সামনেই দুর্গাপুজো। আর আপনার কপালে কিনা দুশ্চিন্তার ভাঁজ! আয়নার সামনে নিজেকে দেখে নিজেরই মন খারাপ। যে ভাবে মোটা হয়েই চলেছেন, তাতে কোন সাজে যে মানাবে! কী করেই বা নজর কাড়বেন পুজোয়!
খাওয়াদাওয়ায় লাগাম, সারা দিন কেবল স্যালাড আর কালেভদ্রে সেদ্ধ মাছ। এ সব তো হল!
এ বার খাওয়াদাওয়া করেই শরীরের বাড়তি মেদ ঝরিয়ে দেখবেন নাকি? জানেন কি, তার জন্য চাই শুধু খাবারে কয়েকটা মশলাপাতির সঠিক উপস্থিতি।
খাবারে ঠিকঠিক মশলা-ই আপনার ওজন কমানোর মশলা! যার খোঁজ দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।
১. আদা - শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। অতিরিক্ত মেদ ঝরায়। আপনার চা কিংবা স্যালাডে আদা থাকা মানে তা শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে, সঠিক উষ্ণতা সৃষ্টি করতে উৎসেচকের কাজ করছে। যার থেকে মোটা মানুষ রোগা হয়।
২. মরিচ গুঁড়ো - খাবারে শুকনো মরিচ গুঁড়ো থাকা ভাল। যাঁরা ভাবেন, বেশি মরিচ খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর, ভুল করেন। বরং মোটা মানুষের শরীরের উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উৎসেচকের কাজ করে গুঁড়ো মরিচ। যার দৌলতে রোগা হওয়া পর্যন্ত সম্ভব।
৩. দারচিনি - গরম মশলার প্রধান উপাদান দারচিনি। এই মশলা শরীরের বাড়তি মেদ ঝরায়, শর্করার মাত্রা বজায় রাখে। অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছেকে কমায়। অনেক ক্ষণ পেট ভর্তি থাকার অনুভূতি দেয়।
৪. রসুন - মোটা মানুষদের খাবারে রসুন থাকা অতি আবশ্যক। নিয়মিত রসুন খেলে শরীরের ওজন সহজেই কমে। বাড়তি চর্বি ঝরে যায়। টানা ৭ সপ্তাহ রোজ সকালে এক কোয়া করে রসুন আপনার খাওয়াদাওয়ার ইচ্ছে ও পরিমাণে রাশ টানবে।
৫. ড্যান্ডেলিয়ন - এটা আসলে এক ধরনের ফুল। ইদানীং ডায়েটে ড্যান্ডেলিয়নকে স্বাস্থ্য ও খাদ্য গুণমান সমৃদ্ধ একটি খাবার হিসেবে ধরা হয়। এতে 'ভিটামিন এ', 'ভিটামিন সি', 'ভিটামিন ই' ছাড়াও আছে আয়রন ও পটাশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ। সবচেয়ে জরুরি বিষয়, এটি ওজন কমায়।
৬. গোলমরিচ - এই মশলাও রোগা হতে সাহায্য করে। গোলমরিচ খেলে শরীরের বাড়তি চর্বি ঝরে যায়।
৭. কাঁচা হলুদ - প্রতিদিনের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে এটি খুবই উপকারী একটা উপাদান। কাঁচা হলুদে থাকা ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ থেকে খাদ্যনালীকে সুরক্ষিত রাখে। এ ছাড়াও ডায়বেটিস, দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা এবং কোলেস্টেরলের সমস্যাতেও হলুদ খুব উপকারী। রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে ও ইনসুলিন হরমোনের কাজ করতে সহায়তা করে।
মেথি - শরীর ঠাণ্ডা রাখতে মেথির জলের গুরুত্ব অপরিহার্য। এ ছাড়াও শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে, রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, হজম শক্তি বৃদ্ধিতে, ত্বক উজ্জ্বল রাখতে রাখতে মেথিকে নানাভাবে ব্যবহার করে থাকি।
ধনে গুঁড়ো - শুধু রান্নার কাজেই নয়, নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যাতেও ধনে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ধনে গুঁড়ো গ্যাস অম্বলের দূরীকরণ থেকে ওজন কম করতেও সাহায্য করে। পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালনকে সচল রাখে।
পুষ্টিবিদ রিম্পা বোস জানিয়েছেন, “ভারতীয় সংস্কৃতিতে ঠাকুমা, দিদিমাদের আমল থেকে রান্নায় ব্যবহৃত যাবতীয় মশলার অপকারের চেয়ে উপকার অনেক গুণে বেশি। পেটের গোলযোগ থেকে শুরু করে সুগার, কোলেস্টেরল এ ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় রান্নায় ব্যবহার্য বিভিন্ন মশলা আমাদের উপকার করে।’’
তিনি আরও জানিয়েছেন, আমাদের সকলেরই কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে আদা রসুন বাটা বেশিমাত্রায় রান্নায় ব্যবহার করা হলে গ্যাস, অম্বলের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তবে মোটেই তা নয়। বরং প্রত্যেকটি মশলারই নিজস্ব প্রাকৃতিক ও ঔষধি গুণাগুণ বর্তমান। যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।