Hawker Union organises Yamraj Puja

খাস কলকাতার বুকেই ন’বছর ধরে হচ্ছে যমরাজের পুজো, কোথায় জানেন কি?

এ শহরের বুকেই আজ ন’বছর ধরে পালিত হচ্ছে যমরাজের পুজো, তার খবর জানেন না অনেকেই।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৫৯
Share:

মৃত্যুদেবতা যমের পুজো!

Advertisement

তাতে আবার সে পুজো হয় খাস কলকাতাতেই। এ খবর জানতেন?

বিশ্বাস হচ্ছে না তো? অথচ এ শহরেই যাদবপুরের একটি এলাকায় হয় যমের পুজো।

Advertisement

আসলে যমরাজের পুজো বাংলায় মূলত ভাইফোঁটার সঙ্গে জড়িয়ে। ভাইফোঁটার দিন বোনেরা তাঁদের ভাইদের দীর্ঘায়ু, সুখ এবং সমৃদ্ধি কামনা করে যমরাজের কাছে প্রার্থনা করেন। এই পুজোর মাধ্যমে ভাইদের জীবন থেকে দুঃখ, কষ্ট এবং বিপদ দূর হয় বলে মনে করা হয় এবং যমরাজের কৃপায় তাঁরা দীর্ঘায়ু লাভ করেন।

কিন্তু কে এই যমরাজ? কেনই বা তিনি মৃত্যুর দেবতা?

সূর্যদেবের পুত্র যমরাজ। ধর্মরাজ, কাল- এ রকম বিভিন্ন নামে তাঁকে অভিহিত করা হয়। তাঁর বাসস্থান যমলোক বা যমপুরী, অস্ত্র হল দণ্ড ও পাশ, বাহন মহিষ। বৈদিক সাহিত্যে বলা হয়, যম হলেন প্রথম নশ্বর, এবং তিনি মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলেন। এবং তার পরে ‘অন্য জগতে’ যাওয়ার পথ তৈরি করেছিলেন। তিনটি ঋগ্বৈদিক স্বর্গের মধ্যে তৃতীয় এবং সর্বোচ্চটি যমের। এখানেই দেবতাদের বাস।

যম দশ দিকপালের অন্যতম ও দক্ষিণ দিকের রক্ষক হিসেবে নিযুক্ত। পুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী, যম কৃষ্ণবর্ণ, খর্বকায়, খঞ্জ, মহিষবাহন এবং তিনি আত্মাকে দেহ থেকে বার করে আনার জন্য একটি পাশ ও একটি দণ্ড (কালদণ্ড) বহন করেন।

কিন্তু ভাইফোঁটার সঙ্গে কী ভাবে জড়িয়ে গেলেন তিনি?

যমরাজ পুজোর প্রাচীন কাহিনি অনুযায়ী, যমের বোন যমুনা (বা যমী) এক বার তাঁর ভাইকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে আদর-আপ্যায়ন করেন এবং তাঁর দীর্ঘ জীবন কামনা করেন। এতে যমরাজ সন্তুষ্ট হয়ে তাকে আশীর্বাদ করে প্রতিশ্রুতি দেন, যে সব ভাইরা এই দিন তাদের বোনের কাছ থেকে ফোঁটা নেবে, তাদের জীবন দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ হবে। সেই থেকেই নাকি যমরাজ পুজো ও ভাইফোঁটার এই বিশেষ আচার পালন শুরু।

মূল নিয়ম অনুসারে, যমরাজ পুজোর সময়ে বোনেরা বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। প্রথমে দেবতা যমরাজের মূর্তি বা প্রতীকী চিত্রের পুজো করা হয়। এর পরে ভাইদের কপালে স্নেহের চিহ্ন হিসেবে ফোঁটা দিয়ে তাঁদের দীর্ঘায়ু কামনা করেন বোনেরা। সঙ্গে বিভিন্ন মিষ্টান্ন ও উপহার ভাইদের প্রদানও করেন তাঁরা। আনুষ্ঠানিক যজ্ঞে যমকে সোম ও ঘি দেওয়া হয়।

মহাভারত, রামায়ণ, বেদ ও নানা পুরাণে যমরাজের বিস্তর উল্লেখ রয়েছে। তাঁর পুত্র যুধিষ্ঠির পঞ্চ পাণ্ডবদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব। তবে যমরাজের লৌকিক পুজো সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব একটা প্রচলিত নয়। তবুও যাদবপুর এলাকায় আয়োজন করা হয় এই পুজোর। প্রতি বছর ভাই ফোঁটার দিন, যাদবপুর বাজারের কাছে স্টেশনের খানিকটা আগেই দেখা মেলে এক ছোট প্যান্ডেলের। সেখানে দুই শিংওয়ালা গহনা পরিহিত কৃষ্ণবর্ণ একটি মূর্তি। পাশেই প্রণামীর থালা। ঢাক-কাঁসর বাজিয়ে পুরোদমে চলে পুজো, সঙ্গে খিচুড়ি ভোগের আয়োজন।

এই পুজোর আয়োজন করে যাদবপুর হকার্স সমিতি। তাদের পুজো এ বার পড়ল নবম বর্ষে। ভারতে বা বাংলায় ধর্মরাজ যমের পুজো যে বহুল প্রচলিত, তা বলা যায় না। তবে যাদবপুরের এই হকার্স সমিতি গত নয় বছর ধরে ভক্তিভরে করে চলেছেন যমরাজের পুজো, যা বাংলা তথা সমগ্র দেশে বিরলই বলা চলে।


এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement