দেশ ভাগ হয়ে গিয়েছে বহু দিন। সীমান্তের এপার থেকে ওপার, টানাপোড়েন চলে বছরভর। অথচ কালীপুজোতে সেই পাকিস্তানেরই কালাট শহরে ফুটে ওঠে এক টুকরো বাংলা। সৌজন্যে বাঙালির দীপান্বিতা কালীপুজো।
বালুচিস্তানের কালাটে রয়েছে দেবী কালাটেশ্বরীর মন্দির। স্থানীয়দের কাছে এই মন্দিরের মা অত্যন্ত জাগ্রত। এখানে নিয়ম করে পুজো করতে আসেন মুসলিমরাও। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব।
১৯৪৪ বছর ধরে পাকিস্তানের এই শহরে বিরাজমান সদা ক্রোধান্বিতা, রণরঙ্গিণী, করাল বদনা দেবী কালাটকালী। স্থানীয়দের বিশ্বাস, সব বিপদ থেকে দেবী সর্বদা তাঁদের রক্ষা করেছেন ।
প্রতি বছর কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে মহা সমারোহে পুজো হয় এই মন্দিরে। হিন্দুদের পাশাপাশি, বালুচ মুসলিমরা যথাসম্ভব সাহায্য করে থাকেন মন্দিরের অনুষ্ঠানে।
প্রায় ২০ ফুট উঁচু এই বিগ্রহটি কালচে নীলবর্ণা। দশ হাতে তরবারি, গদা, ঢাল, শঙ্খ, ত্রিশুল, চক্র, ধনুক, নরমুণ্ড ও খঞ্জর। রণসাজে সজ্জিতা এই কালী মায়ের গলায় রয়েছে সত্যিকারের করোটির মালা।
এই মন্দিরে কালীপুজো ছাড়াও দশহরা, হোলি, গুরুপূর্ণিমা পালিত হয় জাঁকজমক ভাবে। স্থানীয়দের কাছে এই মন্দিরের পুরোহিতরা হলেন মহারাজা।
প্রতি বছর নিয়ম করে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার হিন্দুভক্ত কালাট কালীমাতার দর্শন করতে আসেন। ভক্তদের আতিশয্য থেকে আলাদা রাখতে বিগ্রহকে কাচ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়।
ভোগ উৎসর্গ, ষোড়শ উপচার ইত্যাদির মাধ্য়মে দেবীর আরাধনা করা হয় এখানে। প্রতি দিন সকালে ও সন্ধ্যায় এখানে নিত্যপুজো পান এই মা কালী।
বিগ্রহের সামনে রাখা গুরু নানকের ছবি। স্থানীয় লোকগাথা থেকে জানা যায় বিভিন্ন সময় বহু শিখ গুরু এসেছেন এই মন্দিরে।
প্রায় ৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে মা কালাটেশ্বরী পূজিত হচ্ছেন এখানে। মন্দিরের দ্বারে এটি লেখাও রয়েছে উর্দু ভাষায়।
ভারত হোক বা বাংলা, গোটা দেশে যেখানে ধর্ম নিয়ে সমস্যা, সেখানে সম্প্রীতির বার্তা বহন করে পাকিস্তানের বুকে স্বমহিমায় বিরাজ করছেন মা কালাটেশ্বরী মন্দির।