কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোগুলি আভিজাত্যে মোড়া। তাদের হরেক রীতিনীতি আজও পালিত হয় আগের মতোই। যেমন বলরাম দে স্ট্রিটের বনেদি দত্তবাড়ির দুর্গাপুজোর আচার অনুষ্ঠান বেশ আকর্ষণীয়।
প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো বলরাম দে স্ট্রিটের বনেদি দত্তবাড়ির পুজো। শ্যামবনি দত্ত এই পুজোর প্রচলন করেন ১৮৮১ সালে। সাবেক পুজোটির প্রধান বিশেষত্ব হল দেবী ঘোটকবাহিনী।
তিনচালা বিশিষ্ট প্রতিমায় মঠচৌরি শিল্পের কাজ দেখা যায়। অতীতে মৃৎশিল্পী হরিপদ পাল ও শিল্পী শিববাবুর সুনিপুণ শিল্পকর্মে দেবী মৃন্ময়ী রূপে সেজে উঠতেন।
সিগারেটের রাংতার উপরে কখনও রুপোলি, কখনও বা ময়ূরকণ্ঠী নীল রঙে আঁকা হত মা দুর্গার শাড়ির পাড়। কৃষ্ণনগরের পটশিল্পীর নিখুঁত তুলির টানে তিন চালায় ফুটে উঠত বিভিন্ন দেবতার ছবি।
উল্টো রথে কাঠামো পুজো এবং ঘট স্থাপন করা হয় কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে। সাত জন ব্রাহ্মণের চণ্ডীপাঠ চলে সেই দিন থেকে শুরু করে পঞ্চমী পর্যন্ত। কুমারী পুজোহয় সপ্তমী থেকে নবমী।
এই পুজোর অন্যতম রীতি অনুযায়ী অষ্টমী ও নবমীতে বাড়ির মহিলারা মাথায় ও দুই হাতে কাপড় বেঁধে তার উপর মালসায় পাটকাঠির ধুনো জ্বালিয়ে দেবীশক্তির আরাধনা করেন।
আগে জোড়া নৌকায় বিসর্জনের সময়ে উত্তরমুখী করে উড়িয়ে দেওয়া হত তিন-চারটে নীলকণ্ঠ পাখি। জানা যায়, মা দুর্গার প্রত্যাবর্তনের সংবাদ কৈলাসে মহাদেবের কাছে পৌঁছে দেওয়াই ছিল তার নেপথ্যে।
বর্তমানে এই রীতির প্রচলন নেই আর। প্রথমে কাঁধে করে ও পরে গাড়িতে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।
সাতটি পদের ভোগ দেওয়া হয়। তার বেশির ভাগটাই শুকনো মিষ্টি। ভোগের উপচার হিসেবে লেডিকেনি, দরবেশ, চার চৌকো গজা, খাস্তা কচুরি, রাধা বল্লভী, লুচি সাজিয়ে দেওয়া হয় দেবীর সামনে। প্রতিটি পদ দশ গণ্ডা অর্থাৎ ৪০টি করে বানানো হয় দেবীর নৈবেদ্য হিসাবে।
পরবর্তীকালে সর্বসাধারণের জন্য দশমীতে খিচুড়ি ও পায়েস ভোগের আয়োজন করা হয়। সেই রীতি আজও চলছে।