পুজোর সাজে ধীরে ধীরে উচ্ছ্বাসের মাত্রা চড়ানোর কথা মাথায় রেখে প্ল্যান করুন পুজো সাজের।
পোশাকের রঙ হবে হাল্কা থেকে গাঢ়র দিকে। রঙ বাছাই করার ক্ষেত্রে এখন সুযোগ অনেক। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন। মহিলারা এই দিন বেছে নিন প্লেন অফ-হোয়াইট বেসের লাল বা লালের কোনো শেডের পাড়ওয়ালা শাড়ি, হোক না তা মেরুন, ম্যাজেন্টা, কমলা বা রানি রঙ। সঙ্গে প্রিন্টেড ব্লাউজ আনবে অন্য মাত্রা। সঙ্গে মানানসই ন্যুড মেক আপ, টিপ আর হাল্কা গয়না। সব মিলে এইদিন সাজের সুর হবে মৃদু।
সপ্তমীতে কলাবউ স্নান। এইদিন বেছে নিন সুতির শাড়ি। রঙ হোক বেজ, হাল্কা ইয়েলো, লেমন ইয়েলো বা কচি কলাপাতা, গোলাপি, হাল্কা কমলা এইসব। আর মেক আপ বা গয়না যেন ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে না যায়।
এরপর আসে বহু প্রতীক্ষিত অষ্টমী তিথি। আজ সাজ হবে জমকালো, চমকপ্রদ হয়ে ওঠার জন্য সব বাঙালি নারী পুরুষই এইদিন অপেক্ষা করে থাকেন। এইদিনের জন্য তুলে ধরুন বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঁথা শাড়িকে, ঐতিহ্য আর আধুনিকতা মিশবে আপনার শরীরে।
উজ্জ্বল আবীর রঙা লাল, বা কমলায়, বা লাল-সাদায় শুরু হোক সকালটা। ঠাসা কাঁথা কাজের শাড়ি, তা সে সুতিরই হল বা। আর অষ্টমীর রাতে সাজতে পারেন ফিউশনে। এ বার যেমন আমার ডিজাইনার স্টোর সেরেনিটিতে কাঁথা শাড়িতে তসর প্রিন্ট, বা কাঁথা বা ভারী কাঁথা কাজের সাথে মিরর ওয়র্কের শাড়ি। উৎসবে মাতোয়ারা হবার এই তো চরম মুহুর্ত। আর কাঁথার নিজস্ব এক বৈশিষ্ট্য থাকায় তার সঙ্গে চলতে পারে পছন্দমতো যে কোনও গয়না।
এবার আসা যাক নবমীর পালায়। চূড়ান্ত আনন্দ, একটু বিষাদ-সবে মিলে আজ শাড়ির রঙ হোক গাঢ়। কালো, গাঢ় নীল, নেভি ব্লু, গাঢ় ম্যাজেন্টা, ঘন মেরুন এইসব। এম্ব্রয়ডার্ড সিল্ক বা লিনেন বা মটকাতে বোনা ঢাকাই জামদানি মন কাড়তে পারে। এইসব ধরনের শাড়ি লাইট ওয়েট কিন্তু জমকালো।
দশমীর সাজ আবার হোক হাল্কা মাত্রার। সিঁদুর খেলায় যোগ দিন হাল্কা ইঞ্চি পাড় শাড়িতে। অথবা বেছে নিতে পারেন সেরেনিটি স্পেশাল ব্লক-প্রিন্টেড ধুতি শাড়ি।
পুরুষদের কথায় আসি এবার। তারা আজকাল সাজগোজ নিয়ে বেশ সচেতন। ভাবনা-চিন্তা করেন এ নিয়ে।
ষষ্ঠী সপ্তমীতে চলতে পারে কলকাতার রিকশাওয়ালা, পদ্ম মোটিফ, পশুপাখি, জিওমেট্রিক ডিজাইন ইত্যাদি মোটিফের প্রিন্টেড শার্ট। বন্ধুদের সাথে হ্যাং-আউট জমে যাবে একেবারে। আর ট্র্যাডিশনাল সাজে সাজতে চাইলে ষষ্ঠী বা সপ্তমীতে বেছে নিন সাদা, অফ হোয়াইট, হলদে বা বেজ রঙের হাল্কা কুর্তা। তার বোতামটায় কিন্তু থাকবে একটু বিশেষত্ব, ডিজাইনার বাটনে আলাদা একটা মাত্রা আসবে সাজে।
অষ্টমীর দিন কিন্তু ছেলেদের পছন্দের পোশাক ধুতি, সে তারা পরতে পারুন বা না পারুন। অষ্টমীর সকালে সুতির ইক্কত অথবা কাঁথা কাজের পঞ্জাবির সাথে ব্লক প্রিন্টেড ধুতি কিন্তু দারুণ লাগবে। বা পাঞ্জাবি প্লেন হলেও কাটটা একটু হোক অন্যরকম, সঙ্গে পদ্ম বা জিওমেট্রিক মোটিফের ব্লক-প্রিন্টেড বা গোল্ড-প্রিন্টেড ধুতি। অষ্টমীর সন্ধ্যায় পুরুষের পোশাক হিসেবে আমি বলব জামদানির পাঞ্জাবি— সম্পূর্ণ অন্যরকম, নতুন লুক। জমিদারী কায়দায় আঙরাখা অর্থাৎ নট বাঁধা পঞ্জাবি। সঙ্গে চওড়া পাড়ে্র কাঁথার ধুতি। লাল পাইপিং দেওয়া সাদা জামদানীর পাঞ্জাবি, সঙ্গে কাঁথা কাজের ধুতি – অষ্টমীর সন্ধ্যা জমে যাবে একদম। নবমীতে ছেলেদের পছন্দের রঙ কালো। আমার মনে হয় ছেলেরা এইদিনের জন্য বাছতে পারেন বাদামী, বা জাম রঙ, বা মরচে রঙও কিন্তু লাগবে বেশ। রয়্যাল ব্লুও চলতে পারে। হাল্কা এম্ব্রয়ডারি করা পঞ্জাবি, বা অন্য ধরনের কাটের পঞ্জাবি পড়ু্ন ছেলেরা, যেমন অ্যাসিমেট্রিকাল কাটের পঞ্জাবি। এখন সকলেই এই ধরণের কাট পছন্দ করেন। দশমী। পুজো শেষ। সাজ হোক প্লেন পাঞ্জাবি
আর প্লেন ইঞ্চি পাড়ের ধুতি।
কোনও হিড়িকে চলবেন না, সাজগোজের ক্ষেত্রে আসল কথা কমফর্ট। নিজস্বতাকে মাথায় রাখুন। নিজেকে ক্যারি করতে পারাই সবচেয়ে বড় কথা। বাচ্চাদেরকেও সে ধরনের পোশাকই পরান, যাতে তারা স্বাভাবিক ভাবে খেলায় মাততে পারে।
সকলে মেতে উঠুন বহু প্রতীক্ষিত উৎসবে।