বাজি মানেই বুড়ীমার চকোলেট বোমের কথা মনে আসে। তবে পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে এখন বোমা-সহ সকল শব্দবাজি নিষিদ্ধ।
তবে বোমা নেই তো কী হয়েছে! আলো ঝলমলে আতসবাজির দুনিয়াতেও কিন্তু বুড়ীমা স্বগর্বে বিরাজ করছে।
কিন্তু সব নাম ছেড়ে হঠাৎ করে বাজির নাম ‘বুড়ীমা’ হল কেন? কে এই বুড়ীমা?
বুড়ীমার আসল নাম অন্নপূর্ণা দাস, যিনি সংসার চালানোর জন্য শুরু করেছিলেন বাজির ব্যবসা।
সালটা ১৯৪৮। দেশভাগের ক্ষত তখনও দগদগে। এর মধ্যেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে মারা গেলেন অন্নপূর্ণা দাসের স্বামী। দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালানো মহিলার পক্ষে হয়ে উঠল কষ্টসাধ্য।
সীমান্ত পেরিয়ে ওপার বাংলা থেকে ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি এপার বাংলায় চলে আসেন। টাকা রোজগারের জন্য তিনি শুরু করেন বিড়ির ব্যবসা। কিন্তু সেটা চলেনি।
এরপর শুরু করলেন সেলাইয়ের কাজ। সেটিও সফল হল না।
এরপর কালীপুজোর আগে বাজির দোকান দেন। যদিও তখন তিনি ভেবেছিলেন, এই তাঁর শেষ চেষ্টা।
তবে তিনি নিজে তৈরি করেছিলেন গোল গোল ছোট ছোট এক ধরনের বাজি, যাতে আগুন লাগলেই আওয়াজ করে ফেটে যায়। বাজির নাম দিলেন চকোলেট বোমা।
ব্যাস! সাফল্য কে আটকায়! দ্রুত বুড়ীমার চকোলেট বোমার নাম ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে।
হাল ফেরে সংসারের। আসতে আসতে বুড়ীমা ‘ব্র্যান্ড’ হয়ে ওঠে। এই উপার্জন থেকেই হাওড়ার বেলুড়ের পিয়ারিমোহন মুখার্জি স্ট্রিটে তৈরি করেন বাড়ি।
তবে ১৯৯৬ সালে দেশে শব্দবাজি নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে বুড়ীমা ফায়ারওয়ার্কস্ আর চকোলেট বোমা তৈরি করে না। তার বদলে তৈরি হয় নানারকম আতশবাজি।
১৯৯৫ সালে প্রয়াত হন বুড়ীমা অন্নপূর্ণা দাস। তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম এই ব্যবসাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান।
আজও বুড়ীমার বাজির খ্যাতি এতটুকুও ম্লান হয়নি। এখনও বহুদূর থেকে মানুষ বেলুড়ে আসেন বুড়ীমার আতসবাজি কিনতে।