১৯৮১ সালে এলাকার কয়েকটি পরিবার মিলে ‘অশ্বিনীনগর পল্লীবাসী দুর্গাপূজা কমিটি’ নামে এই পুজোর সূচনা করেন, যা এখন অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল নাম নিয়েছে। ২০১১ সাল থেকে এই পুজোয় থিমের ছোঁয়া লাগে। ক্লাবের প্রায় ১৫০ জন সদস্য অত্যন্ত উৎসাহের সাথে পুজো পরিচালনা করেন।
ক্লাবের উদ্যোক্তা স্বরূপ নাগের কথায়— ‘‘প্রতি বছর আমাদের এই পুজোয় ১৮ থেকে ৭৮— সমস্ত বয়সের সদস্যরা উপস্থিত থাকেন। প্রায় ৫০জন মহিলা সদস্য নিয়মিতভাবে পূজার সমস্ত অনুষ্ঠান ও কার্যক্রমে অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয় নি। আমরা সব সময় আমাদের পূজার মাধ্যমে কিছু সামাজিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করি। এ বছরও আমরা একই পথে হাঁটছি। এ বছর আমাদের থিম ‘জুমরফিজম’। যে শব্দটির সঠিক বাংলা হয় না। আমরা এই থিমের মাধ্যমে দেখাতে চাইছি সৃষ্টির আদিতে মানুষ পশুকে পুজো করত। তখন পশুদের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা বজায় ছিল। ঋষিদের সৃষ্ট এই পশু চরিত্রগুলি সে যুগে ছিল শ্রদ্ধার কিন্তু বর্তমানে পশুরা নানাভাবে অবহেলিত। আমরা এই থিমের মাধ্যমে পশুদের হারানো সম্মান ও শ্রদ্ধা ফিরিয়ে দিতে চাইছি।"
অশ্বিনী নগর বন্ধু মহলের পুজোর থিমের নাম জুমরফিজম। যা একেবারের নতুন শব্দ। পুজোর থিম শিল্পী সম্রাট ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘জুমরফিজম শব্দটি "জুমরফিক" শব্দ থেকে এসেছে। যার সঠিক বাংলা হয় না। এই শব্দটি দু’টি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত ‘'জুমুর’ যার অর্থ ‘প্রাণী’ এবং ‘মরফিক’ মানে প্যাটার্ন। তাই জুমরফিক সহজ কথায় বললে প্রাণীর ধরন। আমাদের প্রাচীন শাস্ত্র ও বিভিন্ন গ্রন্থে জুমরফিক পেয়ে থাকি। যেমন, মৎস্য অবতার, কুর্ম অবতার, বরাহ অবতার এবং নৃসিংহ অবতার অথবা জটায়ু, জাম্বুবান কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে স্ফিংসের মতো অবয়ব। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই পৌরাণিক কাহিনীর পশু এবং পশুর অবয়বে গঠিত প্রাণী সম্পর্কে আগ্রহী করতে এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের পুরাণের সুপারহিরোদের সম্পর্কে আমাদের সচেতন করতেই এই প্রয়াস। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে যাতে জানতে পারে সেকারণেই এই উদ্যোগ।"
কী ভাবে যাবেন: উল্টোডাঙ্গা, নাগেরবাজার, এয়ারপোর্ট থেকে বাগুইআটি বাসস্টপ। কাছেই জোড়বাগান অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল ক্লাব।
থিম: জুমরফিজম
থিম শিল্পী: সম্রাট ভট্টাচার্য
প্রতিমা শিল্পী: সুবিমল দাস
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।