সঙ্গী পুরুষ হোক বা নারী, স্বামী-স্ত্রী হোক কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকা, উৎসবের মরসুমে তার জন্য বিশেষ কিছু করতে ইচ্ছে না হলে মশাই আপনি প্রেমিকই নন। এক্কেবারে বেরসিক বা আনরোম্যান্টিক যাকে বলে। মন পেতে সৌধ বানাতে হবে না কিংবা ইউরোপ টুরের টিকিটও নয় (করোনা আবহে যদিও এ কথা মনে আনলেও ‘পাপ’!)। প্রিয় জনকে আপনি যে ভালবাসেন তা মুখে না বললেও কাজের মাধ্যমেই বুঝিয়ে দিতে পারেন সহজেই। উৎসবের মরসুমে ভালবাসার মানুষের মনে আরও একটু ভালবাসার আলো জ্বেলে দিন, দেখবেন নিজেরও কতটা ভাল লাগবে।
আপনার সঙ্গী কোন পেশার সঙ্গে যুক্ত, বা তিনি কী ভালবাসেন, তা আপনিই জানেন। সেই মতোই দীপাবলির আবহেই তাঁর মন ভোলানোর উপায় বেছে নিন। ওয়ার্ক ফ্রম হোমে দুজনেই জেরবার হলে বাড়িতেই ছুটির দিনে স্পা করুন দুজনে। কারণ দুজনেই কাজের জগতে ব্যস্ত। তাই একটু নিরিবিলি প্রয়োজন। চাইলে কাছেপিঠে বেড়িয়ে আসুন। যুগলের দুজন দুই শহরে থাকলে ঠিকানায় আচমকা একটা উপহার পাঠালে সে নিশ্চয়ই খুশিই হবে।
দীপাবলির মরসুমে মন জয় করতে উপহার দিতে পারেন আপনার সঙ্গীকে।
করোনা আবহে সৃষ্টিশালী কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন অনেকেই, ঘষেমেজে তুলছেন পুরনো ভাল লাগা। সঙ্গীর কবিতা লেখার কিংবা বই পড়ার শখ থাকলে তো প্রিয় বইটি সহজেই তুলে দিতে পারেন। অ্যামাজন-সহ একাধিক অনলাইন সাইটে বাংলা বই মেলে সহজেই। দীপাবলির মরসুমে মন জয় করতে পাঞ্জাবি বা শাড়ি, এ ছাড়াও ঘর সাজানোর হরেক জিনিস উপহার দিতে পারেন আপনার সঙ্গীকে।
তবে দামি উপহার মানেই যে বেশি ভালবাসেন এমনটা কিন্তু নয়, একদিন আচমকা মাঝরাতে সুরক্ষাবিধি মেনে লং ড্রাইভ আর তারপর হাতে ধরিয়ে দিন নিজের লেখা চিঠি। সঙ্গী অন্য বাড়িতে থাকলেই বা কী। ডাকযোগে পাঠিয়ে দিয়েই দেখুন না হয়। এ ছাড়াও পোষ্য ভালবাসলে উপহার হিসেবে সেটিও তুলে দিতে পারেন সঙ্গীর হাতে। তবে সে ক্ষেত্রে যত্নবান সঙ্গী থাকাও প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: দোকানে নয়, এই সব ঘরোয়া উপায়ে নিজেই ‘নতুন’ করুন গয়না
আসলে ভালবাসার ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব কোনও দূরত্বই নয়। মানসিকভাবে তাঁরা কতটা কাছাকাছি আছেন, তার উপর নির্ভর করে ভালবাসা থাকবে কি থাকবে না। শারীরিক দূরত্বকে মানুষ এখন অতিক্রম করছে প্রযুক্তির সাহায্যে। প্রযুক্তি ভালবাসেন না, এমন মানুষ মেলা দুষ্কর। আইপড, মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপও উপহার দিতে পারেন কিন্তু পকেটে টান না পড়লে।
সঙ্গী যদি বাড়িতে থাকেন, তাঁর সারাদিনের কাজে আপনিও শরিক হন।
না-ই বা একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া হল, পাশাপাশি হাঁটা বা বেড়ানোর আনন্দ না হয় বন্ধই থাকল আরও কিছুদিন, আড্ডা বা ভালবাসার আদানপ্রদান তো হতেই পারে সঙ্গে একটা স্মার্ট ফোন বা ট্যাব থাকলেই।
আরও পড়ুন: খুসকির সমস্যায় জেরবার? ঘরোয়া এই সব উপায়েই দ্রুত সমাধান
বয়ঃসন্ধির প্রেমিক-প্রেমিকারা কী করবেন, ছোট বলে কি তারা পিছিয়ে থাকবে ভালবাসার আদানপ্রদানে? মোটেও না। অনলাইনেও কার্ড আর ফুল পাঠানোর ব্যবস্থা তো রয়েইছে। দীপাবলির মাসে সঙ্গীর নেটপ্যাকটা ভরিয়ে দিলেই গালে লাল ছোপ! চিঠি না পাঠাতে পারলে ই-চিঠি তো আছেই, মনের কথা খুলে লিখেই ফেলুন ই-মেলে। এটাই এ মরসুমের সবচেয়ে বড় উপহার হতে পারে বড়দের ক্ষেত্রেও।
উৎসবের মরসুমে সময় কাটান এক সঙ্গে।
সঙ্গী যদি বাড়িতে থাকেন, তাঁর সারাদিনের কাজে আপনিও শরিক হন। আপনার ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর এনার্জি জোগাতে গিয়ে নিজের খেয়াল কি রাখছেন তিনি? বাড়ির কাজ কিন্তু আরও বেড়ে গিয়েছে। গৃহবধূ বলে যে তিনি কাজ করেন না, এমন পিছিয়ে পড়া মানসিকতার বদল ঘটানোর সময় এসেছে। খেয়াল রাখুন এ দিকেও বিশেষভাবে। তাঁর যত্নের জন্য হরেক রকম রিল্যাক্সিং বিউটি প্যাক মিলবে অনলাইনেই। এ ছাড়াও একটা প্রাচীন প্রবাদ আছে, জানেন তো? সঙ্গীর মন জয়ের জন্য পাকস্থলীটিই যথেষ্ট। সারা দিনজুড়ে তাঁর প্রিয় পদগুলি রান্না করে খাওয়ান। সঙ্গী একই শহরে অন্যত্র থাকলেও সুইগি জেনি বা এ জাতীয় অ্যাপের মাধ্যমে সঙ্গীর প্রিয় রান্না করে পাঠাতে পারেন সহজেই।
আরও পড়ুন: উৎসবে চাই জেল্লা, এই সব্জিতেই চমক ফেরান ত্বকের
যাঁরা আলাদা থাকছেন করোনা আবহে। যেতে পারছেন না সঙ্গীর কাছে। মন খারাপ করবেন না। বরং আপনার সঙ্গী করোনা আবহে শরীরচর্চার জন্য কী টার্গেট নিয়েছেন তা নিয়ে কথা সেরে ফেলুন। ফিটনেস-ফ্রিক সঙ্গী হলে তাঁকে ফিটনেস ইকুয়েপমেন্টস উপহার দিন।
আলো ঝলমলে টুনিতে মনটাও অন্যরকম হয়ে উঠবে।
সবার কথাই তো হল। কিন্তু উৎসবের মরসুমে ৬০-৭০ পেরনো মানুষগুলি দুজনেই বাড়িতে একা? তাঁরা কী করবেন? বাড়ির পাশেই টুনি মিলবে সহজেই। কারও সাহায্য নিয়ে সাজিয়ে ফেলুন বাড়িটা। আলো ঝলমলে টুনিতে মনটাও অন্যরকম হয়ে উঠবে। দীপাবলির এ মরসুমে অনেকেই সঙ্গীহারাও হয়েছেন। শোক ভুলতে সময় লাগলেও সম্পর্ককে ভুলবেন কেন? আপনার সঙ্গীর পছন্দমতো রান্না করে নিজেই খান। তাঁর পছন্দমতো সেজেই ছবি তুলুন দেখি এক বার। প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলুন। হেল্পলাইনে কথা বলুন। উৎসবের মরসুমে সবথেকে বড় উপহার পাশের জনের মন ভাল রাখা। শুধু তাঁর প্রতিটি ইতিবাচক কাজে পাশে থেকেই দেখুন, সব ঝড়ঝাপটা সামলে নেবেন তিনি সহজেই। উৎসবের আলো, ভালবাসার আলোয় ঝলমল করে উঠুন। তবেই তো অবসাদের আলো ঘুচে দীপালিকায় আলো জ্বালা সার্থক।