প্রতীকী চিত্র
শরৎ মানেই আকাশে-বাতাসে মায়ের আগমনী। বছরভরের অপেক্ষা ফুরোনোর সময়। দুর্গা পুজো তো শুধু পুজো নয়, আনন্দ, হাসি, আড্ডায় সদলবলে মেতে ওঠার উৎসব। কিন্তু জানেন কি, এই দুর্গা পুজোই পুরুলিয়ার এক আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে শোক পালনের মরসুম? ফলাওরা গ্রামের খেরওয়াল সাঁওতালরা মনে করেন দুর্গা আসলে উচ্চবর্ণের এক নারী, যিনি ছল করে তাঁদের রাজা হুদুর দুর্গা অর্থাৎ মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। এই সময়ে তাই নতুন জামা, নতুন জিনিস কেনার বদলে তাঁরা তাঁদের রাজার উদ্দেশ্যে উপহার কেনেন। এই শোক পালনের সময়টা তাঁদের কাছে ‘দশাই’ নামে পরিচিত।
কিন্তু কে এই হুদুর দুর্গা এবং কেনই বা মা দুর্গার বদলে তিনি পূজিত হন?
খেরওয়ালরা বিশ্বাস করেন, সাঁওতাল সম্প্রদায় গঠনের আগে তাঁরা খেরওয়ালদের বংশধর ছিলেন, যাঁদের শাসক চাইচম্পা নামে এক অঞ্চলের তত্ত্বাবধান করতেন। চাইচম্পা প্রথমে ছিল এক সমৃদ্ধ জনপদ। সেখানকার মানুষেরা আনন্দে সহাবস্থান করতেন। কিন্তু কিছু অনুপ্রবেশকারী, সম্ভবত আর্যরা, খেরওয়ালদের আক্রমণ করেন। তাঁদের রুখে দেন শক্তিশালী এবং সাহসী রাজা। তারপর থেকেই শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। খেরওয়াল পূর্বপুরুষরা কখনওই নারীদের আক্রমণ করেননি। আর্যরা তাঁদের এই দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে তাঁরা ইচ্ছাকৃত ভাবে খেরওয়াল রাজার সঙ্গে তাঁদের এক কন্যাকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন। রাজা মহিষাসুর যখন তাঁর নববিবাহিত স্ত্রী দ্বারা নিহত হন, তখন খেরওয়ালদের নিজের জায়গা-জমি ছেড়ে পালানো ছাড়া আর কোনও উপায় অবশিষ্ট ছিল না। শত্রুদের হাত থেকে বাঁচতে পুরুষেরা মহিলা সেজে পলায়ন করেন। সেই দিন থেকেই এই আদিবাসী সম্প্রদায় একে হুদুর দুর্গার শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে থাকেন।
শুধু পুরুলিয়া নয়, অসুর অথবা মহিষাসুর পুজোর ঐতিহ্য বাংলার আরও বেশ কিছু আদিবাসী গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে, যা হুদুর দুর্গা নামে পরিচিত। উপজাতি ও দলিত সম্প্রদায়, যেমন বাগদি, সাঁওতালি, মুন্ডা, নমঃশূদ্ররা মহিষাসুরের শহিদ দিবস পালন করেন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।