ওঁরা রাঁধেন, চুলও বাঁধেন। একা হাতে সামলানো সংসার সুখের হয় ওঁদেরই গুণে, শ্রীবৃদ্ধি হয় উপার্জনেরও। পর্দায় ওঁরাই সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মী। পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধির চাবিকাঠি যাঁর হাতে, সিনেমা, সিরিয়াল, সিরিজের সেই সর্বংসহা নায়িকারা তাই লক্ষ্মীরূপেই হাজির হন পর্দায়। ভরা লক্ষ্মীপুজোর মরসুমে দেখে নিন সেই লক্ষ্মীমন্ত কন্যেদের।
‘বলো দুগগা মাঈকি’-র উমাকে মনে পড়ে? কিংবা ‘অসুর’-এর অদিতি? খানিক কোঁচকানো, একঢাল খোলা চুল, শাড়িতে-টিপে মিষ্টি মুখের সেই মেয়ে বাস্তবের অভিনেত্রী সাংসদ নুসরত জাহান। রুপোলি পর্দা থেকে রাজনীতির আঙিনায় অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় যাঁর অবাধ যাতায়াত।
‘গানের ওপারে’র পুপে। আজকের হেভিওয়েট তারকা, সাংসদ মিমি চক্রবর্তী তখন এক্কেবারে পাশের বাড়ির গান জানা, ছোট্ট টিপ, শাড়ি, মিষ্টি হাসির মেয়ে। নির্ভেজাল লক্ষ্মী মেয়ে যাকে বলে। ছোটপর্দা থেকে বড় পর্দা, অনায়াসে পেরিয়ে এসেছেন অনেকটা পথ। সমৃদ্ধি বেড়েছে, জনপ্রিয়তা তো বটেই।
নিটোল একটা মুখ, মায়াময় চোখ আর সরলতা ভরা হাসি- প্রিয়াঙ্কা সরকারের চেহারাতেই যেন মা লক্ষ্মীর ছাপ। একের পর এক ছবিতে তার চরিত্রগুলোতেও যেন আলাদা একটা আলো ছড়িয়ে দেয় সেই ঘরোয়া স্নিগ্ধতা।
শ্রাবন্তী মানেই যে চেহারাটা চোখে ভাসে- তা হল টুকটুকে ফর্সা, মিষ্টি একটা মুখ, লাল পাড় সাদা শাড়ি, সোনার গয়নার দ্যুতি, খোঁপা করা চুলে ফুলের মালা, কাজলটানা চোখ আর সিঁদুর লাল টিপ। একেই তো লক্ষ্মীশ্রী বলে, নাকি?
রঞ্জিত মল্লিকের মেয়ে হিসেবেই তাঁর মুখ চিনেছিল টলি-পাড়া। কিন্তু কালেদিনে সেই মেয়েই হয়ে উঠলেন দাপুটে অভিনেত্রী। কোয়েল মল্লিককে এখন তাঁর নিজগুণেই চেনেন দর্শক। আর চেনেন তাঁর দুষ্টু-মিষ্টি চেহারায়, বাস্তবের লক্ষ্মীমন্ত সংসারীর ভূমিকায়।
অন্নের দেবী। লক্ষ্মীর বসত যে গৃহস্থের রান্নাঘরেই। টেলিপর্দার লক্ষ্মীমন্ত সঞ্চালিকা সুদীপা চট্টোপাধ্যায় কেনই বা তার ব্যতিক্রম হতে যাবেন? তাঁর ‘রান্নাঘর’-এ সুদীপার লালপেড়ে শাড়ি, গা-ভরা গয়না আর হাতের রান্নার জাদুতেই মাত দর্শককুল।
টলিপাড়ার ব্যস্ততম নায়িকা থেকে এখন পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর ঘরণী, ইউভানের মা- প্রতিটি ভূমিকাই সাফল্যের সঙ্গে পালন করছেন শুভশ্রী। রূপের ছটায়, অভিনয়ের গুণে, সদ্য মা হওয়া জেল্লায় সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মী যেন!
এক কালের ব্যস্ত টলি-নায়িকা এখন টিভির পর্দায় ভরা সংসার সামলান মা লক্ষ্মীর মতোই। না থাকে অন্নের অভাব, না ঘটে ঐশ্বর্যের খামতি। বাস্তবের ইন্দ্রাণী হালদার তাই ‘শ্রীময়ী’ সেজে ধরা দেন লক্ষ্মী বৌমা হয়েই।
তা বলে রোজগেরে গিন্নিরা কি লক্ষ্মীমন্ত নন? এই ‘জবা’র কথাই ভাবুন না! টিভির পর্দায় বাড়ির পরিচারিকা থেকে সর্বংসহা বৌমা এবং সেখান থেকেই দুঁদে উকিল এবং বিচারপতি- সুন্দর মুখ, শাড়ি-গয়না থেকে আদালতে দৃপ্ত উপস্থিতিতে পল্লবী শর্মা সমান প্রাণবন্ত।
এক হাতে বাড়ি আগলানো, অন্য হাতে উপার্জন- তাতেই তো লক্ষ্মীশ্রী থাকে সংসারে। টেলিভিশনের ইরাবতী তো তা-ই। আলগা খোঁপায়, ছোট্ট টিপে মনামী ঘোষের মায়াভরা মুখের ছাঁদটাও যেন মা লক্ষ্মীর মতোই লাগে।
ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চাওয়া রাধিকা গিয়ে পড়ে পোশাকের ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে। সিরিয়ালের রাধিকা ওরফে বাস্তবের স্বস্তিকা দত্ত ঝলমল করেন সর্বত্রই। সে সংসারেই হোক বা ব্যবসায়, হাজারো ঝক্কি দিব্যি সামলে দেন নিপুণ হাতে। সাধে বলে, বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী!
কিংবা ইমনকে মনে পড়ে? ফর্সা, কাটাকাটা চোখমুখের মধুমিতা সরকার কেমন অনায়াসে হয়ে গিয়েছিলেন পাশের বাড়ির বালিকা বধূ আর জেদী, অভিমানী মেয়ের যুগলবন্দি! লাবণ্যে, সৌন্দর্যে আর প্রাণবন্ত অভিনয়ে দর্শকের মায়া কেড়েছিল কুসুমদোলার লক্ষ্মী বৌমা তথা ব্যস্ত ডাক্তার কন্যে।
লক্ষ্মী ঠাকুর বললেই ঠিক যে ছবিটা মনে পড়ে, তাতে অনেকটাই মানিয়ে যান টেলিপর্দার জনপ্রিয় মুখ অপরাজিতা আঢ্য। একঢাল কোঁকড়ানো চুলে, ফর্সা রঙে, এক গা গয়নায়, লালপেড়ে গরদে, একমাথা সিঁদুর আর টিপে এবং রাজেন্দ্রাণীর মতো হাসিতে তাঁকে যেন সত্যিই স্বয়ং মা লক্ষ্মী বলে ভুল হয়ে যায় মাঝে মাঝে!
কিন্তু জ্যান্ত লক্ষ্মীঠাকুর হতে গেলে কি টুকটুকে ফর্সা রংই চাই? কে বলেছে? ‘ঘরে বাইরে আজ’-এ একমাথা কোঁকড়া চুলে, কালো রঙে নজর কেড়েও তো বড়পর্দায় দিব্যি লক্ষ্মীমন্ত হয়ে উঠেছেন শ্যামাঙ্গী তুহিনা দাস। তার বেলা?
কৃষ্ণাঙ্গী নায়িকার গ্ল্যামারে টলিউড থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ঝলমল। তাঁর ঝকঝকে হাসির দ্যুতি, লাল পাড় শাড়ি, সিঁদুর টিপে পলকে অপরূপা হয়ে ওঠেন পাওলি দাম। পর্দায় সেই লক্ষ্মীশ্রীই যেন কথা বলে।
মায়া মায়া মুখ, আটপৌরে শাড়ি, এলো খোঁপা আর টিপ- পর্দায় যেন জ্যান্ত লক্ষ্মীঠাকুর হয়ে ওঠেন ইশা সাহা। তাঁর গায়ের রং-ও তো চাপাই। তবু ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর শাওন হোক বা ‘সোয়েটার’-এর টুকু- তাঁর দীঘল চোখের প্রেমে পড়েনি, এমন কি কেউ আছে?
শাড়ি-গয়না-টানটান এলোচুলে নিখাদ বাঙালি বৌমা হলে তবেই ঘরের লক্ষ্মী- এমন ধারণাও তো ইদানীং ভেঙে খান খান! এই ‘খড়কুটো’র গুনগুনকে ওরফে তৃণা সাহাকেই দেখুন। স্কার্ট টপে, ড্রেসে পুরোদস্তুর পশ্চিমি কেতায় বড় হওয়া কন্যেও কেমন হবু শ্বশুরবাড়ির বিপদে ত্রাতা হয়ে ওঠে, সবাইকে আগলে নেয় বুক দিয়ে। লক্ষ্মীমন্ত নয়?
বড়পর্দার ‘ফড়িং’ থেকে টেলিপর্দায় ‘ভূমিকন্যা’ কিংবা ইদানীং ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ব্যোমকেশের স্ত্রী সত্যবতী- সোহিনী সরকারের অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক। আটপৌরে শাড়ি থেকে শার্ট-ট্রাউজার সবেতেই স্বচ্ছন্দ কন্যের সৌন্দর্যও কেমন যেন ছকভাঙা, আলো-আলো। রূপের ঝলকানি নেই তাতে, বরং মায়ামাখা এক দ্যুতি আছে। মা লক্ষ্মীর মতোই।
আর স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়? ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দা, শাড়ির বাঙালিয়ানা থেকে পাঙ্ক হেয়ারকাটে শোরগোল ফেলে দেওয়া সবেতে সমান সাবলীল এই অভিনেত্রীর মুখে ঢলো ঢলো লাবণ্য লক্ষ্মীশ্রীই তো! একেবারে হালফিলের ওটিটি ছবি ‘তাসের ঘর’-এ তাঁর সেই ঘরোয়া সৌন্দর্যি তো এক বারের জন্যও নজর ফেরাতে দেয় না দর্শককে। তথ্য: পরমা দাশগুপ্ত। ছবি সৌজন্যে: সোশ্যাল মিডিয়া।