মা দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন – তা সকলেরই জানা। কিন্তু কে এই মহিষাসুর? কী ভাবে তাঁর জন্ম? জেনে নিন জীবনবৃত্তান্ত।
পৌরাণিক রচনাবলী থেকে জানা যায়, দৈত্যজননী দনুর দুই পুত্র – রম্ভ এবং করম্ভ। রম্ভ যখন অসুরলোকের অধিপতি, দনু এক দিন তাকে স্বর্গ এবং মর্ত্য জয় করার নির্দেশ দেন।
নদীর তীরে অগ্নিকুণ্ড জ্বালিয়ে তপস্যা শুরু করে রম্ভ। আর করম্ভ বুকসমান জলে দাঁড়িয়ে শুরু করে বরুণদেবের আরাধনা। কেটে যায় কয়েক মাস। দেবরাজ ইন্দ্র কুমীরের রূপ ধরে করম্ভকে আক্রমণ করেন জলের তলায়। সেই লড়াইয়ে অবশেষে মৃত্যু হয় করম্ভের।কিন্তু নানা বাধা সত্ত্বেও তপস্যা শেষ করে রম্ভ। তার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে অগ্নিদেব বর দেন, রম্ভের যে পুত্র সন্তান হবে সে হবে স্বর্গ, মর্ত্য এবং অসুরলোকের একচ্ছত্র অধিপতি।
অন্য দিকে অভিশাপের কারণে স্বর্গের এক অপ্সরার আগমন ঘটে পৃথিবীতে, যে মানবীর পাশাপাশি মহিষীর রূপ ধারণ করতে পারে।
ঘটনাচক্রে রাজা রম্ভ বিবাহ করেন তাকে। রম্ভ যখন তপস্যারত, অন্তঃসত্ত্বা রানি মহিষী তখন পশুর রূপ ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।
তখনই তার প্রতি আকৃষ্ট এক মায়াবী মোষ তাকে অপহরণের চেষ্টা করে। রাজা রম্ভ বাধা দিলে যুদ্ধ শুরু হয় এবং প্রাণ হারান রম্ভ।
যমরাজ রম্ভের আত্মা ছিনিয়ে নিতে এলে বাধা দেন পতিব্রতা মহিষী। নিজের গর্ভে স্থান দেন স্বামীর আত্মাকে। অর্থাৎ নিজের গর্ভস্থ সন্তান ছাড়াও তার গর্ভে লালিতপালিত হতে থাকে তার স্বামীর আত্মা। এই আত্মার পুনর্জন্ম হয় - অসুর রক্তবীজ। আর যে গর্ভস্থ সন্তানের জন্ম হয়, তিনিই মহিষাসুর।
যে হেতু তাঁর মা মহিষী ছিলেন, তাই ইচ্ছে মতো মহিষের রূপ ধরতে পারতেন এবং মহিষের পেটে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারতেন মহিষাসুর।
ধার্মিক মহিষাসুরের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা বর দেন, কোনও পুরুষ তাকে বধ করতে পারবে না। কোনও মহিলার হাতে মৃত্যুর কথা বলা হলে মহিষাসুর তাচ্ছিল্যের সঙ্গে উত্তর দেন, নারীরা দুর্বল। কোনও নারী তাঁকে বধ করতে সক্ষম নয়। দাম্ভিক অসুররাজ বুঝতে পারেননি, ভবিষ্যতে নারীর হাতেই তাঁর মৃত্যু লেখা আছে। এর পরের কাহিনি সকলেরই জানা।
দাম্ভিক অসুররাজ বুঝতে পারেননি, ভবিষ্যতে নারীর হাতেই তাঁর মৃত্যু লেখা আছে। এর পরের কাহিনি সকলেরই জানা। মহিষাসুর স্বর্গরাজ্য দখল করার পরে দেবরাজ ইন্দ্র এবং অন্যান্য দেবতারা ভগবান ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের শরণাপন্ন হন। তাঁদের মিলিত শক্তির আধার দেবী দুর্গা চণ্ডিকা রূপে মহিষাসুরকে এবং কালী রূপে বধ করেন রক্তবীজকে।