ঐতিহ্যের পুজোয় ছেদ সুরের মূর্ছনায়

পুজোর সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি পুরোহিত এবং কর্মচারীদের দেওয়া হচ্ছে সুরক্ষাবিধি মানার পাঠ।

Advertisement

গোপাল পাত্র

পটাশপুর শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৩২
Share:

পঁচেটগড় জমিদার বাড়ির দুর্গাদালান। নিজস্ব চিত্র।

Advertisement

দর্শনার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে না পুজোর ভোগপ্রসাদ। বসছে না জমিদার বাড়ির এত দিনের প্রথামতো সুরের আসর। পুজোবাড়ির অন্দরে প্রবেশে স্বাস্থ্য সতর্কতার পাশাপাশি থাকছে নিয়ন্ত্রণ বিধির কড়াকড়ি। বস্তুত করোনাসুর-এর দাপটে জেলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী পঁচেটের জমিদার বাড়ির পুজোর ছন্দটাই যেন ওলোটপালট হয়ে গিয়েছে।

ষোড়শ শতাব্দীতে শুরু হওয়া এই পুজোর ঐতিহ্য এত কাল সযত্নে আগলে রেখেছেন জমিদার বাড়ির সদস্যরা। জমিদারি না থাকলেও এ পর্যন্ত সেই চেষ্টাকে ক্ষুণ্ণ হতে দেননি তাঁরা। কিন্তু এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে তাঁরাও কিছুটা দিশাহারা। সময়ের বহমানতায় টান পড়েছে আর্থিক সঙ্গতিতে। ফলে আড়ম্বর, জৌলুস এখন প্রায় নেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে থিম সং ‘বদ্রীনাথ’

কথিত আছে, পঁচেটগড়ের বংশধরেরা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত। কুলদেবতা কিশোররাই জিউ। জমিদার বাড়ি সূত্রে জানা গেল, পরিবারে মূর্তি পুজো নিষিদ্ধ। প্রথা ভেঙে এক বার দুর্গাদালানে মূর্তি গড়ে দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়েছিল। কিন্তু পুজো চলাকালীন নানা বিঘ্ন ঘটেছিল জমিদার বাড়িতে। সেই থেকেই ঘটের উপর শোলার মূর্তি গড়ে পুজোর আয়োজন হয়ে আসছে।

মহাষ্টমীর খিচুড়ি ভোগ বিতরণ করা হবে না এ বার। নিজস্ব চিত্র।

মহালয়া থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত শোলার প্রতিমা গড়ার কাজ চলে জমিদার বাড়িতে। ষষ্ঠী থেকে পুজো শুরু হয়। পুজোয় অন্নভোগের চল নেই। লুচি, সুজি, আলুভাজা, পটলভাজার পকান্ন দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হেরিটেজ বিভাগ পঁচেটগড় জমিদার বাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণা করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এই দুর্গোৎসব নিয়ে উৎসাহ রয়েছে।

আরও পড়ুন: স্লগ ওভারে ব্যাটে রান, খুশি কুমোরটুলি

করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশিকা মেনে দুর্গাদালানে এ বছরের পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। পুজোর সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি পুরোহিত এবং কর্মচারীদের দেওয়া হচ্ছে সুরক্ষাবিধি মানার পাঠ। দর্শনার্থীদের ক্ষেত্রেও থাকছে বিধি-নিষেধ। একসঙ্গে ভিড় করে ঠাকুর দালানে ঢোকা যাবে না। ছোট দলে ভাগ হয়ে মাস্ক পরে জমিদার বাড়িতে ঢুকতে হবে। শুধু বাইরে থেকে জমিদার বাড়ির সংগ্রহশালা দেখতে পাবেন পর্যটকেরা। মহাষ্টমীর খিচুড়ি ভোগ বিতরণ করা হবে না এ বার। বসবে না জলসা ঘরে গানের আসর। অষ্টমীতে পুষ্পাঞ্জলির উপরেও রয়েছে একাধিক বিধি-নিষেধ। জমিদার বাড়ির বিদেশে থাকা প্রবীণ সদস্যরাও এ বার পুজোয় যোগ দিচ্ছেন না বলে পরিবার সূত্রে খবর।

করোনার আবহে পুজোর এমন ছন্দপতনে ম্রিয়মাণ পরিবারের সদস্যরা। এক সদস্য সুব্রতনন্দন দাস মহাপাত্র বলেন, ‘‘পুজোর আয়োজন সীমিত ভাবে করা হচ্ছে। সংক্রমণ এড়াতে অষ্টমীতে ভোগ বিতরণ বন্ধ থাকবে। দর্শনার্থীদের অবাধ ঘোরাফেরাতেও নিষেধ থাকছে। তাঁরা ছোট দলে ভাগ হয়ে ঠাকুর দেখতে পারবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement