অলক্ষ্মী একজন দুর্ভাগ্যের দেবী। তিনি লক্ষ্মীর জ্যেষ্ঠা ভগিনী এবং অলক্ষ্মীকে জ্যেষ্ঠা বা নিরতীও বলা হয়।
অলক্ষ্মী কলহপ্রিয়া। বলা হয়, যখন অলক্ষ্মী গৃহে প্রবেশ করেন, তখন তিনি সেই গৃহে ঈর্ষা ও অমঙ্গল নিয়ে আসেন। তিনি ভ্রাতৃদ্বন্দ্ব এনে কুলবিনাশ করেন।
তিনি তার কনিষ্ঠা ভগিনী লক্ষীকে বিষ্ণুর মতো স্বামীর সঙ্গে বৈকুণ্ঠে বাস করতে দেখে মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন। কারণ তার স্বামী বা বাসস্থান কিছুই ছিল না
লক্ষ্মী তখন তাকে বর দেন, “কলি হবে অলক্ষ্মীর স্বামী এবং অপরিচ্ছন্ন, কুৎসিত, আলস্য, অত্যাচার, ঈর্ষা, ক্রোধ, ভণ্ড, লোভ ও কামের মধ্যে তিনি বাস করবেন”
তিনি দৈত্য কলির দ্বিতীয়া স্ত্রী।
যখন সমুদ্র মন্থন হয়, তখন গরলের পাত্র নিয়ে এসেছিলেন দেবী অলক্ষ্মী।
দেবী অলক্ষ্মীকে পাপলক্ষ্মী এবং দেবী লক্ষ্মীর বড় দিদি বলা হয়।
তিনি কৃষ্ণবর্ণা এবং হাতে ঝাঁটা নিয়ে থাকেন। তিনি রক্তমালা, রক্তকমল, লোহার অলঙ্কার পরে থাকেন। এবং তাঁর বাহন হল গাধা।
দেবী অলক্ষ্মীকে শুধু দেবতারাই না এমনকি অসুররাও ভয় পান। কেউ তাঁকে বিয়ে করতে না চাইলে, বিষ্ণু দেবের অনুরোধে উদ্দালক মুনি তাঁকে বিয়ে করেন।
কিন্তু অলক্ষ্মী ভালভাবে সংসার করতে চাইলে মুনি তাঁকে পরিত্যাগ করেন। তার জন্যই অলক্ষ্মীর কোনও বাড়িতে ঠাঁই হয় না।
এমন কি অলক্ষ্মীর মূর্তিকেও ঘরের ভিতরে আনা হয় না, ঘরের বাইরেই এক কোণে রাখা হয়। যেখানে হিংসা, ঝগড়া, অহংকার, দর্প ইত্যাদি থাকে সেখানেই অলক্ষ্মী বাস করে বলে বলা হয়ে থাকে।
অলক্ষ্মীকে ঘিরে পৌরাণিক আখ্যান কিংবা অন্য ধর্মে তাঁর উল্লেখের পাশাপাশি লোককথাও রয়েছে। যেমন, অলক্ষ্মী বিদায়ের আখ্যান।
এক রাজার কাছে মূর্তি বিক্রি করতে আসেন এক কারিগর।
রাজা কথাও দেন, তাঁর কাছে যে মূর্তিই থাকুক সেটাই তিনি কিনবেন। কিন্তু তাতেই ঘটে গেল গণ্ডগোল।
কেন না ওই শিল্পীর কাছে ছিল একটিই মাত্র মূর্তি। সেটি অলক্ষ্মীর। আর তাতেই তাঁর রাজ্যে দেখা দিল দুর্যোগের ঘনঘটা।
তখন এই বিপদ থেকে মুক্তি পেতে লক্ষ্মীপুজো করেছিলেন সেই রাজা। শেষ পর্যন্ত সেই রাজ্যের হারানো শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে দিলেন দেবী লক্ষ্মী।