‘হাতে নিয়ে ডেচকি…বিরিয়ানি কোর্মা, পটলের দোর্মা’এ গানের রেশ ছিল মনেই। ভজহরি মান্না মানেই হাতে জাদুদণ্ড। সেই জাদুতেই গানের রেশ ছড়িয়ে পড়ল উদরপূর্তিতে। পোলাও থেকে পাতুরি, বাখরখানি রুটি থেকে ঢাকাইয়া মাংস, ইলিশের বিরিয়ানি থেকে কাশ্মীরি মাংসের ঝোল। পছন্দের খাবারের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এই রেস্তরাঁ। আর পুজো মানেই শিকড়ের খোঁজ, মাটির টান। আরও এক বার পুরনোকে ফিরে দেখা। পুজো মানেই তাই পিৎজা-পাস্তার বদলে খাঁটি দেশীয় খাবার।পাইস হোটেল আসলে বাঙালি বা আম-জনতার কাছে বেশ প্রিয় এ কথা ভাল মতো বুঝেছিলেন পাঁচ বন্ধু। তাই ইস্তানবুল অথবা জাপান কাবুল নয়, বাংলার প্রতিটি শহর, মফঃস্বল ঘুরে বেরিয়ে রেস্তরাঁর সূচনা হয়েছিল খোদ কলকাতা শহরেই।
২০০৩ সালে আচমকা এই রেস্তরাঁর ভাবনা। রাজীব নিয়োগী, সিদ্ধার্থ বোস, রঞ্জিত দত্তগুপ্ত, সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং গৌতম ঘোষ। পাঁচ বন্ধু ভাবলেন, বাঙালি সনাতনী ঐতিহ্যবাহী রান্নাকে যদি এ বার রেস্তরাঁয় নিয়ে আসা যায়, সেই থেকেই শুরু। এর পর ১৭ বছর পেরিয়ে গিয়েছে, এ বছর রেস্তরাঁ পা রাখছে ১৮তম বর্ষে। ভজহরি মান্না ক্রেতাদের মন জয় করেছে ইতিমধ্যেই। এখানে ১৪টি শাখা রয়েছে ভজহরির। রয়েছে শিলিগুড়িতেও। তবে শুধু বাংলা নয়, বাংলার বাইরেও সমান সমাদৃত এই রেস্তরাঁ। পুরী, বেঙ্গালুরুতেও দিব্যি জনপ্রিয় এই রেস্তরাঁ।
লকডাউনের সময় একটা অন্য লড়াই গিয়েছে। তাই ভজহরি মান্নাতে ‘টেক অ্যাওয়ে সার্ভিস’-কে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উৎসবের আবহে আরও বেশি সতর্ক তাঁরা, জানালেন সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রতি বছরের পুজোর মতো এ বারেও বায়োডিগ্রেডেবল এবং ডিজপোজেবল থালা-বাটিই ব্যবহার করা হচ্ছে। করোনা আবহে ক্রেতাদের সুরক্ষা এবং কর্মীদের সুরক্ষার জন্য সবরকম বিধি মেনেই চলছেন তাঁরা। সামাজিক দূরত্ব বিধি মিনে রেস্তরাঁয় বসানোর ব্যবস্থাও রেখেছেন কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: কেকে’স ফিউশনের প্যান রোস্টেড চিকেন উইদ সতে ভেজিটেবল
জিভে জল আনা নান আর মাংস।
ইলিশ কিংবা কোচবিহারের চিকেন বিরিয়ানি, সরপুরিয়া কিংবা নতুন গুড়ের আইসক্রিম খেতে হলেও কিন্ত ভজহরি মান্নার দ্বারস্থ হতেই হয়। চাইলেই বাড়িতে বসেও খেতে পারবেন। ইলিশের নানা পদের সম্ভার তো রয়েইছে। তা বলে ভাববেন না, চিংড়ি-কাঁকড়ারা পিছিয়ে থাকবে, ডাব চিংড়ি বাদেও মোচা চিংড়ি কিংবা চিংড়ির পাতুরির সঙ্গে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত। সঙ্গে একটু লেবু লঙ্কা মুরগি অথবা বাটার/গার্লিক/পিপার ক্র্যাব।
এত গেল সারা বছরের কথা। তবে পুজোর কয়েক দিন ভজহরির বৈশিষ্ট বিশেষ থালি।থালি মানে দুই রকমের মাছ, পাঠাঁর মাংস, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মোচা কিংবা ছানার কোফতা বা ফুলকপি, থাকবে চাটনি-মিষ্টিও। ভজহরি স্পেশাল রুই, পাবদা বা চিংড়ি সবই থাকবে অদল-বদল করে। সারা বছরের মতোই ক্রেতাদের বিশেষ ডাব চিংড়ি তো আছেই। পাঁঠার মাংস মানে বাঙালির প্রিয় মাটনও মিলবে পুজোর দিনগুলিতে। জাগরণী, আনন্দময়ী, অদ্বিতীয়া, অপরাজিতা চার দিনের থালির নাম রাখা হয়েছে এমনই।
নিরামিষে আছে সবজির কোর্মা।
সিদ্ধার্থবাবু বলেন,‘‘প্রতি দিন আলাদা, প্রতি দিন থালি, বাঙালির কথা ভেবে ১৮ বছর ধরে, এটাই ভজহরি।’’ ইলিশ বরিশালি কিংবা মাটন কোর্মা, কষা মাংস কিংবা জাম্বো চিংড়ির মালাইকারি মিলবে পুজোর দিনেও। কোনও দিন রাবড়ি, কোনওদিন ক্ষীরকদম, শেষ পাতেও মিষ্টি মুখ রয়েছে ভজহরিতে।
পরের বছর যাতে আরও ভাল ভাবে সবাই পুজোয় আনন্দ করতে পারেন। তাই এ বছর সব রকম নিয়ম মেনে, সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই ভজহরি ক্রেতাদের জন্য নানা রকমের পদ পরিবেশন করছে। ভজহরি মান্না ডট কম সাইটের মাধ্যমেও অর্ডার দেওয়া যাবে। অর্ডার দেওয়া যাবে সুইগি বা জোম্যাটো অ্যাপের মাধ্যমেও।
চেখে দেখতে পারেন ভজহরি স্পেশাল ডাব-চিংড়ি।
সিদ্ধার্থবাবুর কথায়, ‘‘প্রতিটি শাখায় প্রতিটি পদ যাতে একই রকম স্বাদু হয়। একই ভাবে ক্রেতাদের মন জয় করতে পারে, সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতি মুহূর্তে ক্রেতাদের রসনার কথা মাথায় রেখেই নানা পদের আয়োজন করেছে এই রেস্তরাঁ।কলকাতার খাঁটি ভেটকি ছাড়া তাই কোনওরকম মাছ ব্যবহার করা হয় না এখানকার পাতুরিতেও।’’
আরও পড়ুন: দেশীয় ফিউশনে ‘এডিবল আর্ট’, পছন্দের নিরামিষ খেতে আসতেই হবে ‘গ্রেস’-এ
পুজোর সময় বাড়িতে রান্না করতে কারই বা ভাল লাগে, তাই খাঁটি দেশীয় রান্না ঘরে বসেই অর্ডার করতে পারেন। বাড়িতে মন না টিকলে হিন্দুস্তান রোড, হাতিবাগান অথবা নাগের বাজার-সহ একাধিক শাখাতে গিয়ে কব্জি ডুবিয়ে খেতেই পারেন। পুজোর আগে নিউটাউন ডিএলএফের কাছেও আরও একটি শাখা খুলতে চলেছে ভজহরির। স্মার্ট সিটির বাসিন্দারা সেখানেই পেয়ে যাবেন পছন্দের পদ। পুজোর সময় কলকাতার বাসিন্দারা বাড়িতে বসেই পাবেন পছন্দের যে কোনও প্রিয় থালি।শুধু অর্ডারের অপেক্ষা।