পুজোর দিনগুলোয় লাটাগুড়ি ফাঁকা থাকবে, গরুমারার জঙ্গল খাঁ-খাঁ করবে। প্রতীকী চিত্র।
নয়ের দশকের আগে ডুয়ার্সের লাটাগুড়ির নাম খুব বেশি লোক জানতেন না। ওই দশকের মাঝামাঝি পর্যটকদের চোখ পড়ল এখানে। আমরা তখন যুবক। তার আগে ছোট থেকেই এখানকার ঘন সবুজ জঙ্গল, নদী আর ঝোরা আমাদের মুখস্থ। পুজোর আগে কাশের বন দিয়ে নেওরা নদী পেরিয়ে গিয়ে পদ্ম সংগ্রহ করেছি বহুবার। সেই বিদ্যেই আমার জীবনে পরে কাজে লেগেছে। যুবক বয়স থেকেই আমি টুরিস্ট গাইড। এটাই আমার পেশা।
আজ কী খাঁ খাঁ করছে এই মায়াময় নীল-সবুজের রাজ্য! ভাবতেই মনটা হু হু করে ওঠে। প্রায় সাতমাস ধরে পর্যটকদের আনাগোনা নেই লাটা গুড়ির বিস্তীর্ণ জঙ্গলে। আমাদেরও কোনও কাজনেই। নেই শহুরে মানুষদের পথ চিনিয়ে অরণ্যের রং, বন্য পাখি আর প্রাণী দের ডাক চেনানো। তবুভাল, ধীরে ধীরে জঙ্গলের দরজা খুলছে। করোনা সঙ্কট কবে পুরোপুরি কাটবে জানিনা। কিন্তু ঘরবন্দি মানুষ এবার একটু প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে চাইছে।
আরও পড়ুন: পড়ার ফাঁকে পাড়ার ঠাকুর গড়ছে হেতমপুরের শুভম
মূলত পুজোর আগে পরেই ডুয়ার্সে বেশি আসতে চান পর্যটকেরা। তাই আমাদের মতো গাইডের পুজোর সময়টা কাটে পর্যটক দের নিয়েই। পুজো মানেই জমজমাট লাটাগুড়ি। উৎসাহী পর্যটকদের সঙ্গী করেই প্রতিবার আমার পুজোর আনন্দ মেটে প্রকৃতির এই সবুজ মণ্ডপে। লাটাগুড়ি, গরুমারা জাতীয় উদ্যানের আনাচকানাচে পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখানোর আনন্দে নিজেকে সঁপে দিই। পরিবার ও বন্ধুমহল ভুলে তাই এক একটি পর্যটক পরিবারকেই আপন করে নিই এই সময়টায়। যখন কোনও পর্যটক পরিবারের কোনও কিশোর কিশোরী বা বাচ্চা জঙ্গলে হরিণ বা হাতি দেখে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে, আমার মন ভরে যায়। ভাবি, সার্থক আমার পেশা। এই তৃপ্তি ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। এটাই তো আমার পুজো!
আরও পড়ুন: গজে গমনে শান্তির বার্তা, মানুষের পাশে বালিগঞ্জ কালচারাল
তাই আজ পুজোর দিনগুলোয় লাটাগুড়ি ফাঁকা থাকবে, গরুমারার জঙ্গল খাঁ-খাঁ করবে— এমন দৃশ্যে মন ভারাক্রান্ত হবেই। তবে সব ঠিক হয়ে যাবে, সব আগের মতোই স্বাভাবিক হবে- এটাই এখন চাওয়া। আমাদের মতো অনেকের পেট এই পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভর করেই চলে। তাই আমাদের জন্যে সরকারি কিছু ছাড় ও সুবিধা আশা করেছিলাম। আমার পুজো তাহলেই সার্থক ও সুন্দর হতে পারে।