ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো দেখে জমি দান করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র

বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ এবং কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নথিপত্র থেকে ১৬০৬ সাল ও ১০১৩ বঙ্গাব্দের কথা জানা যায়। সেই হিসেব অনুযায়ী, ৪১৪ বছরের এই পুজো।

Advertisement

সাগর হালদার

তেহট্ট শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০ ২১:০১
Share:

শুধু একটি পরিবারের নয়, বরং সমগ্র তেহট্টবাসীর গর্বের পুজো এই ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গাপুজো। এক বার হলেও এলাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এই পরিবারের দুর্গামা দর্শনে আসেন। তবে করোনার কারণে এ বার বিধিনিষেধ রয়েছে। মন্দিরের ভিতরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কেউ প্রতিমা দর্শন করতে চাইলে দূর থেকে করতে হবে। সেখানেও রয়েছে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা।

Advertisement

পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের কথায়, এই পরিবারের পুজো কবে এবং কে চালু করেন, তার নথি সে ভাবে নেই। তবে বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ এবং কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নথিপত্র থেকে ১৬০৬ সাল ও ১০১৩ বঙ্গাব্দের কথা জানা যায়। সেই হিসেব অনুযায়ী, ৪১৪ বছরের এই পুজো। তবে এর অনেক আগে এই পুজো শুরু হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যদের দাবি।

ভট্টাচার্য পরিবারের শেষ বংশধর জগবন্ধু ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর এই পরিবারের পুজো মুখোপাধ্যায় পরিবারের হাতে চলে যায়। মুখোপাধ্যায় বংশের ষষ্ঠ বংশধর রজত মুখোপাধ্যায় জানান, জগবন্ধু ভট্টাচার্যের কোনও পুত্র সন্তান ছিল না। ছিল এক মেয়ে কালীদাসী মুখোপাধ্যায়। যার বিয়ে হয় স্থানীয় জমিদার রাখালদাস মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। জগবন্ধুর মৃত্যুর পর যে কারণে এই পুজো মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরাই পরিচালনা করছেন। তবে পুজোটি ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো হিসেবেই পরিচিত।

Advertisement

আরও পড়ুন: ডালিম গাছতলায় পুজোয় অঞ্জলি দিয়ে যান রানি ভবানী

পরিবারের সদস্যরা জানান, দশ ফুটের একচালার প্রতিমার গাত্রবর্ণ অতসী ফুলের মতো। মহিষাসুরের রং সবুজ, তবে দুর্গা প্রতিমার বাহন এখানে শ্বেত ঘোড়ামুখো নরসিংহ। নিয়ম-নীতি মেনে পরিবারের পুরুষেরা পুজো করে থাকেন। তবে এই পরিবারের পুজো হয় কোটাতন্ত্র মতে, যেখানে সময়ের বাইরে এই পুজো সম্ভব নয়, এমনকি পরিবারের কেউ মারা গেলেও এই পুজো দিতে হয়। আরও জানা যায়, জগবন্ধু ভট্টাচার্যের সময় থেকে মহিষ বলি প্রথা চালু হয়। সে সময়ে পুজো দেখতে এসেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। পুজো দেখে খুশি হয় তিনি সাড়ে সাতশো বিঘা জমি দান করেন ভট্টাচার্য পরিবারকে।

তবে এই পুজো মুখোপাধ্যায় পরিবারের হাতে আসার পরে পশুবলি বন্ধ হয়। বরং তার বদলে মহাষ্টমীর দিন বাড়ি তৈরির পাঁঠা আকৃতির দুধের চাচি বলি দেওয়ার প্রথা চালু হয়। এই পরিবারে পুজোতে ষষ্ঠীর দিন যে কোনও সময়ে প্রদীপ জেলে নতুন বস্ত্র পরিধান করে প্রতিমার চক্ষুদান করার রীতি রয়েছে।

আরও পড়ুন: গোটা গ্রামই এখন মাতে রায়েদের পুজোয়

তেহট্টে দশমীর দিন জলঙ্গি নদী নৌকায় দুর্গাপ্রতিমা তোলা হয়। তবে এই ভট্টাচার্য পরিবারের প্রতিমা নৌকায় না ওঠা পর্যন্ত কোনও ঠাকুর নৌকায় ওঠে না। পরিবারের প্রবীণ সদস্যেরাজানিয়েছেন, এ বছর করোনার দাপটের মধ্যেও দশমীতে প্রতিমাকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেওয়া হবে। এই নীতির পরিবর্তন করানো যাবে না। প্রশাসনকে বলেই এ কাজ করা হবে।

প্রতীকী ছবি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement