মগ্ন: অসুরের চোখ আঁকছেন শিল্পী। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
কাঠ, পাথর, লোহার তৈরি মূর্তিতে প্রাণের ছোঁয়া দিয়ে খ্যাতির শীর্ষে উঠেছিলের ভাস্কর চিন্তামণি কর। নতুন সৃষ্টির কাজের দায়িত্ব যেন বংশানুক্রমে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন প্রয়াত ভাস্করের বংশধর মধুমন্তী ঘোষ। তুলির টানে দুর্গা, কালী, সরস্বতীর মূর্তিতে প্রতি বছর চোখ আঁকেন মধুমন্তী। হাওড়ার ব্যাতাইতলার পটুয়া পাড়ায় লাল্টু অধিকারীর কাছে গত বছর কালী এবং সরস্বতীর কয়েকশো মূর্তিতে চক্ষুদান করেছেন ওই মহিলা মৃৎশিল্পী। আঁকার নেশাতেই দুর্গাপুজোর আগে তিনি প্রতি বছর ছুটে আসেন পটুয়াপাড়ায়।
ছোটবেলা থেকেই আঁকায় পারদর্শী হাওড়ার মন্দিরতলার বাসিন্দা মধুমন্তী। মাটির মূর্তি তৈরি করে রং করা নেশার মতো ছিল তাঁর কাছে। সঙ্গে অনুপ্রেরণা হিসাবে ছিল বাবার কাছে শোনা ভাস্কর চিন্তামণি করের নানা গল্প। হাওড়ার ব্যাতাইতলায় উড়ালপুলের নীচে সিংহের মুখে রং করতে করতে মধুমন্তী বলেন, ‘‘আমার ঠাকুরদার নিজের মামা ছিলেন ভাস্কর চিন্তামণি কর। ছোটবেলা থেকেই তাঁর কাজের প্রচুর গল্প শুনে আমি বড় হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতাম। এক দিন হঠাৎ করেই পুজোর সময়ে ব্যাতাইতলার লাল্টুদা-র কাছে চলে এসেছিলাম মূর্তির চোখ আঁকব বলে। সেই শুরু।’’
তবে শুরুটা যে খুব সহজ ছিল তা নয়। এ জন্য অনেক পরীক্ষা দিতে হয়েছে। স্থানীয় দীনবন্ধু কলেজের বাণিজ্যের স্নাতক পর্যায়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মধুমন্তী বলেন, ‘‘আমি মৃৎশিল্পী হয়ে আঁকতে চাই শুনে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এর পরে লাল্টুদা আমাকে একটা কালীর মুখ দিয়ে বলেছিলেন চোখ এঁকে দেখাতে। আমি এঁকেছিলাম। লাল্টুদা খুশি হয়েছিলেন। এখন উনিই আমার গুরু।’’
লাল্টুবাবু বলেন, ‘‘হাওড়ায় তো কোনও মহিলা মৃৎশিল্পী নেই। তাই মধুর গুরুত্ব আমাদের কাছে যথেষ্ট। ও এখন আমাদেরই এক জন।’’
ব্যাতাইতলার ওই মৃৎশিল্পী জানান, গত পাঁচ বছর ধরে দুর্গাপুজোর আগেই মধুমন্তী তাঁর কাছে চলে আসেন। বেলা ১০টা থেকে সারাদিন কাজ করেন। প্রতিমায় কাপড় পরানো থেকে চক্ষুদান, সবই করেন। পারিশ্রমিক হিসেবে তিনি যা দেন তাই নেন। লাল্টুবাবু এ বার ৫২টি প্রতিমার বায়না পেয়েছেন। সপরিবারে প্রতিমা তৈরি করতে নিত্যদিন ৫০-৬০ জন কর্মী নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। কারণ মহালয়ার পর থেকেই অধিকাংশ প্রতিমা মণ্ডপে যেতে শুরু করবে। তাই অধিকাংশ মূর্তির চক্ষুদান পর্বের কাজ লাল্টুবাবু অনেকটাই এগিয়ে রেখেছেন মধুমন্তীকে দিয়ে। তাতে খুশী মধুমন্তীও। তিনি বলেন, ‘‘মায়ের চোখ আঁকার মধ্যেই পুজোর আনন্দ খুঁজে পাই। মা-কে জীবন্ত রূপ দিতে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করি।’’