সামনেই কার্ত্তিকি অমাবস্যা। ঐ দিন রাতে দেবী কালিকার উপাসনা করে গোটা বাংলা-সহ ভারতবর্ষ। হিন্দু শাস্ত্র মতে এই দিনটি বড় শুভ। কালীকে বলা হয় আদি শক্তি মহামায়ার সংহারকর্ত্রী রূপ।
কোথাও তিনি পূজিতা হন দেবী দক্ষিণা কালী রূপে, আবার কোথাও তিনি ভবতারিণী। কখনও তারা মা, কখনও বা শ্মশান কালী। রয়েছে চণ্ডী রূপ থেকে ছিন্নমস্তা। নানা জায়গায় তাঁর নানা রূপে আরাধনা।
তবে দেবী কালীর অস্তিত্ব এখানেই শেষ নয়। হিন্দুশাস্ত্রের বাইরেও তাঁর অবাধ আনাগোনা। বিদেশে যে শুধু কালী আরাধনা হয়, তা-ই নয়। বরং গ্রীক সহ আরও নানা শাস্ত্রে পাওয়া যায় দেবীর উল্লেখ। তবে অবশ্যই তা কালী নামে নয়।
প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্রে বর্ণিত কালীর রূপের সঙ্গে সাদৃশ্য পাওয়া যায় বিদেশের বহু দেব-দেবীর। তাই স্বভাবতই জন্ম দেয় এক বির্তকের। আসলে দেবীর জন্ম কোথায়? এদেশে নাকি বিদেশে? এই প্রতিবেদনে রইল তেমনই কিছু বিদেশি দেবীর হদিশ, যার বর্ণনা শুনলে আপনারও মনে হতে পারে, এ তো আমাদের কালী।
ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ মতে শ্রীকৃষ্ণ প্রথম বৃন্দাবনে দেবী কালীর উপাসনা করেন। পরে মধু ও কৈটভ নামক অসুরদের হাত থেকে রক্ষা পেতে স্বয়ং ব্রহ্মা আরাধনা করেন দেবীর। এবং তৃতীয় উপাসক রূপে দেবীর উপাসনা করেন দেবরাজ ইন্দ্র।
তেমনি প্রাচীন গ্রীক সভ্যতা থেকে অ্যাজটেক সভ্যতা, মেক্সিকো থেকে স্কটল্যান্ড, রাশিয়া, আয়ারল্যান্ড নানা জায়গায় বিস্তৃত রয়েছেন এমনই দেবীরা।
এক সময় গ্রীকরা ইওরোপে আরাধনা করতো দেবী রিয়ার। যুদ্ধের দেবী রিয়াকে পুজো করা হতো শ্বেত জবা, পদ্ম ও শালুক দিয়ে। আর হিন্দু মতে দেবী কালীর উপাসনা হয় রক্ত জবা দিয়ে। রাশিয়ার দক্ষিণ অংশেও এই দেবী পুজিত হতেন ‘রা’ নামে। যার অর্থ লোহিত বা রক্ত বর্ণ। আবার এর অর্থ ‘মাদার টাইম’-ও বটে। অর্থাৎ যিনি নিজের সন্তান-সহ সব দেবতাকেই গ্রাস করেন। তিনিই দেবী ‘রিয়ানমন’। এঁর স্বামীর নাম ‘ক্রোনাস’। যিনি তাঁর স্ত্রীর মতো নিজের সন্তানদের গ্রাস করেন। যার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় দেবাদিদেব মহাদেব ও মহাকালীর কাহিনির।
আবার প্রাচীন স্পেনে পুজো করা হত দেবী ‘ক্যালিফা’ বা ‘ক্যালিফিয়া’র। এই দেবীর রাজত্বে উল্লেখ পাওয়া যায় সোনা, রুপো-সহ নানা বহুমূল্য রত্ন সামগ্রীর। যার সঙ্গে মিল রয়েছে কালী পুজোর আগে ধনতেরস উৎসব এবং কালী পুজোর দিনের দীপান্বিতা লক্ষ্মী পুজোর। মনে করা হয় ‘ক্যালিফোর্নিয়া’ ভূ-খণ্ডের নাম রাখা হয় এই দেবীরই নামে।
কালীর মতো দেবীর দেখা হদিস মেলে মেক্সিকোতেও। প্রাচীন অ্যাজটেক সভ্যতার দেবী ‘কোটলিকিউ’ ছিলেন ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবী। আবার হিন্দু শাস্ত্রে কালীকেও ধ্বংসের দেবী বলে উল্লেখ করা আছে। শুধু তা-ই নয়, ময়নাগুড়ির পেটকাটি কালীর মতোই এই দেবীর কোমরে রয়েছে অসংখ্য সাপ। আর গলায় রয়েছে লকেটের মতো মাথার খুলি ও হাত।
ফিনল্যান্ডের কৃষ্ণবর্ণা দেবী ‘ক্যালমা’ কিন্তু আদতে মা কালীর মতোই। আমাদের শ্মশান কালীর মতোই তাঁরও প্রিয় বিচরণ ক্ষেত্র হল শ্মশান। বর্তমানে দক্ষিণ ফ্রান্সে এখনও পূজিত হন এই দেবী। যা থেকে বোঝা যায় এদের পূর্বপুরুষরা কালীর উপাসক ছিলেন।
আয়ারল্যান্ডের কৃষ্ণবর্ণা দেবীর নাম ‘কোলিয়েক’। আবার স্কটল্যান্ডকে বলা হত ‘ক্যালিডোনিয়া’ বা ‘কালী প্রদত্ত ভূ-খণ্ড। আমরা যেমন রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য পুজো করি রক্ষা কালীর, তেমনি আয়ারল্যান্ডে পুজো করা হয় এই কোলিয়েকের। উপচারের পাশাপাশি মিল রয়েছে নামেও তাই তাঁকে ইওরোপের কালী বললে খুব একটা ভুল হবে না।
তাই প্রশ্ন ওঠে কী ভাবে বিদেশের ক্যালমা দেবীর সঙ্গে এত মিল থাকতে পারে এদেশের কালী মায়ের? বা আয়ারল্যান্ডের কোলিয়েক কী করে হতে পারেন এ দেশের রক্ষাকালীর মতো? তবে সব দেখে শুনে একটু কি মিল পাওয়া যায় না আমাদের কালীর সঙ্গে?