কলকাতা জুড়ে ঠাকুর দেখবেন আর শহরময় কোন খাবারের দোকান, রেস্তোরাঁ ও হোটেলের কোন মেনুটা স্পেশাল জেনে রাখবেন না? তাহলে পুজোর ভোজন পুরোপুরি জমবে কেমন করে? তেমনই অনেকগুলি সেরা খাবারের সন্ধান রইল এখানে।
আলাকিয়েভ: এক ধরনের কন্টিনেন্টাল খাবার। মূলত চিকেন কিমার রেসিপি। সেটাকে বিশেষ মশলায় তৈরি। ভেতরে মাখন দেওয়া থাকে। সঙ্গে বিশেষভাবে সেদ্ধ আলু ও কয়েক ধরনের সবজি। সেরা পরিবেশনকারী - অলিপাব দাম - ৩৫০ টাকা, সঙ্গে ৫ শতাংশ জিএসটি কোথায় - পার্ক স্ট্রিট দোকান খোলা - সকাল ১১টা-রাত ১১টা
মটন রেজালা: এটা মোগলাই মেন কোর্সের একটা সাইড ডিশ। একটু মিষ্টি-মিষ্টি খেতে। এর ঝোল সাদাটে দেখতে। মাংস এতটাই নরম হয় যে, মুখে দিলে প্রায় গলে যায়। তন্দুরি রুটি দিয়ে খেতে পারেন। সেরা পরিবেশনকারী - সাবির দাম - ২৫০ টাকা কোথায় - চাঁদনী চক দোকান খোলা - সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা
কচুপাতা চিংড়ি ভাপে: বাঙালি, বিশেষ করে পূর্ববঙ্গীয় একটা দারুণ সুস্বাদু তথা মুখরোচক খাবার। গরম সাদা ভাত দিয়ে খেতে অপূর্ব লাগে। মূলতঃ কুঁচো চিংড়ির সঙ্গে সরষে এবং সেদ্ধ কচুপাতার রেসিপি এটি। গা-মাখা মাখা ধরনের হয়। সাধারণ এক বাটি কচুপাতা চিংড়ি ভাপেতে ৮-১০ পিস কুঁচো চিংড়ি থাকে। সেরা পরিবেশনকারী - কস্তুরী। দাম - ২০০ টাকা কোথায় - নিউ মার্কেট অঞ্চলে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে প্রধান রেস্তোরাঁটি ছাড়াও গড়িয়াহাটে হিন্দুস্থান রোড, বেহালা, বালিগঞ্জ, যাদবপুর, নাগেরবাজারের কাছে যশোর রোডের উপরেও শাখা আছে। দোকান খোলা - সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা
মটন পসিন্দা: মোগলাই খাবারের এক দারুণ সুস্বাদু অথচ হালকা ধরনের সাইড ডিশ এটি। মটন পসিন্দা যেমন তন্দুরি ও রুমালি রুটি দিয়ে খেতে দুর্দান্ত লাগে, তেমনই বিরিয়ানির সঙ্গেও খাওয়া যায়। হালকা মশলা অথচ মুখরোচক খেতে। গা-মাখা মাখা ঘন গ্রেভিতে হাড় বিহীন খুব ছোট ছোট পিসের অসংখ্য মটন থাকে এক প্লেটে। সেরা পরিবেশনকারী - সিরাজ দাম - ৩৫২ টাকা কোথায় – পার্ক স্ট্রিট ও এজেসি রোড মোড়ের সংযোগস্থলে মল্লিক বাজারে দোকান খোলা - দুপুর ১২টা-রাত ১১.৩০
মটন টিকিয়া: মটন-কে কিমা করে মাঝারি আকারের গোলাকার একেকটা পিস বানিয়ে তৈরি মশলাদার এক মোগলাই সাইড ডিশ এটা। মটন টিকিয়া প্রায় শুকনো খাবার। টিকিয়ার গায়ে মশলাদার গ্রেভি লাগানো থাকে। রুমালি রুটি দিয়ে খেতে দুর্দান্ত লাগে। হাতরুটি দিয়ে খেতেও ভালো। সেরা পরিবেশনকারী - হোটেল প্রিয়া দাম - ৮০ টাকা (১ পিস) কোথায় - শ্যামবাজার ও হাতিবাগানের মাঝামাঝি ফড়িয়াপুকুরে দোকান খোলা - দুপুর ১২-বিকেল ৪টে এবং সন্ধে ৭টা-রাত ১১টা
চেলো কাবাব: বিশেষ এক ধরনের 'কম্বো ডিশ' অর্থাৎ মিশ্র খাবার। সব বয়সিদের কাছেই ভীষণ জনপ্রিয়, বিশেষ করে যারা কাবাবের ভক্ত। দুর্ধর্ষ সুস্বাদু ও মুখরোচক। মধ্যাহ্ন ভোজবা রাতের খাবার, দুয়ের পক্ষেই আদর্শ। চেলো কাবাবে থাকে সরু চালের ভাত, ২ পিস মটন শিক কাবাব, ৮ পিস রেশমি কাবাব, ১ পিস ফ্রায়েড এগ, শশা-টম্যাটোর টুকরো, টম্যাটো-চিলি শস। সেরা পরিবেশনকারী - পিটার ক্যাট দাম - ৫৫১ টাকা কোথায় - পার্ক স্ট্রিট দোকান খোলা - দুপুর ১২টা-রাত ১১টা
মাংসের শিঙাড়া: মধ্যবিত্তের মোটামুটি ব্যয়সাধ্য দামে দারুণ সুস্বাদু মাংসের শিঙাড়া বলতে শহরে যে দোকানকে বোঝায়, এ বার উৎসবের মরশুমে তারা সেখানে এই খাবার রাখছে না। বদলে এটি পাওয়া যাচ্ছে তাদের নতুন খোলা শাখায় অন্যত্র। তার পরিবর্তে মূল দোকানে পুজোর সময় বিশেষ আইটেম থাকছে মাছের শিঙাড়া। মাংসের সিঙাড়ায় এদের কোনও আলু থাকে না। শুধুই মটনের পুর থাকে সিঙাড়ার ভেতরে। অনেকটা মটন বটি কাবাবের সাইজের এক পিস হাড় বিহীন মাংস আর পেঁয়াজের এক বিশেষ ধরনের মশলা-পুর, এই দিয়ে তৈরি এদের মাংসের শিঙাড়া। সেরা পরিবেশনকারী - আপনজন (এদের নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজোর গলিতে নতুন শাখায় আপাতত মাংসের শিঙাড়া পাওয়া যাচ্ছে। কালীঘাটের মূল দোকানে নয়) দাম - ৬০ টাকা (১ পিস) কোথায় - সাধারণ সময়ে সদানন্দ রোড, কালীঘাটে। তপন থিয়েটারের কাছে। আপাতত পুজোর সময়ে নাকতলা শাখায়। দোকান খোলা - সাধারণ সময়ে দুপুর ১টা-রাত ১০.৩০। পুজোর সময় - দুপুর ১টা-রাত ১টা
কবিরাজি কাটলেট: চিকেন, মটন, ফিশ, প্রন- চার রকমের কবিরাজি কাটলেট-ই দারুণ সুস্বাদু ও মুখরোচক। এবং এই চার রকমারি কবিরাজি কাটলেটের-ই বহু পুরনো ঐতিহ্যবাহী দোকানটি উত্তর কলকাতার পাশাপাশি এখন দক্ষিণ কলকাতায় শাখা খুলেছে। দু’টি 'আউটলেটে'ই সমান দুর্ধর্ষ স্বাদু চার রকমের কবিরাজি কাটলেট মেলে, মটন, চিকেন, মাছ ও চিংড়ির কবিরাজি কাটলেট। দাম স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন। তবে মূল রেসিপি মোটামুটি এক। কবিরাজি কাটলেট মানেই তার ওপর ডিমভাজা গুঁড়োর মুখরোচক প্রলেপ অর্থাৎ 'কোটিং'। মুচমুচে, খাস্তা! সেরা পরিবেশনকারী - মিত্র ক্যাফে দাম (সব ১ পিস) - চিকেনের - ১৯৪ টাকা, মটনের - ২০৫ টাকা, ফিশ - ১৯৪ টাকা (ছোট সাইজ) ও ২৪৭ টাকা (বড় সাইজ), প্রন - ২৬৩ টাকা কোথায় - শ্যামবাজার। এ ছাড়া গোলপার্কে শাখা আছে। দোকান খোলা - শ্যামবাজার - দুপুর ৩টে-রাত ১০.৩০। গোলপার্ক - দুপুর ২টো-রাত ৯.৩০
কাঁটা চচ্চড়ি: মাছে-ভাতে বাঙালির এক্কেবারে পুরোদস্তুর নিজস্ব সাইড ডিশ। গরম গরম সাদা ভাত দিয়ে খেতে যে পদ অনবদ্য। আর কলকাতার যে ভাতের হোটেলে কাঁটা চচ্চড়ি বিখ্যাত, সেই দোকানের বয়েস ১০৯ বছর। বরাবরের একই পারিবারিক মালিকের চতুর্থ বংশধর এখন ব্যবসা সামলাচ্ছেন। একটু বেশি তেল-মশলা জাতীয় খাবার এটি। মূলতঃ বড় সাইজের কাতলা মাছের তেল-কাঁটা দিয়ে সরষের তেল-মশলার রেসিপি। সারা বছর পাওয়া যায়, তবে ঋতু বিচারে দামের তারতম্য ঘটে। সেরা পরিবেশনকারী - হোটেল তরুণ নিকেতন দাম - ৮০-১০০ টাকা (এক প্লেট) কোথায় - রাসবিহারী মোড়ে, 'মেলোডি'র পাশে। দোকান খোলা - সকাল ১০টা-রাত্রি ১১টা (মাঝে একঘন্টা বন্ধ - বিকেল ৫-৬টা)
চিংড়ির মালাইকারি: বাঙালি আমিষ মেন কোর্সের একটি অন্যতম ঐতিহ্যবাহী পদ চিংড়ির মালাইকারি। একটু মিষ্টি স্বাদের অসামান্য মুখরোচক এক সাইড ডিশ। যেটা সাদা ভাত, পোলাও, ফ্রায়েড রাইস- তিনটে দিয়েই মেখে খেতে সমান সুস্বাদু লাগে। কলকাতায় চিংড়ির মালাইকারির অন্যতম সেরা ঠিকানা যে বাঙালি রেস্তোরাঁ, সেখানে গলদা ও বাগদা, দু'প্রকারের চিংড়ির মালাইকারি পাওয়া যায় প্রতিদিন। এঁদের বিশেষত্ব নারকেলের দুধ দিয়ে মূলতঃ চিংড়ির মালাইকারি রান্না করা। সেরা পরিবেশনকারী - ভজহরি মান্না দাম - গলদা চিংড়ির মালাইকারি - ৩৬০ টাকা (এক প্লেটে ১ পিস) ও বাগদা চিংড়ির মালাইকারি - ২৮০ টাকা (এক প্লেটে ২ পিস)। কোথায় - বালিগঞ্জে একডালিয়া, হাজরা মোড়ের কাছে ও গড়িয়াহাটে ডোভার লেনে- ৩টে শাখা আছে। দোকান খোলা - (৩টে শাখাই) সকাল ১১.৩০-রাত ১০.৩০
চিকেন চাঁপ: বিরিয়ানির পরেই মোগলাই খানার সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ চিকেন চাপ। ঝাল-ঝাল, মশলাদার, গা-মাখামাখা গ্রেভির ভেতর এক পিস মোটামুটি বড়সড় 'চিকেন লেগ'। যেমন সুস্বাদু তেমনই মুখরোচক। কলকাতায় কোথায় না পাওয়া যায়! কিন্তু জিভে জল আনা চিকেন চাপের ঠিকানা সম্ভবত পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্টস-এ। মাঝরাতের পরেও পাবেন। বছরভর। সেরা পরিবেশনকারী - আরসালান দাম - ২৭২ টাকা (এক প্লেট) কোথায় - পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্টসের কাছে। দোকান খোলা - সকাল ১০টা থেকে রাত ১টা
বিরিয়ানি: বিরিয়ানিকে শুধু মোগলাই খানা বললে ভোজনরসিক বাঙালি রে-রে করে উঠতেই পারে। কলকাতার দুর্গাপুজো যেমন বিশ্বজনীন, বিরিয়ানিও তেমনই জাত-ধর্ম নির্বিশেষে বিশ্বজনীন। খিদিরপুর অঞ্চলে ৪৫ বছরেরও বেশি পুরনো এক রেস্তোরাঁর বিরিয়ানি জিভে জল আনার মতো সুস্বাদু। হাফ ডজনের বেশি বিভিন্ন রকমারি স্বাদের বিরিয়ানি সব সময় পাওয়া যাওয়াটা এদের বিশেষত্ব। মটন, চিকেন, স্পেশ্যাল, কাচ্চি, হান্ডি- কোনটা ছেড়ে কোন বিরিয়ানিটা খাবেন! দাম সাধারণ দোকানের তুলনায় বেশি হলেও খুব কিছু বেশি নয়। সেরা পরিবেশনকারী - ইন্ডিয়া রেস্টুরেন্ট দাম - (সব ১ প্লেট) সাধারণ মটন ও চিকেন বিরিয়ানি - ২৭০ টাকা, স্পেশ্যাল মটন ও চিকেন বিরিয়ানি - ৪০০ টাকা, কাচ্চি বিরিয়ানি - ৩২০ টাকা, হান্ডি বিরিয়ানি (২ জনের মতো) - ৫৩০ টাকা। কোথায় - খিদিরপুরে ফ্যান্সি মার্কেটের পাশে। দোকান খোলা - সকাল ১১টা-রাত ১১টা।
মটন কালিয়া: হাড় সহ ৫ পিস মোটামুটি বড় সাইজের মাংস থাকে এই পদটিতে। কলকাতায় যেখানে এই বাঙালি মেনুর সাইড ডিশ সম্ভবত সবচেয়ে সুস্বাদু এবং বিখ্যাত, তারা অবশ্য এটিকে বলে থাকে মাংসের ঝোল। এবং মহাপঞ্চমী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত পুজোর ক'দিন এটা আলাদাভাবে বিক্রির ব্যবস্থাও সেখানে থাকছে না। সাধারণ সময়ে যেমনটা পাওয়া যায়। পুজোর ওই ছ'দিন সেখানে থাকছে ১৩৯৫ টাকা প্লাস জিএসটি দামের বিশেষ বুফে। যার ১৫-১৬ রকমের রকমারি পদের মধ্যে অবশ্য অন্যতম থাকছে মটন কালিয়া ওরফে মাংসের ঝোল। সেরা পরিবেশনকারী - ওহ্ ক্যালকাটা দাম - ৭১৫ টাকা কোথায় - এলগিন রোডে। এছাড়াও শাখা আছে পার্ক সার্কাস-বাইপাস সংযোগস্থলের কাছে। দোকান খোলা - দুপুর ১২টা-বিকেল ৪টে, আবার সন্ধে ৭টা-রাত ১১টা। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।