‘মাথায় ঝাঁকড়া চুল, কানে গোঁজা জবা ফুল...’ বঙ্কিমচন্দ্রের সেই কালাদিঘির ডাকাতদের গল্প অনেকেই পড়েছেন ছোটবেলায়। এক কালে এই বাংলার মাটিতে বাস্তবেও রাজত্ব ছিল দোর্দণ্ডপ্রতাপ সেই ডাকাতদের। এমনকী খাস কলকাতাতেও!
ডাকাতদের কালীপুজো নিয়ে কিংবদন্তী হয়ে আছে একাধিক কাহিনি। নরবলি, ছাগবলি দিয়ে সেই রক্ত করালবদনী কালীর খাঁড়ায় ছুঁইয়ে, তা দিয়ে কপালে রক্ততিলক কেটে রক্তবস্ত্র পরে হা রে রে রে চিৎকারে চার পাশ কাঁপিয়ে ডাকাতি করতে বেরোত ডাকাতদল।
কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লুঠ করা সামগ্রী সাধারণ বা গরিব মানুষদের মধ্যে বিলিয়ে দিত ডাকাতেরা।
কলকাতা বা শহরতলির শপিং মল, ফ্লাইওভার, ঝাঁ-চকচকে শহর-সহ গোটা বাংলা জুড়েই আজও নিভৃতে দাঁড়িয়ে আছে এমনই সব ডাকাতকালীর মন্দির। যার সঙ্গে জড়িয়ে ভয়ানক সব ডাকাতদের গল্প। কালীপুজোয় রইল এমনই কয়েক ডাকাতকালীর মাহাত্ম্যের কথা।
মনোহর ডাকাতের ছানা কালী- দক্ষিণ কলকাতার মনোহরপুকুর রোডের এই মা কালী ছিলেন কুখ্যাত ডাকাত সর্দার মনোহর বাগদির হাতে পূজিত। মনোহর সর্দার নামেই ছিল তার নামডাক। এক সময়ে দক্ষিণ কলকাতার এই অংশটি ছিল গভীর জঙ্গলে ঢাকা। মনোহর সরদার ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে একটি কষ্টিপাথরের মূর্তিকে কালী জ্ঞানে পূজো করত। শোনা যায়, প্রতিদিন ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে মনোহর নাকি মূর্তিটি দড়ি বেঁধে ডেরার পাশের একটি পাতকুয়োতে ফেলে দিত। তার মৃত্যুর পরে কামাখ্যাচরণ মুখোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি এখনকার মন্দিরটি তৈরি করে তাতে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন। মা কালীর মূর্তিটিও ছিল খুব ছোট। তাই এর নাম হয়ে যায় ছানা কালী।
একসময় রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে কালীপুজো করে ডাকাতরা ডাকাতি করতে যেত। ডাকাতির আগে এই পুজোর কারণ ছিল, দেবীর কাছে প্রার্থনা, যাতে তারা সফল হয়। তাদের কোনও ক্ষতি যেন না-হয়। পরবর্তী ক্ষেত্রে কালীপুজো করে ডাকাতির চল উঠে গিয়েছে।
মাজদিয়ার ডাকাতকালী- এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস, আছে একাধিক পৌরাণিক কাহিনি। এখানে দেবী রক্ষাকালীর পুজো হয় শাক্ত মতে। এখনও নাকি বলিপ্রথার প্রচলন আছে এখানে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটে এই বোল্লা কালী মন্দির অবশ্য কোনও ডাকাতের হাতে প্রতিষ্ঠিত নয়। ৪০০ বছর আগে এই এলাকার জমিদার ছিলেন বল্লভ চৌধুরী। তাঁর নামেই এই নামকরণ। জমিদার বল্লভ চৌধুরী মহাকালীর পুজো করতেন ডাকাতদের প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে। তার পর থেকেই বোল্লা কালী ডাকাতকালী হিসেবে পরিচিত।