দুর্গাপুজো মানেই শাড়ি। অষ্টমীর অঞ্জলি হোক বা বিজয়ার সিঁদুর খেলা, বঙ্গ তনয়ার অঙ্গে নানা রঙের শাড়ি না উঠলে উৎসবের রং ফিকেই থেকে যায়। বাঙালি নারীর পরনের শাড়ির আবেদন বছর বছর নতুন রূপে ধরা দিয়েছে। এই পুজোই বা পিছিয়ে পড়বে কেন? কিন্তু রকমারি সিল্ক থেকে ঢাকাই জামদানি— বিপুল সম্ভার থেকে নিজের জন্য কী করে বাছবেন মানানসই শাড়িটি?
পুজোর ক’দিন কলকাতা বৃষ্টিতে ভাসবে না শুকনোই থাকবে, তা নিয়ে প্রতি বছরই উদ্বেগ থাকে। বৃষ্টি যদি নাও হয়, হাওয়ায় ভ্যাপসা ভাব থাকেই। তাই সুতির শাড়ি এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী নির্বাচন। বাঙালিদের তো আছেই নিজস্ব জামদানি। ছোট্ট টিপের সঙ্গে জামদানি শাড়ি— ছিমছাম সাজেও মাতিয়ে দিতে পারেন পুজো মণ্ডপ। সাদার উপর এক রঙের অথবা বিভিন্ন রঙের নকশাকরা ঢাকাইয়ের সঙ্গে পরতে পারেন রুপোর গয়না।
হাল্কা শাড়িতেই নিজের রূপ ফুটিয়ে তুলতে চাইলে ভরসা রাখা যায় বাংলার তাঁতেও। জামদানি বুটি দেওয়া একরঙা সাজ বেছে নেওয়া যায় ষষ্ঠী বা সপ্তমীর দিন সকালের জন্য।
গুজরাতের কচ্ছ জেলার ভুজ এলাকারশিল্প হল কচ্ছি শাড়ি। সাদার উপর সুতির কচ্ছি শাড়ির সঙ্গে ওড়িশার কোটপাড়ের আদিবাসীদের নকশা করা চাদরে পুজোর সান্ধ্যসাজে আনা যায় মায়াবী চমক।
গরম থাক বা বৃষ্টি, তার মধ্যেই সপ্তমী বা অষ্টমীর সন্ধ্যায় একটু জমকালো সাজ না হলে চলে না। এ ক্ষেত্রে সিল্কের চেয়ে ভাল নির্বাচন আর কীই বা আছে? এই পুজোয় বিভিন্ন প্রদেশের সিল্ক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেন, যেমন গুজরাতের পাটোলা, মহারাষ্ট্রের পৈথানি অথবা ওড়িশার বোমকাই।
ভরসা রাখতে পারেন চিরাচরিত কাঞ্জিভরম সিল্কে। যে কোনও অনুষ্ঠান বা উৎসবে কা়ঞ্জিভরমের আবেদন চিরন্তন। তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরা জেলার এই সিল্ক দক্ষিণ ভারতের প্রায় সব বিবাহ বাসরেই নতুন বউয়ের পরিধেয় বস্ত্র। কঙ্গনা রানাউত আবার ২০১৯-এর কান চলচ্চিত্র উৎসবেও এই শাড়ি পরেছিলেন। আপনিই বা বাদ থাকেন কেন?
চওড়া পাড়ের সিল্ক বাছতে পারেন। শাড়ির জমিও পাড়ের রং আলাদা হলে সাজ আরও ভাল ফুটে উঠবে। যেমন এই শাড়িটি। এখানে সবুজ ও গোলাপি রঙের সহাবস্থানে ছিমছাম সাজ ও নকশার মধ্যেও এক আভিজাত্য এসেছে। এ ধরনের শাড়ির সৌন্দর্য আঁচল ছেড়ে পরলে সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায়। সঙ্গে কানে ও হাতে জমকালো গয়না পরতে পারেন।
একাধিক রং না চাইলে একরঙা শাড়িও বাছতে পারেন। এখানে এই বেঙ্গালুরু সিল্কের শাড়িটির হলুদ রং এবং জড়ি পাড়ের ও শাড়ির ভিতরের সোনালি রং বেশ কাছাকাছি। ফলে রঙের পার্থক্য খুব বেশি প্রকাশ পাচ্ছে না। কিন্তু তাতেও শাড়িটির রাজকীয়তা কমছে না। এমন সাজ চাইলে কোনও উজ্জ্বল রং বাছুন।
বেঙ্গালুরু সিল্কের রাজকীয়তার মধ্যেও চান আধুনিকতার ছোঁয়া? এমন শাড়িতেই ফুটে উঠুক বাঙালি নারীর রূপের আবেদন। বেঙ্গালুরু সিল্কের মধ্যে বাটিক ও কাঁথার কাজের সঙ্গে এখানে রাখা হয়েছে লেসের পাড়। সবে মিলে যেন ফুটিয়ে তুলছে উৎসবের আনন্দ।
পুজোর চার দিন বিভিন্ন শাড়ি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চললেও দশমীর দিন মায়ের বিদায়-লগ্নে সিঁদুর খেলার সময়ে ফিরে যেতেই হয় বাঙালির সব হতে আপন লাল পাড় সাদা শাড়িতে। সুতির বা সিল্কের এই শাড়ি প্লিট দিয়ে বা আঁচল ছেড়ে না পরে, মায়েদের মতো আটপৌরে ঢঙে পরতে পারেন। সঙ্গে থাকুক সাবেক মেজাজের কুচি দেওয়া থ্রি-কোয়ার্টার হাতার ব্লাউজ। শাড়ি সৌজন্য়ে : বস্ত্রকুট্টিম, কচ্ছি মিট্টি, অনুশ্রী মলহোত্র।