দেবী গুহ্য কালী
সমগ্র বীরভূমের আনাচে কানাচে কত যে ঐতিহ্যপূর্ণ কালীমন্দির আছে, তা হয়তো এক বছর কালীপুজোর সময়েও ঘুরে শেষ করতে পারবেন না। এই মন্দিরগুলি শুধুমাত্র ধর্মস্থান নয়, বরং বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও অলৌকিক ঘটনার সাক্ষীও বটে। যেমনটা শোনা যায় বীরভূমের সতীপীঠ নলাটেশ্বরী মন্দিরের কাছেই আকালিপুরের গুহ্যকালীর সম্পর্কে।
৫১ পীঠের এক পীঠ নলাটেশ্বরী মন্দির। বীরভূমের নলহাটিতে ঠিক এই অঞ্চলেই আরও এক প্রসিদ্ধ কালীমন্দির আছে, যা অনেকেই হয়তো জানেন না। সেই মন্দিরেই মা কালী পরিচিত গুহ্যকালী নামে। বিভিন্ন অলৌকিক কাহিনির ধারক এই মন্দির। মনে করা হয়, মহারাজা নন্দকুমার এক কালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে সবার থেকে যেই বিষয়টি অন্য রকম, তা হল এখানকার কালীমূর্তি। সাধারণত আমরা যে ধরনের কালীপ্রতিমা দেখে অভ্যস্ত, তার থেকে ঠিক অনেকটাই আলাদা। এখানে পঞ্চমুণ্ডির আসনের উপরে সর্পবেদীতে প্রতিষ্ঠিত গুহ্য কালী।
এই কালীপ্রতিমার প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে আছে অনেক বড় ইতিহাস। কথিত, মগধরাজ জরাসন্ধ এই মূর্তিটি নির্মাণ করেছিলেন। কালক্রমে বিভিন্ন রাজার হাতে পূজিত হওয়ার পরে কাশীরাজ চৈত সিংহের রাজত্বে এক কৃষক জমিতে এই দেবী মূর্তিটি খুঁজে পান। এই সময়ে ওয়ারেন হেস্টিংসের নজরে পড়ে মায়ের এই অপরূপ মূর্তি। শোনা যায়, তিনি নাকি মায়ের এই মূর্তিটিকে ইংল্যান্ডের মিউজিয়ামে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। তাঁর এই গোপন পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে চৈত সিং মায়ের মূর্তিটিকে গঙ্গাবক্ষে লুকিয়ে রাখেন। আর রটিয়ে দেন, মূর্তি চুরি গিয়েছে।
এর পরে মহারাজা নন্দকুমার মাকে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নাদেশ পেয়ে কাশী যাত্রা করেন। তিনি চৈত সিংকে এই স্বপ্নাদেশের কথা বলে নৌকা করে মূর্তি নিয়ে এসে নন্দকুমারকে দেন। নন্দকুমার সেই মূর্তি নিয়ে দ্বারকা ব্রাহ্মণী নদী পার করে চলে আসেন আকালিপুরে। এখানে ব্রাহ্মণী নদীতীরে শ্মশানের পাশে এক নিরিবিলি স্থানে আটকোনা ইটের মন্দির স্থাপন করে মায়ের পুজো শুরু করেন। তন্ত্রসম্মত ভাবে সাধনার উপযোগী এই মন্দিরেই মা গুহ্যকালী নামে পরিচিতি পান, যার নিদর্শন আজও রয়েছে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ