শৈশবে পুজো আর পুজোর ছুটির স্বাদ ঠিক কেমন, তা আমাদের সকলের জানা। নতুন জামা, ঠাকুর দেখা, অন্য শহর থেকে ছুটিতে বাড়িতে আসা ভাই- বোনেরা, পূজা বার্ষিকী, দূরদূরান্তে বেড়াতে যাওয়া, আরও কত কী! কিন্তু এবারের পুজো একদম অন্যরকম। কারও কাটছে ভয়ে ভয়ে, কেউ অত্যন্তসতর্ক- এমনই পরিস্থিতিতে এ বছর মা দুর্গার আগমন। পুজো হবে, কিন্তু আগের জৌলুস, পুরনো হল্লাহাটি খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
এ বার হয়তো আত্মীয়স্বজন সরগরম করে রাখবেনা বাড়ির অন্দরমহল। নানাবিধ সতর্কতা মেনে বেড়াতে যদি যাওয়া হয়ও,তবে তা কাছাকাছির মধ্যে। ছোটদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার ঝুঁকিটাও হয়তো অনেক মা-বাবাই নিতে চাইবেন না। খুদেরা তাই এ বার বঞ্চিত পুজোর অনেক আনন্দ থেকেই। কিন্তু কচি মুখগুলো ম্লান হয়ে থাকলে যে সবটাই মাটি! আবার বাড়িতে বন্দি অনেক ছোটরা হাতে একটু বেশি সময় পেয়ে যাচ্ছে মোবাইল ইন্টারনেট যোগাযোগ সমেত। ছানাদের ভুলিয়ে রাখতে গিয়ে এদিকটায় আলগা দিলেও সমস্যা। তাই আসুন একটু ভেবে নিই কোন কোন উপায়ে ছোটদের ব্যস্ত রাখা যায়? যাতে তাদের সময়ও কাটে চমৎকার, মনের বাড়ও হয় তরতরিয়ে।
রং-তুলি-ক্যানভাস: যন্ত্র নির্ভর জীবন আর প্রতিযোগিতার দুর্বিপাকে আগল পড়ে যাচ্ছে কচিমনের বিকাশে। ব্যাগভর্তি রং-তুলি আর সাদা ক্যানভাস দিয়ে দেখুন। শিশুমন ডানা মেলবে অলীক কল্পনায়। ইচ্ছের রং লাগা দুনিয়ায় ওরা এঁকে চলবে হরেকরকম। নিয়ে আসতে পারেন রঙিন কাগজও। ওদের সঙ্গে নিয়ে পাড়ি দিন অরিগ্যামির সৃজনশীল জগতে।
ইচ্ছের রং লাগা দুনিয়ায় ওরা এঁকে চলবে হরেকরকম।
বাড়ির ছোট ছোট কাজের দায়িত্ব: প্রত্যেক মা-বাবাই চান তাদের সন্তান হয়ে উঠুক স্বয়ংসম্পূর্ণ, দায়িত্ববান মানুষ। দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক কাজ থাকে,যা আপনি অনায়াসে ভাগ করে নিতে পারেন ছোটদের সঙ্গে। ঘর গোছানো, এমনকি টুকিটাকি রান্নাবান্নার হাল্কা কাজেও ওদের রাখতে পারেন সহকারীর দায়িত্বে। খেয়াল রাখবেন কচি, আনাড়ি হাতে করা এইসব কাজের অমর্যাদা যেন না হয়। আপনি ওর উপরে নির্ভর করছেন জেনে আত্মবিশ্বাস যেমন তৈরি হবে, তেমন দায়িত্ব নিতেও শিখবে খুদেরা।
আরও পড়ুন: গাঁদা কিংবা গোলাপ, নানা ফুলের ব্যবহারেই জেল্লাদার ত্বক
আনন্দ, খুশি, ভাগাভাগি করে: বাইরে গিয়ে খেলার অবকাশ এই পরিস্থিতিতে ছোটদের নেই বললেই চলে। বাড়ির মধ্যেই নানারকম খেলাধুলার সুযোগ করে দিন ওদের। লুকোচুরি, মিউজিক্যাল চেয়ার(বাড়ির সদস্য সংখ্যা বেশি হলে), স্ক্র্যাবল, সাপ-লুডো, দাবা, পাজল – এরকম বিভিন্ন ইন্ডোর গেমে সঙ্গী হন আপনিও। খেলাচ্ছলে উৎসাহিত করুন শরীরচর্চায়। প্রয়োজনে থাক লাইট, হাল্কা মিউজিক। সিনেমার প্রতি পক্ষপাত থাকবেই ছোটদের। পুজোর ছুটিতে সিনেমা দেখুননা ওদের নিয়ে-সোনার কেল্লা কিম্বাই.টি, পাতালঘর থেকে জুরাসিক পার্ক কিংবা বেবি’জ ডে আউট- বিকল্প কিন্তু অনেক!
নিত্যনতুন হাতছানিতে হারিয়ে যাচ্ছে গল্পের বইয়ের ম্যাজিক দুনিয়া।
চিনুক বইয়ের জগৎ: বিনোদনের হরেক পসরা সাজিয়ে বসেছে হালের পৃথিবী। শৈশবকে অমোঘ টানে ধরে রেখেছে মোবাইল, ইন্টারনেট দুনিয়া, রকমারি ভার্চুয়াল গেম। বাচ্চারা এর অল্প স্বল্পস্বাদ নিতেই পারে, কিন্তু আপনার তত্ত্বাবধানে। সমস্যাটা অন্য জায়গায়। এই নিত্যনতুন হাতছানিতে ছোটদের থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গল্পের বইয়ের ম্যাজিক দুনিয়া। আপনার শিশুকে এর স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে দেবেন না। এ বছরের পূজা বার্ষিকী থেকে শুরু করে ফেলুদা-টিনটিন-শঙ্কু-অ্যালিসইন ওয়ান্ডারল্যান্ড-পিটার প্যানের পৃথিবীতে ওদের হারিয়ে যেতে দিন। দেখুন কেমন মজা পায়!
আরও পড়ুন: ফটো ফ্রেম বা পোশাক, পুজোর উপহারে ‘ব্যক্তিগত ছোঁয়া’ কী ভাবে
বাচ্চাও হোক পরিবেশ সচেতন, প্রকৃতিবান্ধব: আপনার সন্তানকে ভালোবাসতে শেখান এই পৃথিবীকে। বুঝিয়ে দিন কেমন সঙ্কটে রয়েছে প্রকৃতি। বাগান করতে, গাছ লাগাতে উৎসাহ দিন। নতুন প্রাণকে লালন করার মাধ্যমে বাচ্চা হয়ে উঠবে যত্নশীল। শিখবে সবুজায়নের গুরুত্ব। বিভিন্ন ব্যবহৃত জিনিসপত্র, যেমনবোতল, প্লাস্টিকের পাত্র এদের পুনর্ব্যবহার করুন, শিশুকেও করতে শেখান। রঙে সাজিয়ে নিয়ে তাতে চারাগাছ বসানো যায়। বানিয়ে নেওয়া যায় পেনদানিও। বাড়িতে পোষ্য থাকাও খুবই ভাল। এতে চারপাশের পশুপাখির প্রতি সংবেদনশীল হতে শিখবে খুদেরা। বাড়ির আশপাশের দু-একটি প্রাণীর দৈনন্দিন খেতে দেওয়ার অভ্যাস থাকলে বাচ্চাকেও সঙ্গে নিন। তা আপনার শিশুর ভবিষ্যতে মানুষ হয়ে ওঠার পাথেয় হবে। কালীপূজো ও আসছে। শব্দবাজিকী ভাবে পরিবেশ এবং জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর, সেটাও ধৈর্য্য নিয়ে বোঝান ওদের। ফল মিলবে।