রোজকার কাজের চাপে প্রায় সারা বছরই নিজের প্রতি সঠিক যত্ন নেওয়া কারওরই হয়ে ওঠে না। ফলে উজ্জলতা হারায় ত্বক ও চুল। কিন্তু এবার খুব সহজেই হবে এই মুশকিল আসান। ঘরোয়া পদ্ধতিতে রইল ১০টি বাছাই করা টিপস। যা ব্যবহারে পুজোর আগে মাত্র কয়েক দিনেই আপনার ত্বক হয়ে উঠবে সেরার সেরা।
১. রোদে পোড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরাতে জুড়ি নেই টক দই, বেসন কফি ও চালের গুঁড়ির মিশ্রণের। দই ভিতর থেকে ত্বককে পরিষ্কার করে, বেসন উজ্জ্বল করে ত্বককে, কফি রোদে পোড়া দাগ তুলতে আর চালের গুঁড়ি ত্বকের মরা কোষ বের করতে সাহায্য করে। টক দই-এর সঙ্গে সবকটি উপাদান পরিমান মতো মিশিয়ে ফেস প্যাকটি মুখে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট রেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। সপ্তাহে ৩ দিন এটি করতে হবে।
২. রোদে পড়া ত্বকের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফেরাতে সাহায্য করে টক দই, হলুদ গুঁড়ো ও টমেটোর মিশ্রণ। সপ্তাহে অন্তত দু’দিন এই প্যাকটি মুখ, গলা, হাত ও পায়ের খোলা অংশে যেখানে রোদ লাগে সেইসব জায়গায় ভাল করে লাগিয়ে মিনিট ১৫ রেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিন।
৩. ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে ত্বককে সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী গোলাপ জল, চন্দন পাউডার এবং মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক। চন্দনে আছে অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল উপাদান আর মুলতানি মাটি ও গোলাপ জলও ত্বকের জন্য খুব উপকারী। সব ক’টি উপাদান ভাল করে মিশিয়ে মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দু’দিন এটি ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে ঝলমলে ও মসৃণ।
৪. ত্বকের কালো কালো ছোপ দূর করতে খুবই কার্যকরী চালের গুঁড়ো, মধু, কফি ও নারকেল তেলের মিশ্রণে বানানো ফেসপ্যাক। সপ্তাহে দু’দিন এই ফেসপ্যাকটি মুখে লাগিয়ে পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে অল্প ঠান্ডা জলে মালিশ করে ধুয়ে ফেলুন।
৫. এছাড়াও ত্বকের দাগ এবং রিংকেল দূর করে ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে ভীষণ উপকারী অ্যালোভেরা ও ভিটামিন-ই ক্যাপসুল। এর সঙ্গে ভিটামিন-সি ও গ্লিসারিনও ত্বকের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। এ গুলি ত্বককে টানটান, উজ্জ্বল ও কোমল করে। পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেল, একটি ভিটামিন-ই ক্যাপসুল, গ্লিসারিন ও বাজার চলতি কোনও ব্র্যান্ডেড ভিটামিন-সি পাউডার অথবা বাড়িতেই কমলালেবুর খোসা শুকিয়ে ভাল করে গুঁড়ো করে তার পর সবক’টি উপাদান এক সঙ্গে মিশিয়ে নিন। একটু গোলাপ জলও দিতে পারেন। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে তিন দিন পনেরো মিনিট মুখে লাগিয়ে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা নজর কাড়বে।
৬. বর্তমানে চাহিদা বেড়েছে ‘কোরিয়ান গ্লাস স্কিনের’, অর্থাৎ দাগহীন উজ্জল, মসৃণ ও চকচকে ত্বকের। ঘরে বসে সামান্য কয়েকটি উপাদানে আপনিও পেতে পারেন এই রকমই ত্বক। এর জন্য প্রথমে প্রায় ৫০ গ্রাম মতো চাল পরিষ্কার জলে পুরো একদিন ভিজিয়ে রাখুন। এর পর সেই জলের সঙ্গে ভিজানো চাল মিক্সিতে ভালো করে ব্লেন্ড করে তার মধ্যে একে একে যোগ করুন পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেল, দু’টি ভিটামিন-ই ক্যাপসুল এবং কোনও ব্র্যান্ডেড কোম্পানির হলুদের ‘এসেন্টিয়াল তেল’ ও কফি। ভাল করে মিশ্রণটি তৈরি করে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বক হয়ে উঠবে জেল্লাদার।
৭. ত্বক ভাল রাখতে প্রয়োজনীয় আরও একটি উপাদান হল আলুর রস। এর সঙ্গে টমেটোর রস মিশিয়ে ৫ থেকে ৭ মিনিট পরিষ্কার তুলো দিয়ে মুখে রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে ধুয়ে কোনও ক্রিম মেখে নিন। এছাড়াও তেল ঝাল মসলা জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন এবং প্রচুর পরিমাণে ফলমূল শাকসবজি ও জল খাদ্যতালিকায় রাখুন। এর ফলে আপনার ত্বক ভিতর থেকে হয়ে উঠবে সুন্দর প্রাণবন্ত ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
৮. ত্বকের পাশাপাশি চুলের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। চুলকে সতেজ উজ্জ্বল রাখতে ব্যবহার করুন টক দই ও ডিমের মিশ্রণ। সপ্তাহে একদিন এই মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে ঘন্টাখানেক রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুলের পুষ্টিও হবে এতে।
৯. পাশাপাশি যে কোনও ভেষজ জাতীয় হেনা মাসে এক দিন চুলে লাগান। চুল ঝলমলে রাখতে হেনার সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন চাপাতা বা কফি ভেজানো উষ্ণ জল ও ডিমের সাদা অংশ। এছাড়াও চুলের গ্রোথ আনতে এবং চুল পড়া রোধ করতে নারকেল তেলের সঙ্গে কারি পাতা, পেঁয়াজের রস মিশিয়ে সপ্তাহে একদিন মাথায় লাগান। ঘন্টাখানেক রেখে শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে নিন৷
১০. ত্বক ও চুলের পাশাপাশি ঘরে বসেই পায়ের পাতাকেও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারবেন। রাতে ঘুমোবার আগে পায়ের পাতা ভেজে এরকম একটি পাত্রে ঈষদ-উষ্ণ গরম জল নিয়ে তাতে সামান্য পরিমাণ লবণ, বেকিং সোডা ও শ্যাম্পু ভালো করে মিশিয়ে নিন। এর পর ২০ মিনিট মতো পা জলে ভিজিয়ে রেখে লুফা দিয়ে ভাল করে ঘষে পরিষ্কার করে নিন। সবশেষে ঠান্ডা জলে পা ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার পায়ে লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।