চন্দননগর হুগলির ‘বোড় পঞ্চাননতলা সর্বজনীন’। নামটা স্রেফ কোনও বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজোর নাম নয়। বরং তার সঙ্গে জড়িয়ে আরও অনেক কিছু। ঐতিহ্যের ও মানবিকতার মেলবন্ধনের প্রতীক হয়ে ওঠা এই পুজো দেখতে দেখতে পদার্পণ করল ৪৯তম বর্ষে।
শুধু জগদ্ধাত্রী পুজো নয়, সেই সঙ্গে এই ক্লাব আয়োজন করে দুর্গাপুজোরও। তার বয়স কিন্তু আরও বেশি। ১৪১ বছর।
প্রাক সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে দাঁড়িয়ে এই জগদ্ধাত্রী পুজোর এ বারের থিম ‘সৃজন কাঠি’। মানুষের প্রযুক্তিগত কারিগরি পদ্ধতিও এক শৈল্পিক সত্ত্বা- এই তার মূল বিষয়।
যন্ত্র চালানোর সৃজনশীলতা হল এমন কারিগরদের নিজস্ব পরিচয়। তাদের জিয়ন কাঠি যেমন রাজমিস্ত্রির কর্ণিক, কামারের হাতুড়ি, কৃষকদের কোদাল- সে সব দিয়েই সাজানো হয়েছে মণ্ডপ।
এর পাশাপাশি রয়েছে সমাজসেবামূলক কাজও। এ বছর দুর্গাপুজোয় এই ক্লাব ১৮০ জন অনাথ আবাসিকের হাতে খাবার ও শিক্ষা সামগ্রী তুলে দিয়েছিল। শনিবার ফের জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় খাদ্য সামগ্রী।
বোড় পঞ্চাননতলা সর্বজনীনের সম্পাদক দেবসদয় কুণ্ডুর কথায়, “চন্দননগরের বোড় পঞ্চাননতলা সর্বজনীনকে শুধুমাত্র সারা বছরে মা দুর্গা বা জগদ্ধাত্রী পূজোর মতো দুটো বৃহৎ আনন্দ উৎসবের আয়োজনকারী বারোয়ারি হিসেবে গণ্য করলে তার পরিচিতি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই পুজো বোড় পঞ্চাননতলার অধিবাসীদের কাছে এক অনির্বচনীয় অনুভূতি ও অদম্য আবেগের নাম । বহু বাধাবিপত্তি, সুখ-দুঃখ অবিচলিত ভাবে পেরিয়ে আজ এই সর্বজনীন অনুভূতির উপলব্ধিকে তারা এগিয়ে নিয়ে চলেছে।”
প্রায় দুশো বছরের ঐতিহ্যবাহী অশ্বত্থ গাছের নীচে বাবা পঞ্চানন মন্দির। তার নামেই এই বোড় পঞ্চাননতলা সর্বজনীন। সম্পাদকের কথায়, "চন্দননগরে ১৪১তম বর্ষের সর্বপ্রাচীন বারোয়ারী দুর্গোৎসব। তার সঙ্গেই ৪৯ বর্ষের জগদ্ধাত্রীর মহোৎসব ও সমান্তরালভাবে নিষ্ঠার সঙ্গেই পালন করে চলেছে আমাদের ক্লাব।”
পুরো বিষয়টি যাঁর মস্তিস্ক প্রসূত, তিনি বিমান সাহা। প্রতিমাশিল্পী মুক্তি পাল। প্রতিমার সাজসজ্জায় রয়েছেন প্রসাদ ঘোষ। মণ্ডপের আলোক সজ্জায় রানা রায় ও শব্দে অভিজিৎ কোলে। আনুষঙ্গিক সমস্ত রকম আলোকসজ্জায় রয়েছেন সমরেশ দে।