Durga puja 2020

গজে গমনে শান্তির বার্তা, মানুষের পাশে বালিগঞ্জ কালচারাল

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বার বার স্যানিটাইজেশন, মাস্ক পরায় গুরুত্ব থাকবে বলে জানালেন সপ্তর্ষি।

Advertisement

রোশনি কুহু চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২০ ০৬:২০
Share:

পুজো মণ্ডপে সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী সমস্ত বিধি মেনে চলা হবে।

Advertisement

করোনাসুরের দাপটে সারা পৃথিবী অতিষ্ঠ। তারই মাঝে পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে। শারদ উৎসবের আবহে শান্তি খুঁজছে বাংলার মানুষ। খুঁজছে পরিত্রাণের পথ।

জাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলার মানুষ, তথা সারা বিশ্বের বাঙালিরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন দুর্গা পুজোর জন্য। শুধু মাত্র তো পুজো নয়। এ তো মহোৎসব! সমস্ত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আর কয়েকদিন পরই দেবীর আগমন। ঢাকের বোলে মেতে উঠেছে প্রকৃতিও। ঝরে পড়ছে শিউলি। কিন্তু এ বছরটা অন্য বছরের থেকে খানিক আলাদা। পরিস্থিতিও ভিন্ন। বাংলার প্রতিটি নামকরা পুজোতেও তাই বাজেটের কাটছাঁট। দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম পুজো বালিগঞ্জ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনও হাঁটছে সেই পথে। এ বছরের পুজোয় তারা বেছে নিয়েছেন শান্তির থিম।

Advertisement

প্রতি বছর এই পুজোতে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীর ভিড় হয়।কিন্তু এ বছর তা সম্ভব হবে না। ‘‘এই পুজো দায়বদ্ধতার, মানবিকতারও,’’ এমনই বললেন পুজো উদ্যোক্তা (অর্গানাইজিং সেক্রেটারি) সপ্তর্ষি বসু। নিজে একজন ডাক্তার। তাই পুজোর আড়ম্বরের চেয়েও মানুষের পাশে থাকার প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানালেন আনন্দবাজার ডিজিটালকে।

আরও পড়ুন: লকডাউনের একঘেয়েমি কাটাতে প্রতিমা গড়ল অর্ঘ্যদীপ, পুজোয় সামিল হবেন পড়শিরা

খরচ কমানোর দিকেও নজর দিয়েছেন পুজো কমিটির কর্তারা।

গত বছরের থিম ছিল যুগলবন্দি। এ বছর কী?

৭০তম বছরে পদার্পণ করল বালিগঞ্জ কালচারাল। শান্তির বাণী প্রকাশেব্যবহার করা হবে সাদা রং। পঞ্জিকা অনুযায়ী এ বছর দেবী দুর্গা সপরিবারে কৈলাসে ফিরে যাবেন গজের পিঠে চেপে। অর্থাৎ গজে গমন। পুরাণ বলছে,এর ফলে সারা বিশ্বে শুভ কোনও বার্তা নেমে আসবে।গজে গমন মানে পৃথিবী হবে সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা। মানুষের মনে অশান্তি দূর হয়ে পৃথিবী আবার আগের মতো সুন্দর হয়ে উঠবে। এই ভাবনাই মণ্ডপে ফুটিয়ে তুলছে বালিগঞ্জ কালচারাল।

সাবেক প্রতিমা গড়ার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন শিল্পী অরুণ পাল ও তাঁর সহকারীরা। বিমান সাহা গড়ে তুলছেন মণ্ডপ। পুজোর অনুদানের ক্ষেত্রেও এ বছরের ভাবনা খানিকটা আলাদা এই পুজো কমিটির। বাড়ি বাড়ি গিয়ে গল্প কিংবা চাঁদা তোলা এ বছর হচ্ছে না। বরং পুজো কমিটির অফিসে সরাসরি অনুদান সংগ্রহ করা হচ্ছে এ বার। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও জমা পড়ছে অনুদান।তবে সবটাই চলতি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পুজোর আগে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছে বালিগঞ্জ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন। কারণ কোভিড পরিস্থিতিতে রক্তের ঘাটতি রয়েছে। পুজো কমিটির সদস্যরা নিজেরাই রক্তদান করেছেন।গত ৩০ বছর ধরে যে ঢাকিরা ঢাক বাজাচ্ছেনএই পুজোয়,অর্থনৈতিক মন্দার কারণেসেই ঢাকিদের গ্রাম বাপুলি চকের প্রতিটি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম এই পুজো। “মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, সেখানেই মানবিকতা, সেখানেই আসল পুজো,” বলছেন সপ্তর্ষি।

দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম পুজো বালিগঞ্জ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন।

খরচ কমানোর দিকেও নজর দিয়েছেন পুজো কমিটির কর্তারা। আয় বুঝে ব্যয় করতে গিয়ে কতটা কম খরচের উপকরণ দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করা যায়, সেটাই নিশ্চিত করছেন মণ্ডপশিল্পী। সে ভাবেই যতটা সম্ভব অভিনব মণ্ডপ নির্মাণই লক্ষ্য এই পুজোর।

আরও পড়ুন: প্রকৃতির কোলে পশু পাখি চেনাই মানুষকে, সেই তো আমার পুজোর আনন্দ

পুজো মণ্ডপে সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী সমস্ত বিধি মেনে চলা হবে বলে জানালেন সপ্তর্ষি। নিজে কোভিড যোদ্ধা চিকিৎসক। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বার বার স্যানিটাইজেশন, মাস্ক পরায় গুরুত্ব থাকবে বলে জানালেন তিনি।

এই পুজোর সঙ্গে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে যুক্ত রেডিয়ো জকি শ্রীতমা বসু, আর জে শ্রী নামেই যিনি জনপ্রিয়। এই পুজোর কালচারাল সেক্রেটারি তিনি। পুজো যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, সেটাই প্রার্থনা করছেন। “সবাই সুস্থ থাকুন, সাবধানে থাকুন। মা দুর্গার আগমনে সব অশান্তি দূর হয়ে পৃথিবী আবার আগের মতো হয়ে উঠুক,”- সেই আশাতেই বুক বাঁধছে ৫৭ যতীন দাস রোডের এই বিখ্যাত ক্লাব।

ছবি সৌজন্যে:সপ্তর্ষি বসু, সৌরভ, দীপাঞ্জন চক্রবর্তী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement