এই পুজোয় বাড়ির বয়স্কদের ঘর ঝকঝকে করে দিন।
এই আনন্দে মেতে উঠব সবাই। কচিকাঁচাদের পাশাপাশি বয়স্ক মানুষাও। তাই উৎসবের দিনগুলোয় বাড়ির বড়দের ঘরটা যেন সকলের আগে সেজে ওঠে।
সামনেই পুজো। এই আনন্দে মেতে উঠব সবাই। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সকলে। কচিকাঁচাদের পাশাপাশি বয়স্ক মানুষাও। আনন্দ ভাগ করে নিলেই তো আনন্দ বাড়ে। উৎসবের সময় আমরা কম-বেশি সকলেই সেজে উঠি। নতুনের ছোঁয়া লাগে গায়ে। প্রতি দিন নতুন নতুন জামা, প্যান্ট, শাড়ি। শুধু নতুন জামা, প্যান্টই বা কেন? উৎসবের সময় আমরা নিজেদের ঘর-বাড়িও সাজিয়ে নিতে চাই সাধ্যমতো, অবশ্য সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমঝোতা করেই।
প্রায় মাস খানেক ধরে চলে বাঙালির উৎসব পার্বণ। তার আগেই অন্দরসজ্জার কাজগুলো শেষ করে ফেলতে চান সবাই। যতটা পারা যায় আরকি! তবে একেবারেই যদি সাধ্য না থাকে, অন্তত ঘরে বহু দিন ধরে রাখা খাটটা এ দিক-ও দিক করতে পারেন! দেখবেন কতটা বদলে গিয়েছে সব কিছু।
বাড়ির বড়দের ঘিরেই তো আমাদের সব। তাঁদের খুশি রাখতে পারা, তাঁদের ইচ্ছাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া, তাঁদের স্বপ্নগুলো সাধ্যমতো বাস্তবে রুপ দেওয়া যায় কি না নজর রাখুন। তাই উৎসবের দিনগুলোয় বাড়ির অন্দরসজ্জার দিকে যখন নজর দেবেন, তখন অবশ্যই যেন বাড়ির বড়দের ঘরটা সকলের আগে সেজে ওঠে।
ফ্ল্যাটবাড়িতে অনেক ক্ষেত্রেই খেয়াল করে দেখেছি, বাড়ির অভিভাবকদের জন্য যে ঘরটি বরাদ্দ থাকে, সেই ঘরটিতেই পুজোর ব্যবস্থা রাখা হয়। এক কোণে একটি ছোট পুজো করার জায়গা। ঘরের মাপ বড় হলে মন্দিরের মাপটা বড় হয়। মন্দিরটি কখনও মার্বেল পাথরের আবার কখনও কাঠ বা প্লাইয়ের বানানো।
সেই রকমটি যদি আপনার বাড়িতে থাকে তা হলে তো কথাই নেই। না থাকলে বয়স্কদের ঘরে একটা ছোট মন্দির বানিয়ে দিতে পারেন, যাতে পুজো করতে সুবিধা হয়। অনেক রকম মার্বেলের মন্দির কিনতে পাওয়া যায় পাথরের দোকানে। তবে প্লাই বা কাঠের হলে মাপ দিয়ে জায়গায় বসে বানিয়ে নেওয়াই ভাল।
বাড়ির অভিভাবক বা বয়স্ক মানুষদের ঘরের খাট বেশি উঁচু না হওয়াই ভাল। গদি নিয়ে খুব বেশি হলে ১৮ ইঞ্চির মধ্যে। আলমারি বা বেড সাইড টেব্লে একটু বেশি ড্রয়ার রাখা দরকার। ছোটখাটো অনেক দরকারি জিনিস রাখা যাবে তাতে। যাতে প্রয়োজনে সহজে হাতের কাছে পাওয়া যায়।
বয়স বাড়লে স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। হয়তো বা আমার-আপনার ক্ষেত্রেও সেরকম অসুবিধের সৃষ্টি হয়েছে কখনও। দরকারি কিছু হঠাৎই স্মৃতির অন্তরালে চলে যায়। আর ঠিক সে কারণেই বয়স্ক মানুষদের ঘরে অবশ্যই একটা সফট বোর্ড রাখা দরকার। যাতে যখনই যা মনে আসবে, দরকারি জিনিসটির কথা একটা কাগজে লিখে সফট বোর্ডে লাগিয়ে রাখতে পারবেন তাঁরা। তা হলেই ভুলে যাওয়ার বিষয়টি অনেক কমে যাবে।
আরও পড়ুন: পুজোয় বেড়াতে যাচ্ছেন? বাড়ির সুরক্ষার কথা কী ভেবেছেন?
আরও পড়ুন: ঘরের রং হোক শরতের আকাশের মতো মন ভাল করা
বয়স্কদের বিছানার পাশে অবশ্যই একটা কলিং বেল লাগাবেন। যাতে কখনও শরীর খারাপ হলে বেল বাজিয়ে বাড়ির বাকি মানুষদের ডেকে নিতে পারেন তাঁরা।
এ বার উৎসবের আগে অভিভাবকদের ঘরের দেওয়ালে অবশ্যই একটা বুক সেলফ বানিয়ে দিন। যাতে কিছু গল্পের বই, ম্যাগাজিন থাকবে। ছোট মিউজিক সিস্টেম লাগিয়ে দিন। যাতে ইচ্ছে হলেই গান শুনতে পারেন তাঁরা। আর হ্যাঁ, জানালার ঠিক পাশে দুটো মুখোমুখি আর্ম চেয়ার বা আরাম কেদারা রাখতে পারেন। সেই চেয়ারে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে কিংবা বই পড়ে অনেকটা সময়ই কেটে যায় তাঁদের।
আর একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, বয়স্কদের ঘরের এসিটা যেন খাটের উপর এমন ভাবে না থাকে, যাতে এসি-র ঠান্ডা হাওয়া সরাসরি শরীরে এসে লাগে। তা হলে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব রয়েছে। তাই খাট থেকে কিছুটা দূরে, এমন জায়গায় এসিটা রাখবেন, যাতে সরাসরি এসি মেশিনের হাওয়া শরীর ছুঁতে না পারে।
বয়স্কদের জন্যে যে ঘরটি সাজাবেন, অবশ্যই যেন সেই ঘরের লাগোয়া বাথরুম থাকে। আর বাথরুমে পশ্চিমী ছোঁয়া এবং কমোড বা ডব্লিউ-সি থাকাটা খুবই দরকার।
ঘরে একটা বড় আয়না রাখবেন। বেশ খানিকটা চওড়া যেন হয়। আর অবশ্যই নজর রাখবেন আয়নার উপরে যাতে যথেষ্ট আলোর ব্যবস্থা থাকে। বয়স্ক মানুষদের ঘরে প্রচুর আলোর ব্যবস্থা রাখাটাও খুব দরকার। আবার দরকার কিছু লুকিয়ে থাকা আলো— যেগুলো বিশ্রামের সময় মন ভাল রাখার কাজে ব্যবহার করা যায়।
ছবি সৌজন্য: লেখক।
(লেখক অন্দরসজ্জা বিশেষজ্ঞ)