কোনও গুণ বেগুনের নেই, এমন কথাটা শুনলেও বিশ্বাস করবেন না। প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম সবই আছে। যদিও ফ্যাট নৈব নৈব চ। ভিটামিনের বেলাতেও এ আর সি রয়েছে এই সব্জিতে। বেগুনের মৌরসীপাট্টা আমাদের ভারতে দীর্ঘ দিন বহাল। ভারতের সমস্ত প্রদশে বেগুন হওয়ার ফলে তেঁতুল টু ইলিশ সবেতেই সে সওয়ার হয়েছে। কাশ্মীরে বেগুন শুঁটকি অবধি খেতে দেখেছি। কাশীর বিশাল আকারের বেগুন নিয়ে অল্পবিস্তর নস্টালজিয়া আমাদের সকলেরই আছে।
ইউপির অন্যান্য বেগুনও খুব ভাল, ব্ল্যাকবিউটি, সম্রাট, ঋতুরাজ বা আজাদ ক্রান্তি চট করে রাজ্যের বাইরে পাঠাতে চান না গোবলয়ের লোকজন। একদা হাতি বিশেষজ্ঞ ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরীর লন্ডনের ইন্ডিয়ান ভিসা বাড়ানোর পিছনে যে বেগুনের অবদান ছিল— সেই মুক্তকেশী বেগুন এখনও পাওয়া যায় বিহার ও বিহার সংলগ্ন বাংলায়। তার কাছাকাছি বেগুন ইদানীং বাজারে আসে রং কালো তালের মতো, শুনেছি তা হয় দামোদরের চরে। মাকড়া, আকারে ছোট কুলি ও লম্বাটে গড়িয়া বেগুনের আমরা রোজই দেখা পাই নিকটবর্তী বাজারে। দামোদরের পাই না। বছরে তিন বার চাষ হয় সাধারণত নানা জাতের বেগুন তাই ফলে সারা বছরই। কিন্তু কালো, বড় গোলাকৃতি বেগুন পেতে অপেক্ষা করে থাকতেই হয় পুজোর। এসেছে শরৎ হিমের পরশ লেগেছে বেগুনের পরে!
বড় গোল বেগুন দেখলেই যদি আপনাদের বেগুন পোড়া খেতে ইচ্ছে হয়, তা হলে এতে একটু নতুনত্বের স্বাদ আনা যেতে পারে। বেগুনের ভিতরে মাছের স্টাফিং করে পোড়ানো যাবে। কাজেই সুতো দিয়ে পেঁচানো যাবে না বোঝাই যাচ্ছে। সাধারণত কাঠের টুথপিক গুঁজে খণ্ডদু’টি আটকে পোড়ানো হয়। অনেকে তেলে ভেজে ফেলেন স্টাফড বেগুন, কিন্তু পোড়ার স্বাদ হয় অনেক গুণ বেশি।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ-রসুন ছাড়াই বানিয়ে ফেলুন এই কাশ্মীরি মাটন রেসিপি!
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
প্রণালী
কাতলা মাছের পেটি ভাল করে ধুয়ে নুন ও হলুদ মাখিয়ে সেদ্ধ করে ফেলুন। প্রতিটা বেগুনের ঠিক মাঝামাঝি চিরতে হবে, কিন্তু পুরোটা চেরা যাবে না, এতে পোকা থাকলে বুঝতে পারবেন। চেরা বেগুনের দুই পাশেই চামচে করে খাবলা করে স্টাফিংয়ের জায়গা করতে হবে আমাদের। চারটে বেগুন রেডি হয়ে গেলে সামান্য নুন ও এক চামচ তেল ভাল করে চার পাশে ও ভিতরে মাখিয়ে রাখুন।
সেদ্ধ মাছগুলি থেকে কাঁটা বেছে রাখব কিন্তু ফেলে দেব না। কাতলা মাছের পেটির পিসের কাঁটা বেশ বড় বড় হয়। বেগুন যে আমরা দুই ফালা করে রেখেছি সেগুলো এই কাঁটা দিয়েই আটকাব। সেদ্ধ মাছ ভাল করে চটকে সামান্য নুন, পেঁয়াজ কুচি (খুব ছোট ছোট), টম্যাটো কুচি (ছোট), কাঁচা লঙ্কা কুচি, সর্ষে বাটা ও তেল দিয়ে মেখে ফেলব। প্রতিটা বেগুনের মধ্যে যে দুইখানা করে গর্ত করা হয়েছে তার মধ্যে ভরে ফেলব এই মাছের পুর। স্টাফিং করার সময় খেয়াল রাখব গর্ত যেন প্রয়োজনের থেকে বেশি না ভরাট হয়ে যায়। এই বার দুই ফালি বেগুন গর্তের চারপাশ দিয়ে ছয়টি করে কাঁটা দিয়ে আটকে ফেলব। এই বার সরাসরি আগুনে পোড়ানোর পালা। গ্যাস, কয়লার আগুনে সরাসরি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পোড়াতে একেকটি বেগুনের দশ মিনিট সময় লাগবে।
আরও পড়ুন: ‘আবার বৈঠক’-এর মগনলালের ঘরে উঁকি দেবেন নাকি! রইল পুজোর মেনু, রেসিপিও!
পরিবেশন খোসা সুদ্ধ করলেও পাতে দেওয়ার আগে খোসা তুলে ফেলুন, অন্তত খাওয়ার আগে। পোড়া যদি উত্তম রূপে হয়ে থাকে তবে খোসা টানলে সহজে উঠে আসে। খাওয়ার সময় কাঁটা বেছে খুলে নিতে হবে বেগুনের অংশ। এ বারের উৎসবে আপনার জন্য নতুন হয়ে উঠতে পারে অন্ধ্র স্টাইলের এই রান্না— যার সাবেকি নাম ‘গুট্টিভেঙ্কায়া কোড়া’। এত দিন অন্ধ্র মাছ খাইয়েছে আমাদের, এ বার না হয় আমাদের দামোদরের পেটেও যাক সেই মাছ।