মহালয়া মানেই আগমনীর সুর এবং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ। মহালয়ার সকালে গঙ্গার ঘাটে তর্পণ করছেন মানুষ – এই ছবি বাঙালির চিরপরিচিত।
কিন্তু তর্পণ আসলে কী? মহালয়াতেই কেন তর্পণ করা হয়? নিছক কাকতালীয় নয়। এর নেপথ্যে রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি।
তর্পণের অর্থ হল পিতৃপুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় জলদান। এই দিনে পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনা হয়।
ব্যাসদেব রচিত মহাভারতে এই দিন তর্পণের উল্লেখ রয়েছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মৃত্যুর পর স্বর্গে গমন করেন বীর যোদ্ধা কর্ণ। সেখানে তাঁকে খাদ্য স্বরূপ স্বর্ণ, রত্ন, মণিমাণিক্য দেওয়া হয়।
কর্ণের প্রশ্নে দেবরাজ ইন্দ্র জানান, জীবিত অবস্থায় তিনি সব সময়ে সবই দান করে গিয়েছেন। কখনও পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জলদান করেননি। তাই তিনি মৃত্যুর পরে স্বর্গে জলপানে অক্ষম।
তাই এক পক্ষকালে মর্ত্যে ফিরে গিয়ে কর্ণ পিতৃপুরুষকে জল এবং অন্ন দান করে প্রায়শ্চিত্ত করেন। এই একপক্ষ কালকে পিতৃপক্ষ বলা হয়। আর তার শেষে হয় তর্পণ।
রামায়ণে তর্পণের ভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়ার আগে শ্রী রামচন্দ্র দেবী দুর্গার আরাধনা করেন।
যে কোনও শুভ কাজে যাওয়ার আগে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জলদান করা হয়। রামও পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জলদান করেছিলেন যুদ্ধে যাওয়ার আগে।
সূর্য কন্যাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষের সূচনা হয়, এমনটাই প্রচলিত সনাতন ধর্মে। বলা হয়, পূর্বপুরুষরা পিতৃলোক ছেড়ে তাঁদের উত্তরপুরুষদের বাড়িতে অবস্থান করেন এই সময়ে।
এর পরে যখন বৃশ্চিক রাশিতে সূর্য প্রবেশ করে, তখন পুনরায় তাঁরা পিতৃলোকে ফিরে যান। এই অবস্থানের প্রথম পক্ষে তাঁদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা হয়।
‘তৃপন্ত্যু সর্বমানবা’ – অর্থাৎ সামগ্রিক সুখ, শান্তি এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য প্রার্থনা। অতএব, তর্পণ শুধুমাত্র পূর্বপুরুষদের জন্যই নয়, সমগ্র মানবজাতির উত্তরণের উদ্দেশ্যেও বটে।
সমস্ত অন্ধকার, শোক, দুঃখ, অমঙ্গল কাটিয়ে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়া হয় এই দিনে। তর্পণ শেষে সূর্যপ্রণাম করে আহ্বান জানানো হয় মা মহামায়াকে - “সর্ব মঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে / শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরি নারায়ণী নমস্তুতে।”