পুজোর দিনগুলোয় একটু তো অনিয়ম করতেই হয়। শারদ-আমেজে ডায়েটের বেড়াজালে বন্দি থাকতে কারই বা ইচ্ছে করে! কিন্তু এ বার দুর্গাপুজো শেষ। অগত্যা একটু নিয়মে তো ফিরতেই হবে। বিশেষত, যাঁদের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা রয়েছে।
নিয়মে ফেরার জন্য সবার আগে জরুরি ছোট ছোট বিষয়ে নজর দেওয়া। কারণ, তার মধ্যেই লুকিয়ে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি। ঠিক যেমন, বোঁটা ছাড়িয়ে লঙ্কা খাবেন, নাকি বোঁটাসুদ্ধ? কোনটা বেশি স্বাস্থ্যকর? এমনই এক বিতর্ক তৈরি করে দিয়েছেন শেফ অজয়।
একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে অজয় দাবি করেছেন, অন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্য ডাঁটি অক্ষত রেখেই রান্নায় লঙ্কা ব্যবহার করা উচিত। তাঁর কথায়, “কাঁচা বা শুকনো, লঙ্কা যেমনই হোক না কেন, সব সময়ে বোঁটা রেখে দেবেন। এটি আপনার অন্ত্রকে হজমের সমস্যা থেকে বাঁচাবে।’’
কী বলছেন চিকিৎসকেরা? দিল্লির ধর্মশীলা নারায়ণ হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট চিকিৎসক মহেশ গুপ্ত বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লঙ্কার প্রদাহরোধী প্রভাব রয়েছে। যা অন্ত্রের প্রদাহ কমায় এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS)-এর মতো রোগের উপশম ঘটায়। এর অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল বৈশিষ্ট্যগুলি একটি সুস্থ অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা সামগ্রিক হজমের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।’’
তবে গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত লঙ্কা খাওয়া, বিশেষত শুকনো লঙ্কা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অস্বস্তির কারণ হতে পারে। এতে থাকা ক্যাপসাইসিনের উচ্চ মাত্রা পেটে জ্বালা তৈরি করতে পারে। গ্যাস্ট্রাইটিস বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সকে আরও বেড়ে যেতে পারে তার দরুণ। এমনকি ডিহাইড্রেশনও হতে পারে।
চিকিৎসক গুপ্ত এবং শেফ আশিস সিং শেফ অজয়ের সঙ্গে একমত নন। আশিস জানালেন, এর পিছনে কোনও রন্ধন বিজ্ঞান নেই। যে মশলাটি তৈরি হচ্ছে, লঙ্কার বোঁটা তাতে কেবল বিশেষ মাত্রা যোগ করছে। আর কিছু নয়।
শেফ এবং লেখক অনাল কোটাকও বলেছেন: ‘‘অতিরিক্ত পরিমাণে কোনও লঙ্কাই খাওয়াই উচিত নয়। কারণ তা হজমের সমস্যা সৃষ্টি করবে এবং পাইলসের কারণও হতে পারে।”
বেঙ্গালুরুর অ্যাস্টার হোয়াইটফিল্ড হাসপাতালের ডায়েটিশিয়ান বীণা ভি বলেন, ‘‘যদিও ডাঁটা-সহ একটি গোটা লঙ্কা খাওয়া সামগ্রিক ভাবে ক্যাপসাইসিন গ্রহণের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে, তবে এই পদ্ধতিটি বদহজম উপশম করতে সাহায্য করে না।’’
শেফ আশিস সিংয়ের পরামর্শ– কেউ ঝাল খেতে পছন্দ না করলে বীজ বাদ দিয়ে লঙ্কা ব্যবহার করতে পারেন রান্নায়। তাঁর কথায়, “ব্যবহারের আগে লঙ্কাটিকে একটু ঘষে নিন। যাতে বীজগুলি ছড়িয়ে পড়ে। এই টোটকায় ঝাল ভাব সমান ভাবে চার দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারবে।’’
কোটাক জানান, বীজ সরিয়ে দিলে ঝালের পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমে আসে। শেফ এবং লেখকের কথায়, ‘‘আমি সুপারিশ করব, ডাঁটি ছাড়িয়ে সবুজ লঙ্কা খাবেন না। বরং সবুজ লঙ্কাগুলিকে লম্বালম্বিভাবে চিরে নিন। ভিতর থেকে বীজগুলি বার করে নিন। তার পর সেগুলিকে ভাজুন। এতে অপকারিতার পরিমাণ কমে যাবে।’’