গতকালই চলে গিয়েছে ১ নভেম্বর। যে তারিখটা ভিগানরা প্রতি বছর পালন করেন ‘বিশ্ব ভিগান দিবস’ হিসেবে। কিন্তু এই ‘ভিগান’ বস্তুটি ঠিক কি? শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে খাবার এবং খাদ্যাভ্যাস।
ভিগান খাবার যাঁরা খান, তাঁরা এক কথায় কট্টর নিরামিষাশী তো বটেই, সঙ্গে আরও কিছু। এঁরা ডিম, দুগ্ধজাত খাবার, মধু ইত্যাদি খান না। মানে কোনও প্রাণীজাত খাদ্যও এঁরা পাতে নেন না। সম্পূর্ণ শাকাহারী। মূলত শাকসবজি, ফলমূল জাতীয় খাদ্য থাকে এঁদের দৈনন্দিনের খাদ্যতালিকায়।
বিশ্ব জুড়ে ভিগানদের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই বেড়েছে ৬০০ শতাংশ, গ্রেট ব্রিটেনে ৪০০ শতাংশ! এই তালিকায় আছেন বিখ্যাতদের অনেকে। যেমন, বিরাট কোহলি, লিওনেল মেসি, নোভাক জোকোভিচ, লুইস হ্যামিল্টনের প্রবাদপ্রতিম সব খেলোয়াড়। সব মিলিয়ে বিশ্ব জুড়ে ভিগান ব্যবসা হু হু করে বাড়ছে। কলকাতাতেও গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ভিগান রেস্তোরাঁ। তার থেকে বাছাই এগারোটির খোঁজ এই লেখায়।
১. উবুন্টু ইট - ‘অ্যায়াম বিকজ উই আর’-এর অপভ্রংশ থেকে এই রেস্তোরাঁর এমন অভিনব নাম! এদের ‘মক মিট’ বা নকল মাংসের পদগুলি দুরন্ত। এমনকি তা দিয়ে নকল কষা মাংস, নকল মটন বিরিয়ানি তৈরি হয়। ‘মক মিট’ হল, ভিগান খাদ্যবস্তু দিয়ে তৈরি হুবহু মটনের স্বাদ ও জিভে তার অনুভূতি আনা এক ভিগান খাবার। দু’জনের খাবার খরচ - ৮০০ টাকা। কোথায় - নিউ আলিপুরে হিন্দুস্তান সুইটসের কাছে। দোকান খোলা - সকাল ১২.৩০-রাত ১০.৩০।
২. আর্বান মশালা - সম্পূর্ণ ভেজিটেরিয়ান রেস্তোরাঁ। গ্রাহকদের অনুরোধে এরা ভিগান পদও পরিবেশন করে। তবে আগে অর্ডার দিতে হবে। ভিগান কন্টিনেন্টাল পদ এদের উল্লেখযোগ্য। চিলি বেবি কর্ন দুর্দান্ত মুখরোচক। দু’জনের খাবার খরচ - ৭০০ টাকা। কোথায় - লেক টাউনে জয়া সিনেমা হলের কাছে। দোকান খোলা - দুপুর ১২টা-রাত ২টো।
৩. বর্মা বর্মা - এদের রেস্তোরাঁ দেশের সব বড় শহরে পাবেন। এই ভেজিটেরিয়ান রেস্তোরাঁতেও আগাম অর্ডারের ভিত্তিতে দারুণ সব মুখরোচক ভেগান পদ পরিবেশিত হয়। এখানকার গ্রিলড্ কাঁঠাল স্যালাড, চা-পাতার স্যালাড ভেগানমিষাশীদের কাছে দুর্দান্ত জনপ্রিয়। দু’জনের খাবার খরচ - ১৫০০ টাকা। কোথায় - পার্ক স্ট্রিটে, স্টিফেন কোর্টের কাছে। দোকান খোলা - দুপুর ১২.৩০-বিকেল ৪টে ও সন্ধে ৬.৩০-রাত ১০.৩০। শনি-রবি বেলা ১২টায় খোলা।
৪. ফ্লাই কোজিনা - এক অভিনব থিম রেস্তোরা! এরোপ্লেন, মাইনিং, সাবমেরিন-এর থিমে সজ্জিত। এখানকার নিরামিষ খাবারে ঘি-মাখন-ক্রিম দিতে বারণ করতে হবে আপনাকেই। তা হলে এরা ভিগান পদ পরিবেশন করে থাকে। দু’জনের খাবার খরচ - ১০০০ টাকা। কোথায় - সল্ট লেক সেক্টর-১, বিডি মার্কেট স্টপেজের কাছে। দোকান খোলা - বেলা ১২টা- রাত ১১টা।
৫. দ্য ডেইলি ক্যাফে - খুব স্বল্পই ভিগান পদ এখানে মেলে। তবে তার মধ্যেও এদের ভিগান মিষ্টি, কিয়োটো স্যালাড ও থেঁতো করা ছোলা থেকে মূলত তৈরি হম্মুস ভীষণ জনপ্রিয় ভিগান-প্রিয় মানুষজনের কাছে। দু’জনের খাবার খরচ - ৮০০-১০০০ টাকা। কোথায় - দেশপ্রিয় পার্কের কাছে সত্যেন দত্ত রোডে। দোকান খোলা - বেলা ১২টা-রাত ১১.৩০।
৬. ফ্যাব ক্যাফে - এখানে নানান ভিগান পদের ভিতর বিশেষ করে ভিগান আমন্ড ক্রাঞ্চ, ভিগান এসপ্রেসো কেক অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। দুজনের খাবার খরচ - ১০০০ টাকা। কোথায় - লাউডন স্ট্রিটে, পার্ক স্ট্রিটের কাছাকাছি। দোকান খোলা - সকাল ১০টা-রাত ১০টা।
৭. ফর্ক স্ট্রাক - আগাম অর্ডার দিলে এরা যত্ন সহকারে ভিগান বার্গার, কাঁঠালের প্যাটি বার্গার পরিবেশন করে থাকে। ভিগান স্যান্ডুইচ-পিৎজা-পাস্তাও পাবেন এখানে। খাবার খরচ - জনপ্রতি ৪০০ টাকা। কোথায় - নিউ আলিপুরে, সাহাপুরের কাছে। দোকান খোলা - দুপুর ২টো-রাত ১২টা। সোমবার বন্ধ।
৮. পিটার হুঁ? শহরের এক জনপ্রিয় ভিগান খাবারের রেস্তোরাঁ। এখানকার ভেগান নুডলস, স্যুপ, স্যালাড দারুণ সুস্বাদু। খরচ একটু বেশি। দু’জনের খাবার খরচ - ১৩০০ টাকা। কোথায় - পার্ক স্ট্রিটে। দোকান খোলা - বেলা ১২টা-রাত ১০.৩০।
৯. দ্য চাটনি কোং - দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের রেস্তোরাঁ। আগাম অর্ডার দিলে মাখন-ঘি-ক্রিম ছাড়া নানা ভেগান দক্ষিণী পদও রান্না করে পরিবেশন করে এরা। তার মধ্যে ভিগান রাওয়া অনিয়ন ধোসা এখানে ভীষণ সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। খাবার খরচ - মাথাপিছু ২০০-৪০০ টাকা। কোথায় – ডালহৌসিতে। দোকান খোলা - দুপুর ১২টা-রাত ১০টা। রবিবার সকাল ১০টায় খোলে।
১০. দ্য ফ্যাটি বাও - এখানে 'ভেগানাইজড্' নুডলস থেকে শুরু করে স্টিমড্ রাইস, নানান সবজির ‘কারি’, ‘গ্রেভি’ পাবেন। খরচা অবশ্য খানিকটা বেশি। দু’জনের খাবার খরচ - ১৫০০ টাকা। কোথায় - ক্যামাক স্ট্রিটে, ফোর্ট নক্স বিল্ডিংয়ে। দোকান খোলা - দুপুর ১২টা-রাত ১২টা।
১১. দ্য ফ্লেমিং বোল - এখানে ভেগান নুডলস্, ভাত, নানা সবজির ডিশ্ ছাড়াও কিছু বিশেষ কন্টিনেন্টাল ভিগান পদ পাওয়া যায় খেতে। এদের ভিগান চকোলেট সিগার রোল দারুণ সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। এখানে ভিগান কাঠিরোল-ও মেলে। দুজনের খাবার খরচ - ১০০০-১২০০ টাকা। কোথায় - ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জি রোডে। দোকান খোলা - দুপুর ১২টা-রাত ১১.৩০। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।