এক কালে চোদ্দ পিদিম, আকাশ প্রদীপ, তুবড়ি বানানো, ফানুস ওড়ানোতে পালিত হত দীপাবলি-কালীপুজো।
কালে কালে বদলাতে বদলাতে আজ বাজি বাজার, সবুজ বাজি, পরিবেশবান্ধব বাজিতে পৌঁছে গিয়েছে আধুনিকতার হাত ধরে। এই প্রতিবেদনে তারই খবর।
সবুজ বাজি: বাজির মূল উপাদান বেরিয়াম বা সোডা, কাঠকয়লা, গন্ধক। বেরিয়ামবিহীন বাজিকে বলা হচ্ছে সবুজ বাজি। সাধারণ বাজির তুলনায় সবুজ বাজিতে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত দূষণ কম ছড়ায়।
পরিবেশবান্ধব বাজি বুঝবেন কী ভাবে? এ ধরনের বাজির প্রতিটির প্যাকেটের উপর 'পরিবেশবান্ধব বাজি'র 'হলমার্ক' খোদাই করা থাকে। এই 'হলমার্ক' দেখে চেনা সম্ভব পরিবেশবান্ধব বাজি। এ গুলি সরকারি অনুমোদিতও। এ ধরনের রংবেরঙের বাজির আলোর রোশনাই মাটি থেকে আকাশ সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়। পরিবেশবান্ধব বাজি পোড়ালে বায়ুতে দূষণের মাত্রা অনেকটাই কম হয়।
বাজির ডেসিবেল মাত্রাটা কী? যে কোনও ধরনের শব্দবাজি তো বটেই, অনেক আলোর বাজিও বিকট শব্দে ফাটে। যে কোনও শব্দতরঙ্গের মতোই বাজির শব্দেও শব্দ তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। শব্দ তরঙ্গ মাপার মাত্রিককে বলা হয় ডেসিবেল। বিশেষ করে কালীপুজো তথা দীপাবলি-দিওয়ালির ক'টা দিন প্রায় সারাক্ষণ শব্দদানবের উপদ্রবে অনেক মানুষের একটা আশঙ্কা থাকতে পারে। সে জন্য প্রশাসন থেকে প্রতি বছরই একটি নির্দিষ্ট ডেসিবেল বেঁধে দেওয়া হয় শব্দবাজি জ্বালানোর ক্ষেত্রে। এ বছর ভারত সরকারের ঠিক করে দেওয়া ১২৫ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দবাজিকে অনুমোদন দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। যদিও তার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছে 'সবুজ মঞ্চ' নামে পরিবেশরক্ষা সচেতন সংস্থা। আদালতে সেই মামলা গৃহীতও হয়েছে।
বাজি বাজার কী? বইমেলা, বস্ত্রমেলা, খাদ্যমেলার মতোই এটি। বাজি মেলা। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এক সঙ্গে কয়েকশো বাজির দোকানের বাজার। বাজি বাজার!
ময়দানের বাজি বাজার: প্রশাসনের উদ্যোগে ও বড়বাজার ফায়ার ওয়ার্কস ডিলার'স্ অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় ময়দানের বাজি বাজার শহিদ মিনারের পাদদেশে চলে। এ বছর তা ৬-১২ নভেম্বর চলার কথা। কোভিড সংক্রমণের কারণে ২০১৯ সালের তিন বছর পরে এ বার ফের শহিদ মিনারে বাজি বাজার ফিরে এসেছে। এখানে শুধু মাত্র বিক্রি হচ্ছে 'কিউআর কোড' যুক্ত সবুজ বাজি। এবং সর্বোচ্চ ১২৫ ডেসিবেল শব্দতরঙ্গের মধ্যে থাকা বাজিই এখানে পাওয়া যাচ্ছে। ময়দানে ছাড়াও শহর কলকাতায় টালা, যাদবপুর ও বেহালাতেও বাজি বাজার বসেছে বলে খবর। ময়দান সহ শহরের প্রতিটি বাজি বাজার খোলা থাকার সময়- সকাল ১০টা-রাত ৮টা।
শহরতলিতে বাজি বাজার: এ রকম দুটি বাজি বাজার বহু বছর ধরে জনপ্রিয়। একটি চম্পাহাটির বাজি বাজার এবং অন্যটি নুঙ্গির বাজি বাজার। তবে মহেশতলার নুঙ্গিতে বেশ কিছু মাস আগে বাজি বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটার পর ছ'মাস বাজির কারবার বন্ধ ছিল। এখন দীপাবলি উপলক্ষে নুঙ্গির বাজি বাজার বসলেও অতটা ক্রেতাদের আনাগোনা নেই। চম্পাহাটি ও নুঙ্গি, দু'টি বাজি বাজার খোলা সকাল ৮টা-রাত ১০টা।
হাওড়ায় বাজি বাজার: হাওড়া জেলায় দু'টি বড় মাপের বাজি বাজার এ বার বসেছে বলে শোনা গেল। একটি বেলুড় স্টেশন রোডে শক্তি সঙ্ঘের মাঠে। এখানে ৪০টি স্টল। সব দোকানে শুধু মাত্র সবুজ বাজি পাওয়া যাচ্ছে। সূত্রের খবর, এই বাজিমেলা ১২ নভেম্বর অবধি চলবে। রোজ খোলা সকাল ১০টা-রাত ১০টা।
অন্যটি আরেকটি, বেনেপোলে ডুমুরজলা রিং রোড থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে সাঁতরাগাছিতে। এই বাজি বাজারে ৫০টি দোকান আছে। এখানেও শুধুমাত্র সবুজ বাজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেল। খবর, ১২ নভেম্বর অবধি চলবে রোজ সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
এছাড়াও সারা রাজ্যে প্রশাসনের উদ্যোগে ও সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির সহযোগিতায় প্রায় ১৫০টা বাজিমেলা এবারের দীপাবলিতে হচ্ছে। এবারের সর্বপ্রথম বাজি বাজারের উদ্বোধন ঘটেছে গত ৪ নভেম্বর উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।