মনে পড়ে 'রকি অওর রানি কি প্রেম কহানি'র রানিকে? খয়েরি শ্যাডো বেসের সঙ্গে হালকা কাজলের উষ্ণ মৌতাত, একই সঙ্গে বুদ্ধিদীপ্ত ও মোহময়ী করে তুলেছিল আলিয়াকে। প্রেম, কামনা, অভিমান, অভিযোগের বেশিরভাগ সংলাপ তো চোখেই ভেসে ওঠে। আর তা যদি হয় নারীর চোখ, তবে তো কথাই নেই।
চোখ নিয়ে কথা বললেই প্রথম মাথায় আসে, আই মেক-আপের প্রসঙ্গ। যা বেশিরভাগ সময়ই বেশ বিপদে ফেলে। চোখের আকৃতি বুঝে তাকে সাজিয়ে তোলা, সে কি কম ঝক্কি! সামনেই পুজো। আপনার চাহনির উষ্ণতা যাতে শরতেও বসন্ত নিয়ে আসে, রইল তেমন কিছু টিপস।
১. মেদবহুল চোখের সাজ: বলিউড থেকে টলিউড, মেদবহুল চোখের ছড়াছড়ি। আলিয়া ভট্ট কিংবা প্রিয়াংকা চোপড়ার মোহময়ী চোখও এই গোত্রেরই। সাধারণত এ-ধরনের চোখে মেক-আপের ক্ষেত্রে ভিত্তি (বেস) হিসেবে কোনও গাঢ় রং বেছে নেওয়া জরুরি। তারপর ত্বকের রং অনুযায়ী একটি আইশ্যাডোর প্রলেপ মায়াবী করে তুলতে পারে আপনার চোখ। এর উপর ফক্সি ভঙ্গিমার আইলাইনার বা কাজল ব্যবহার করতে পারেন। চোখের দু'কোণে সামান্য হাইলাইটারের ব্যবহার, সাজে এক অন্য মাত্রা দেবে।
২. গোলাকৃতি চোখের সাজ: দীপিকা পাডুকোনের গোলাকৃতি চোখের নেশায় বুঁদ আট থেকে আশি। নিজের চক্ষুসজ্জায় সেই জাদু আনতে বেছে নিন সাহসী চোখের সাজ। বাদামি রঙের আইশ্যাডোর উপর বিড়াল শৈলী (ক্যাট স্টাইল) আই লাইনারের টান, উত্তেজনা তৈরি করতে পারে চারপাশে। গম রঙা ত্বক হলে, পিচ আইশ্যাডোর সঙ্গে সাহসী ভঙ্গিমায় কাজল পরতে পারেন।
৩. কাঠবাদামী চোখের সাজ: কঙ্কনা সেন শর্মার টানা টানা কাঠাবাদামী চোখের দৃষ্টি, অনেক পুরুষের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। যাদের কাঠাবাদামী চোখ, ধোঁয়াটে (স্মোকি আই) চক্ষুসজ্জার সঙ্গে পাখির ডানার মতো আইলাইনের যুগলবন্দি উত্তাপ ছড়াতে পারে তাদের চৌহদ্দিতে। তবে ন্যুড আইশ্যাডোর সঙ্গে, চোখের পাপড়িতে হালকা মাস্কারাও, এসব চোখে বেশ মানানসই।
৪. ছোট চোখের সাজ: শ্রদ্ধা কাপুরের মতো মায়াবী চোখ চান? এসব ক্ষেত্রে একটি গাঢ় রঙের শ্যাডো-বেস তৈরি করে তার উপর চোখের কোণ থেকে পাখির ডানার মতো আইলাইনারের টান বেশ ধারালো করে তুলতে পারে আপনাকে।
৫. বাদামী মণিবিশিষ্ট চোখের সাজ: কিয়ারা আডবাণীর চোখের ওম যাদের মুগ্ধ করে, তারা বেছে নিতে পারেন একটি ন্যুড রঙের আই শ্যাডো। এরপর বোল্ড মাস্কারা দিয়ে সাজিয়ে তুলুন চোখের পাপড়ি। ঠোঁট কিন্তু ন্যুড রাখতে ভুলবেন না।
৬. বিড়ালি চোখের সাজ: করিনা কপুরের মণির রঙে মজে আছেন অনেকেই। এ-ধরনের চোখের ক্ষেত্রে সোনালি আইশ্যাডো আপনার সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তার সঙ্গে গাঢ় কাজলের ছোঁওয়া পালটে দেবে আপনার চোখের ভাষা।
৭.নীলাভ-সবুজ মণিবিশিষ্ট চোখের সাজ: ঐশ্বর্য রাই-এর নীলাভ-সবুজ মণি বহু পুরুষের বুকেই আগুন ধরায়। এসব চোখের সাজে ধোঁয়াটে আই মেক-আপের বিকল্প নেই। এমন চোখের যাঁদের, স্বচ্ছন্দে বেছে নিন স্মোকি আই-লুক।
৮. ভাষা-ভাষা চোখের সাজ: গাঙ্গুবাইকে মনে আছে আপামর দর্শকের। ছবিতে তাঁর প্রতিটি বয়সের আই মেক-আপ যেন কিছু বার্তা দিয়ে যায়। যুবতি গাঙ্গু আর প্রৌঢ় গাঙ্গুবাঈ-এর হালকা ও গাঢ় কাজলের পার্থক্য বুঝে নিতে পারলেই, অর্থপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে আপনার দৃষ্টি। চোখের আকৃতি ও মনের পরিপক্কতা অনুযায়ী প্রয়োগ করুন কাজল।
৯. চোখের মণির অবস্থানে সমস্যা থাকলে: মণির অবস্থানগত সমস্যা (স্কুইন্টি আই) থাকলে, সে সব চোখের সাজও চোখের আকৃতির ওপরেই নির্ভর করে। ফলে এখানে আলাদা করে কিছু বলার নেই। ঠিকঠাক মণিওয়ালা চোখের যেমন গড়ন, রং ইত্যাদি মাথায় রেখে চোখ সাজাতে লাগে, এখানেও তাই।
১০. ছক ভাঙা চক্ষুসজ্জা: আর প্রথা ভাঙতে চাইলে দিব্যি বেছে নিতে পারেন লাল-কমলা-হলুদ কিংবা নীল রঙের আইলাইনার। ঋতুপর্ণ ঘোষ 'গানের ওপারে'র পুপেকে সাজিয়ে তুলেছিলেন সামান্য একটি কাজল আর কয়েকটি আঙুলের স্পর্শে। তেমনই, অনেক সময় অভিধান ভাঙলেও এমন কিছু সৃষ্টি হতে পারে, যা আপনাকে পৌঁছে দেবে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। তাই অষ্টমীর অঞ্জলিই হোক বা নবমীর সান্ধ্য-আড্ডা, নিজের পছন্দ মতো চোখের সাজ বেছে নিয়ে হয়ে উঠুন অনন্যা।
১১. সাধু সাবধান! চোখে কোনও রকম সংক্রমণ থাকলে মেক-আপ অবশ্যই এড়িয়ে চলুন। সাজের পাশাপাশি চোখের স্বাস্থ্যের দিকটিও নজরে রাখুন। নিয়মিত চোখ পরিষ্কার করে আইক্রিম লাগাতে ভুলবেন না।