প্রতীকী চিত্র
সবাই জানে দেবী দুর্গার বাহন সিংহ। কিন্তু খেয়াল করে দেখেছেন কি, অনেক বনেদি বাড়িতে ঠাকুরের বাহন ঘোড়া? অবশ্য পুরোপুরি ঘোড়া নয়। বরং সিংহ আর ঘোড়ার মিশ্র রূপ বলাই ভাল। কিন্তু সিংহবাহিনী নাম হওয়া সত্ত্বেও হঠাৎ কিছু কিছু পুজোয় এমন হল কেন? পুরাণ মতে, গিরিরাজ দেবী দুর্গাকে সিংহ প্রদান করেন। সিংহ হল সাহস ও বিক্রমের প্রতীক। ঘোটকমুখী সিংহের বিষয়ে নানা রকমের মতবাদ প্রচলিত আছে। স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিটি গল্পেরই রয়েছে আলাদা আলাদা বিশেষত্ব।
জানা যায়, অষ্টাদশ শতকে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রাজ্যের মঙ্গলকামনায় মহালয়া থেকে শুরু করে একটানা নবমী পর্যন্ত যজ্ঞ করতেন। সেখানে দেবীকে যোদ্ধারূপে পুজো করা হত বলেই দেবীর বাহন ঘোড়া। সেই প্রথা আজ আর না থাকলেও বহু বনেদি বাড়িতে দেবীকে এই যোদ্ধা বেশেই পুজো করা হয়।
ঘোটকমুখী সিংহ বাহন হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকে বলে থাকেন, ঘোড়া ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতীক। সেই আমলে জমিদার বাড়িগুলিতে দুর্গাপুজোর জৌলুস বেশি থাকায় কোম্পানির প্রতীক ঘোড়াকে বাহনরূপে রাখা হয়।
আবার এ-ও শোনা যায় যে, ১৮২৬ সালে চুচুঁড়ায় একটি বারোয়ারি পুজোকে কেন্দ্র করে শাক্ত ও বৈষ্ণবদের মধ্যে গণ্ডগোল বাধে। পণ্ডিতেরা একই প্রতিমাকে দু’বার দুই মতে পুজো করার বিধান দেন। কিন্তু শেষমেশ তাতেও মীমাংসা না হলে শাক্ত ও বৈষ্ণবদের প্রতিমার ধরন আলাদা হয়ে যায়। শাক্ত মতে দুর্গার বাহন হয় শক্তির প্রতীক সিংহ এবং বৈষ্ণব মতে হয় সিংহরূপী ঘোড়া। তাই আজও কলকাতার মিত্র বাড়ি-সহ আরও যে সব বনেদি বাড়িতে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়, সেখানে দেবীর বাহন এই ঘোটকমুখী সিংহ।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।