরদূরান্ত থেকে।
১৯৯৮ সালে এই ভক্তদের থেকেই চাঁদা তুলে তৈরি করা হয় মায়ের বর্তমান প্রতিষ্ঠিত মূর্তি। অষ্টধাতু দিয়ে গড়ে তোলা হয় এই মূর্তি। রয়েছে সোনা ও রুপোর অলঙ্কার।
কথিত, এক বার কোনও ভক্ত যদি এই মন্দিরে আসেন, তা হলে নাকি অন্য কোনও কালী মন্দিরে আর যান না। এখানেই পুরণ হয় তার মনোবাঞ্ছা।