পুজোয় অনেকেই জামাকাপড়ের পাশাপাশি নিজের বাড়িটাকেও মনের মতো করে সাজাতে চান। কিন্তু কেমন ভাবে সাজালে বাড়ি একদম ‘ঘর’ হয়ে উঠবে, তার এক অপূর্ব উদাহরণ তৈরি করেছেন সাহানা বাজপেয়ী। সকলের প্রিয় সঙ্গীতশিল্পী সাহানার আস্তানা। শান্তিনিকেতনের ‘করতোয়া’। যার পরতে পরতে রয়েছে আভিজাত্যের ছোঁয়া।
যেমন, সাহানার বাড়ির একতলার ড্রয়িং রুমটি। ছিমছাম অথচ নজর কাড়া। ইন্টেরিওর ডিজ়াইনার সবসময়েই দেওয়ালের রঙের সঙ্গে পর্দার রং মানানসই করার পরামর্শ দেন। সাহানাও সেই পথেই হেঁটেছেন। যেমন, সাদা দেওয়ালের সঙ্গে সাদা পর্দা। সঙ্গে যদি, দোসর হয় কাঠের আসবাব, তা হলে অন্দরসজ্জায় আরও বৈচিত্র আসতে পারে। ঘরের মাঝখানে মেঝেতে কার্পেট বা মাদুর জাতীয় কিছু রাখতে পারেন। একটু পুরনো লুক আনতে চাইলে চটের উপর কাজ করা কিছুও ব্যবহার করা যেতে পারে। যেখানে বসে কেটে যাবে অবসর সময়। দেওয়ালে থাকুক টেলিভিশন আর পছন্দের কিছু ছবি।
এরকম দু’টি কাঠের চেয়ার আপনার ড্রয়িং রুমের আভিজাত্য বৃদ্ধি করবে। সঙ্গে রাখতে পারেন কোনও মূর্তি।
এই ঘরেই শৈশব এবং যৌবনের অনেকগুলি দিন কাটিয়েছেন সাহানা। সময়ের সঙ্গে ঘরের সাজ বদলেছে। নীচতলার এই বেডরুমের জানলায় রয়েছে বন্ধু সোহিনী গুপ্তর বানানো ট্যাপাস্ট্রি৷ সাহানার বেডরুমের সাজও খুব ছিমছাম। বিছানায় হালকা রঙের চাদর এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ বালিশের কভার। বিছানার পাশে রাখতে পারেন এমনই একটি ল্যাম্পশেড।
আপনার খাওয়ার ঘর ও কিচেন এই দু’টি হোক আপনার মনের মতো। সাহানার রান্নাঘর অনেকটাই বড়। রয়েছে খাওয়ার টেবিলটি। পাশেই আলাদা বসার জায়গা। যদি বৈচিত্র চান, দামী ‘কাটলারি সেট’ দিয়ে রান্নাঘরের দেওয়াল সাজাতে পারেন।
সাহানার বাড়ির বৈঠকখানাতেও রয়েছে সেই পুরনো দিনের ছোঁয়া। হারিয়ে যাওয়া কাঠ এবং বেতের আসবাব এই ঘরটিকে আরও স্নিগ্ধ করে তুলেছে।
সাহানার মায়ের ঠাকুরঘর এখন পড়ার ঘরে পরিণত হয়েছে। মা চলে যাওয়ার পর ঠাকুরের যত্ন নেওয়ার কেউ নেই। সাহানাও বিদেশে থাকেন। তাই সেই ঘরটিকে সাহানা নিজের পুজোর ঘর অর্থাৎ পড়াশোনার জন্য বানিয়েছেন।
গাছপালা, সঙ্গীত, এই সবকিছুর মধ্যে যেন সন্তান বড় হয়ে উঠতে পারে; প্রকৃতির প্রতি যেন ভালবাসা, সহমর্মিতা এবং সখ্য জন্মায়— এ কথা মাথায় রেখেই সাহানার বাবা বিমল বাজপেয়ী এমনই ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় বানিয়েছিলেন। গাছ ও ফুলে ঘেরা বাড়ি সকলেরই দৃষ্টি কাড়ে। তাই বাড়ির সামনে খানিক জায়গা থাকলে সেখানে আপনিও তৈরি করে নিতে পার সাধের বাগান।
গাছ বা ফুল ভাল লাগলে, বাগানের পরিচর্যা হয়ে উঠতে পারে আপনার অবসরসময়ের সঙ্গী।
স্মৃতির পাতা উল্টে সাহানা আজ এই লাল বারান্দাকে বড্ড মিস করেন। মেয়েবেলায় বাবার সঙ্গে কত অবসর যাপন করেছেন আর গান গেয়েছেন এই লাল বারান্দায়। আজকাল লাল মেঝের বারান্দা বা ঘর প্রায় দেখাই যায় না। সঙ্গে বেতের মোড়া বা বেতের কোনও আসবাব। অবসর সময়ে বৃষ্টি উপভোগ করার জন্য, গান গাওয়া, গল্পের বই পড়া বা নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য এরকম ভাবে সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার ব্যালকনিটি।
বাড়িতে ঢোকার মুখে এই লাল বারান্দা যেন বাড়ির উষ্ণতা বাড়িয়ে তোলে। পুরনো যা কিছু তার দিকে আমাদের আরও একবার টেনে নিয়ে যায় বারবার। শান্তিনিকেতনের এই বাড়ি যেন সঙ্গীতশিল্পী সাহানা বাজপেয়ীকে আরও স্মৃতিমেদুর করে তোলে। শান্তিনিকেতনের রতনপল্লির এই বাড়িতে আপনিও থাকতে পারেন। সাহানা যখন বিদেশে থাকেন, তখন অতিথিদের জন্য খুলে দেন তাঁর বাড়ির তালা। সবুজের মধ্যে কয়েকদিনের ছুটি কাটানোর জন্য ‘করতোয়া’র মতো ঠিকানা দু’টি নেই। বুকিংয়ের জন্য আপনি মেল করতে পারেন এই আইডি-তে karatoyasantiniketan@gmail.com। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।