মহালয়ার বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। রয়েছে করোনা, রয়েছে দুশ্চিন্তা। কিন্তু এরই মধ্যে সাদা ছেড়া মেঘ জানান দিচ্ছে পুজো এসে গিয়েছে। চ্যানেলে চ্যানেলে মহালয়ার শুটও শেষ। প্রকাশ্যে এসেছে ফার্স্টলুকও। এক চ্যানেলে দুর্গা হয়েছেন বড় পর্দার জনপ্রিয় নায়িকা তো অন্য এক চ্যানেলে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে দেখা যাবে ছোট পর্দার এক জনপ্রিয় নায়িকাকে। মেগাস্টার না কি ফিল্মস্টার? জি নাকি জলসা?
জি বাংলায় মহালয়ার অনুষ্ঠানের নাম ‘দুর্গা সপ্তশতী সম্ভবামি যুগে যুগে’। এই চ্যানেলটি তাদের বিভিন্ন ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় চরিত্রকেই মা দুর্গার বিভিন্ন রূপে নিয়ে আসতে চলেছে দর্শকের সামনে। তথাকথিত হেভিওয়েট নায়িকা নেই এই মহালয়ায়। তার বদলে রয়েছে আমার আপনার ড্রয়িংরুমের নিত্যদিনের চেনা মুখগুলি। দিতিপ্রিয়া, স্বস্তিকা থেকে শুরু করে শ্বেতা বা তিয়াসা। আপনার প্রিয় ‘রানি মা’, ‘শ্যামা’, ‘রাধিকা’দের দেখা যাবে মা দুর্গার নানা রূপে।
আকাশ আটে আবার দুর্গা হচ্ছেন শ্রীতমা ভট্টাচার্য। কালারস যদিও পুরনো দিয়েই কাজ সারার প্ল্যানে রয়েছে। কার্লাস বাংলা তাই মহালয়ার ভোরে ফিরে দেখবে গত বছরের ‘অশুভনাশিনী’। যেখানে মা দুর্গার ভূমিকায় টলিউড নায়িকা শ্রাবন্তী। এক ঝলকে দেখে নিন কাকে কেমন দেখতে লাগছে?
জি বাংলার মহালয়াতে দিতিপ্রিয়া রায়, মানে আপনার প্রিয় রানি মা’কে এ বার দেখা যাবে পার্বতী এবং দুর্গার ভূমিকায়। গত বছরে এই চ্যানেলে পার্বতী হয়েছিলেন শুভশ্রী। দিতিপ্রিয়ার পার্বতী এবং দুর্গা লুক ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। পার্বতী রূপে তিনি শান্ত, হাস্যমুখী। দুর্গা রূপে তাঁর পরনে লাল শাড়ি, চোখে মুখে বলিষ্ঠতা।
পাশাপাশি, স্টার জলসায় মিমির লুক একেবারে সাবেকি। গায়ে ভারী গয়না, বেনারসি শাড়ি, প্রথম বার দুর্গা সেজে মিমি রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। ভারী গয়না আর সাবেক শাড়িতে কী ভাবে নিজের সেরাটা দেবেন তা নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলেন অভিনেত্রী-সাংসদ। তবে ভালমতোই উতরে গিয়েছে সব। এখন শুধু দর্শকদের ভালবাসার অপেক্ষা।
দিতিপ্রিয়া দুর্গা হলেও জি বাংলার মহিষাসুরমর্দিনী হিসেবে কিন্তু দেখা যাবে শ্বেতা ভট্টাচার্যকে। শ্বেতাকে জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘যমুনা ঢাকি’-তে আপনারা রোজ দেখেন মুখ্য চরিত্রে। শ্বেতা আগেও অনস্ক্রিন দুর্গা হয়েছেন। ছোট থেকেই নাচ শিখেছেন শ্বেতা। তাই এই চরিত্রে প্রথম থেকে তাঁকেই চেয়েছিলেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ।
মা দুর্গার কথা তো হল, তাঁর সর্ব ক্ষণের সঙ্গীর কথাই বা বাদ যাবে কেন? হচ্ছে মহাদেবের কথা। দুর্গা পরিবর্তন করলেও জি বাংলায় শিব কিন্তু তিন বছর ধরে একই। এ বারেও ওই চ্যানেলে শিব হচ্ছেন অভিষেক বসু। যিনি দর্শকদের প্রিয় ‘নেতাজি’ ছিলেন কিছু দিন আগেও। অভিষেক বলছিলেন, “গত বছর শুভশ্রী ‘পার্বতী’ হয়েছিলেন। গা শিরশিরানি ছিল। এ বছর আবার প্রথম বছরের মতো দিতিপ্রিয়া রায়। আমার কমফোর্ট জোন।”
দুর্গা-শিব তো হল। ওই দুই চ্যানেলে অসুর কে হচ্ছেন বলুন তো? জি বাংলায় অসুরের ভূমিকায় দেখা যাবে ধ্রুব সরকারকে। অন্য দিকে স্টার জলসায় অসুর বা রাবণ রূপে দেখা যাবে অভিজ্ঞ অভিনেতা রাজেশ শর্মাকে।
আগেই বলা হয়েছে, জি বাংলার মহালয়াতে এ বারে মা দুর্গা বিভিন্ন রূপে আসতে চলেছেন দর্শকদের কাছে। আর এই রূপেরই এক রূপ দেবী শাকম্বরী, এবং অন্য রূপ দেবী কৌশিকি। আর এই দুই রূপেই দেখা যাবে ‘ফিরকি’-র সম্প্রীতি পোদ্দারকে। শাকম্বরী রূপে তাঁর পরনে সবুজ শাড়ি। আর কৌশিকী রূপে তিনি সেজেছেন লাল পাড় সাদা শাড়িতে।
শ্যামা, অর্থাৎ তিয়াসা রায়ের লুক দেখে আপনি অবাক হতে পারেন খানিক। তিনি আসছেন রক্তদণ্ডিকা রূপে। নাম শুনেই বুঝেছেন দেবীর এই রূপ মোটেও শান্ত, স্নিগ্ধ লালিমায় ভরা নয়। রক্তদণ্ডিকা রূপে তিয়াসা ভয়ঙ্করী, অশুভ শক্তির বিনাশকারী। যার উন্মুক্ত চুলে লাল আভা, চোখ দিয়ে ঠিকরে বেরচ্ছে তেজদীপ্তি।
আবার, স্বস্তিকা দত্ত, মানে আপনার প্রিয় রাধিকা আবার একেবারে অন্য রূপে আসতে চলেছেন। এই মহালয়ায় তিনি ভ্রামরী। মহামারি বিনাশ করে থাকেন। গায়ে হলুদ শাড়ি। তিনি স্নিগ্ধ, তিনি লালিত্যে ভরা।
‘ক্ষীরের পুতুল’-এর সুদীপ্তা রায় আসতে চলেছেন ভীমা রূপে। তাঁর গা জুড়ে রুদ্রাক্ষের মালা। ত্রিনয়ন জুড়ে ভস্ম।
ধারাবাহিকে আপনারা তাঁকে দেখে থাকেন প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী হিসেবে। কিন্তু এই মহালয়ায় জি-কর্তৃপক্ষ অভিনেত্রী উষসী রায়কে সাজিয়েছেন ডাকের সাজে। সঙ্গে সমুদ্র নীল শাড়ি।
এখানেই শেষ নয়, জি-বাংলার মহালয়াতে ‘আলো ছায়া’ ধারাবাহিকের আলোকেও আপনি দেখতে পারবেন দেবীর এক বিশেষ রূপে। আলো অর্থাৎ দেবাদৃতা হয়েছেন দেবী যোগমায়া। তাঁর সাজ এক্কেবারে সাবেক।
এ তো গেল জি-এর কথা। তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ স্টার-ই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? মিমি তো রয়েছেনই। এ ছাড়াও ওই চ্যানেলের মহালয়ায় সীতা রূপে দেখা যাবে মধুমিতা সরকারকে। রামের চরিত্রে কে?
রামের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে জিতু কামালকে। মধুমিতা-জিতু জুটি কতটা মন জয় করতে পারবে দর্শকদের? অকালবোধনের ঘটনাই অনুষ্ঠানের মূল থিম। পরিচালনা করেছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। অন্য দিকে স্টারের পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার।
গত চার বছর ধরে মহালয়ায় আগের রাত গানে গানে জেগে কাটায় আকাশ আট। সুরের দুনিয়ার তারকা শিল্পীদের সঙ্গে। এ বছরের আয়োজনে থাকছেন ২০ জন দিকপাল। শ্রাবণী সেন, সোমলতা আচার্য, মিস জোজো, লোপামুদ্রা মিত্র, রূপঙ্কর, ইমন চক্রবর্তী হয়ে অদিতি মুন্সি, রথিজিৎ, উজ্জয়িনী, দুর্নিবার।
ভোর ৪টে থেকে ৫টা, এক ঘণ্টার নৃত্যনাট্য ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। এখানে মা দুর্গা শ্রীতমা ভট্টাচার্য। স্তোত্রপাঠে শ্রীজন চট্টোপাধ্যায়। গানে ইমন, গৌরব, তৃষা, অরিত্র প্রমুখ। সঙ্গীত পরিচালনায় শোভন গঙ্গোপাধ্যায়।
কার্লাস বাংলা মহালয়ার ভোরে ফিরে দেখবে গত বছরের ‘অশুভনাশিনী’। যেখানে মা দুর্গার ভূমিকায় টলিউড নায়িকা শ্রাবন্তী। কন্যারূপী ‘দুর্গা’ পায়েল দে।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসবে কে? আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। দেবীপক্ষের সুচনা হল বলে...