গোটা গ্রাম জুড়ে একটাই দুর্গাপুজো। যা নবগ্রাম থানার সিঙ্গার গ্রামের মানুষ রায়বাড়ির দুর্গাপুজো হিসেবেই জানে। পুজোর ক'টা দিন রায়বাড়ির পুজোতেই মেতে ওঠে সিঙ্গার গ্রামের সাধারন মানুষ। বরবারই প্রতিমার গায়ে রঙের পোঁচ পড়তেই গ্রামের পাঁচ থেকে পঞ্চাশ সকলেই এক বার করে এসে দেখে যান। সকলের মনেই আগ্রহ, কত দূর হল দুর্গার রং। নতুন করে তৈরি হওয়া দুর্গাদালানের সামনে দাঁড়িয়ে লোকজনের আসা-যাওয়া দেখছিলেন পরিবারের প্রবীণ সদস্য জগাইচন্দ্র রায়। বললেন, ‘‘এই যে গ্রামবাসীদের আনাগোনা দেখছেন, এটা আগে হত না। আমার জ্ঞান হওয়া থেকে দেখে আসছি এ বাড়ির দুর্গাপুজোয় কোনও গ্রামবাসীর প্রবেশের অধিকার ছিল না। আমরা রায় পরিবারের লোকজনই সব করতাম। এখন পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের হাতে পুজোর ভার। ওরা সকল গ্রামবাসীকে পুজো দিতে দেয়। এটা আমার ভাল লাগে।’’
জগাইবাবুর দাবি, রায়বাড়ির পুজো প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো। পুজোর প্রচলন করেন রায় বংশের তৎকালীন জমিদার, গ্রামের একমাত্র ব্রাহ্মণ ঈশানচন্দ্র রায়। শোনা যায়, ঈশানচন্দ্র স্বপ্নাদেশ পেয়ে বাড়িতে দুর্গা পুজো শুরু করেন চুন-সুড়কির গাঁথনির মন্দির গড়ে। তবে, প্রথম থেকেই এখনও রায়বাড়ির পুজো হয় বৈষ্ণব মতে, শাক্ত মতে নয়। আগে বরাবরই একচালার প্রতিমা হত। বিসর্জনের অসুবিধার কারণে ইদানীং গণেশ-লক্ষ্মী এবং কার্তিক সরস্বতীকে আলাদা চালায় করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: অনটনে পুজো বন্ধ, ৩০ বছর কাঠামো আগলে সরকারবাড়ি
শুরুর বছর থেকেই রায়বাড়ির পুজোয় বাইরে থেকে কোনও চাঁদা তোলা হয় না। দুর্গা মন্দিরের নামে যে জমি রায়েছে, সেখানে হওয়া ফসল বিক্রির টাকা ও রায় পরিবারের দেওয়া টাকাতেই পুজোর আয়োজন হয়। পরিবারের নিয়ম- দশমীতে বিসর্জনের পরে পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ফিরে, হাতে তুলসীপাতা নিয়ে রামসীতা আঁকা একটি প্রাচীন মুদ্রা প্রণাম করে, তবেই খাওয়াদাওয়া করেন। সকাল থেকে উপোসেই কাটে গোটা পরিবারের।
বাড়ির এক সদস্য তথা সিঙ্গার হাইস্কুলের শিক্ষক রজত রায় বলেন, ‘‘বাবার মতোই আমরাও ছোট দেখে আসছি বাড়ির পুজোয় গ্রামবাসীদের আসার, পুজো দেওয়ার সুযোগ ছিল না। পরে যখন বাবা-কাকাদের হাত থেকে পুজো আমাদের হাতে এল, তখন থেকে আমরা সবার জন্য পুজোয় অবারিত দ্বার করে দিয়েছি। গ্রামের একটাই পুজো, অথচ গ্রামের মানুষই তাতে আসার সুযোগ পাবে না, সেটা হয় না। তবে এখনও আমাদের পুজোয় চাঁদা তোলা হয় না।’’