প্রেমের শহরে হায়, সংজ্ঞা বদলাইয়া যায়! পুজো তো এসেই গেল। প্রেমিকার হাত ধরে অষ্টমীতে ঘুরঘুর, কতই অলিগলিতে ঘুরে খাওয়া দাওয়া, প্রেমট্রেম চলতেই থাকে। পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে জোরদার। তবে আপনি যেটাকে প্রেম ভাবছেন আদৌ সেটা প্রেমের সম্পর্ক বা রিলেশনশিপই তো, নাকি তা পড়ছে অন্য রকমের সম্পর্কের সংজ্ঞায়, কখনও ভেবে দেখেছেন? এই প্রতিবেদনে আপনার জন্য রইল মনোবিদের বক্তব্যে কী ভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় ‘সিচুয়েশনশিপ’।
অনেকেই বলেন, নতুন প্রজন্মে হঠাৎই খুব বেড়ে গিয়েছে স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিক জীবন্মুখীতা। সত্যিই কি তাই? সেই আলোকেই ‘সিচুয়েশনশিপ’ নিয়ে কথা বললেন মনোবিদ।
মনোবিদ মোনালিসা ঘোষ জানালেন যে, সিচুয়েশনশিপের আধিক্য বাড়তে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু প্রজন্ম ধরেই একটু একটু করে। এখনকার ছেলেমেয়েরা একা একা বড় হচ্ছে, তাদের সঙ্গে তুতো ভাইবোন বা আত্মীয়দের যোগাযোগ প্রায় থাকে না বললেই চলে। তার জন্যই নিজেদের জীবনে তাঁরা ভীষণ জেদি হয়ে উঠছেন। তাই তাঁদের মধ্যে মানিয়ে গুছিয়ে চলার ক্ষমতাও দৃশ্যত আর নেই বললেই চলে!
ডঃ মোনালিসার মতে মেয়েরা আগের থেকে অনেক বেশি কেরিয়ার সচেতন, যুগের সঙ্গে আর্থসামাজিক পটে অনেক বদল এসেছে। কিন্তু তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে কমেছে সম্পর্কের প্রতি তাঁদের খেয়াল রাখা বা ভাবনা চিন্তা। নিজেদের জীবন মানুষ কেরিয়ার বা অর্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে হারিয়ে ফেলছেন নিজস্ব সম্পর্কের চাওয়া-পাওয়া। তখনই টানা একটা সম্পর্কে অনেক দিন এক সঙ্গে থাকা আর সম্ভব হচ্ছে না। ভেঙে যাচ্ছে পুরনো প্রেম এমন কী বিয়েও!
তবে কী এই কারণেই মানুষ দীর্ঘ দিনের সম্পর্কে যেতে ভয় পাচ্ছেন, আর তৈরি হচ্ছে অনিশ্চয়তার সিচুয়েশনশিপ? মনোবিদ জানালেন যে, এখনকার প্রজন্মে প্রেম বা অনুভূতি একই রকম রয়েছে ঠিক আগের মতোই, পালটে গিয়েছে শুধুই তা প্রকাশ করার ধরন।’ কেউ হয়তো সম্পর্ক ভাঙার ভয় পান, কারও ভয় নিজের স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলার। তাই অনেক অনুভূতি থাকলেও তাঁরা পাকাপোক্ত সম্পর্কের দিকে এগোতে দু’বার ভাবছেন। দু’জন মানুষ নিজেদের প্রেম বিনিময়ের মাধ্যমে একে অপরের কাছাকাছি এলেও তাই মানতে নারাজ যে তাঁরা প্রেম করছেন!
এই ধারার পিছনে আরেকটি কারণ বলছেন ডঃ মোনালিসা ঘোষ। তিনি বলছেন, এখন প্রাক বিবাহ যৌন সম্পর্কের জন্য আর ভাবনা চিন্তা করতে লাগে না নতুন প্রজন্মের যুবক-যুবতীদের। তাঁদের অনেক বেশি স্বাধীনতা রয়েছে এই ক্ষেত্রে, সমাজও আগের মতো রক্ষণশীলতা কাটিয়ে উঠেছে বেশ অনেকটাই। তাই যৌনতার প্রয়োজনে কোনও ভাবে পাকাপোক্ত সম্পর্কের প্রয়োজন বোধ করছেন না নতুন যুগের মানুষেরা। যার ফলে সিচুয়েশনশিপের মতো অনিশ্চয়তা আর বেশি করে প্রশয় পাচ্ছে, এমন কী জায়গাও করে নিচ্ছে প্রেমের নানা সংজ্ঞার মধ্যেই।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।