প্রতীকী চিত্র
আতসবাজি আর আলোয় ঘেরা দীপাবলির মরসুম। কালীপুজোর আগে ধনতেরস, ভূত চতুর্দশী। আর তার পরের দু’দিনে পালিত হয় কালীপুজো বা শ্যামাপুজো আর দীপাবলি তথা ধনলক্ষ্মীর পুজো। দেশ জুড়ে ভাইফোঁটা পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনের এই উৎসবের মরসুমে মনের মতো করে বাড়ি সাজান প্রায় প্রত্যেকেই। আর তার একটা বড় উপকরণই হল আলো। টুনিবাল্ব বা হরেক রকম বিদ্যুতের আলো, মোমবাতি, নানা ডিজাইনের বাহারি প্রদীপ তো আছেই। তবে এখনও সাবেক মাটির প্রদীপে সেজে ওঠে বহু বাড়ি।
কিন্তু দীপাবলিতে মাটির প্রদীপের ভূমিকা কী? এই আলোর উৎসব পালনের মাহাত্ম্যই বা কোথায়?
হিন্দু মতে, আলো হল পবিত্রতা ও সৌভাগ্যের প্রতীক। অন্ধকার ও অশুভ শক্তিকে নাশ করতে একগুচ্ছ প্রদীপের সমাহারই হল এই আলোর উত্সবের গুরুত্ব। মোট পাঁচ দিন ধরে চলা এই উত্সবে ভূত চতুর্দশী, ধনতেরস, শ্যামাপুজো, ধনলক্ষ্মীপুজো– সব ক’টি দিনের নেপথ্যেই রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি। আর তাতেই বলা রয়েছে মাটির প্রদীপ জ্বালানো বা আতসবাজি পোড়ানোর প্রথা কী করে তৈরি হল।
হিন্দু শাস্ত্র মতে, মহালয়ায় পিতৃপুরুষরা মর্ত্যে আসেন উত্তরপুরুষের হাত থেকে অন্নজল নিতে। ফিরে যান দীপাবলির সময়ে। তাঁদের পথ দেখাতেই প্রদীপ জ্বালানো , ফানুস ওড়ানো বা আসতবাজি পোড়ানো হয়। আকাশ প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখারও নিয়ম রয়েছে।
আবার দীপাবলিতে আলো জ্বালানোর ব্যাখ্যা হিসেবে যে কাহিনি সবচেয়ে প্রচলিত, তা হল– ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্র রাবণ-বধ করে চোদ্দো বছরের বনবাস শেষে ফিরে আসেন, সে দিন অযোধ্যার প্রতিটি বাড়িতে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়েছিল। আনন্দে আত্মহারা হয়ে আতসবাজি পুড়িয়েছিলেন প্রজারা। সেই থেকেই সনাতন ধর্মমতে দীপাবলির রাতে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ও আতসবাজি পুড়িয়ে উত্সব পালন করার রীতি অব্যাহত।
পুরাণে বলে, কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশীতে ভয়ঙ্কর নরকাসুরকে বধ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই জয়ের আনন্দে দীপান্বিতা অমাবস্যায় শ্রীকৃষ্ণের ভক্তরা মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ও শব্দবাজি ফাটিয়ে উৎসব পালন করেছিলেন। এই কাহিনি অনুসারে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে দীপাবলিতে দীপদানের প্রথা রয়েছে।
দীপাবলির দিনে লক্ষ্মীপুজো হয় ঘরে ঘরে। পুরাণ অনুসারে, এদিন ক্ষীরসাগরে সমুদ্রমন্থনের সময়ে লক্ষ্মীর আবির্ভাব ঘটেছিল। কার্তিক অমাবস্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে অলক্ষ্মীকে বিদায় জানিয়ে লক্ষ্মীর আবাহন করতে দীপাবলি উত্সব পালন করা হয়। আবার অনেকে মনে করেন, এই দিনে লক্ষ্মীকে বলিরাজার বন্দিশালা থেকে উদ্ধার করেছিলেন বিষ্ণু। তাই মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে উত্সব পালন করা হয়ে থাকে।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।