শহর জুড়ে এখন কালীপুজোর মেজাজ। প্রায় সব মণ্ডপে আয়োজন সম্পূর্ণ।
কোথাও প্রতিমার রং কালো। কোথাও বা মা নীলবর্ণা। কোথাও রুদ্রমূর্তি, কোথাও অপেক্ষাকৃত শান্ত।
তবে ছোটদের কিন্তু মাতৃপ্রতিমার চেয়েও বেশি কৌতূহল তাঁর দু’পাশে থাকা ডাকিনী-যোগিনীকে নিয়ে। প্রতি বছর এই সময়টায় কুমোরটুলিতে তেনাদেরও রমরমা!
কারও হাত কাটা, কারও গলা। কারও গায়ে মাংসের লেশমাত্র নেই, শুধুই কঙ্কাল। কারও হাতে আবার মানুষের হাত বা পায়ের এত্ত বড় খণ্ড!
কোনওটার চোখ জ্বলজ্বল করছে। কেউ আবার দিব্যি বসে আড্ডার মেজাজে। কাউকে দেখলে ভয় লাগতে বাধ্য। আবার কোনওটাকে দেখলে হেসে ফেলবেন আপনিই!
কুমোরটুলিতে যেমন প্রতিমা গড়া হয়, ঠিক তেমনই এ পাড়ার একাংশে এই ধরনের ভূত-প্রেতই বানান কারিগরেরা।
রোগা ভূত, মোটা ভূত, বেঁটে ভূত, কিম্ভুত- সক্কলে উপস্থিত এখানে! কারিগরেরা কেউ কেউ পঁয়ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভূত বানাচ্ছেন।
গ্রাহকেরা ঠিক যেমন চান, ঠিক তেমনই ভূত গড়ে দেন তারা। কখনও কখনও অদ্ভুত আবদার আসে। সেই আবদারও রাখতে হয় মূর্তি প্রস্তুতকারদের।
মোটামুটি ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা থেকে শুরু হয় ডাকিনী-যোগিনীর জোড়া। বিশেষ ক্ষেত্রে দাম প্রায় কালী মূর্তির দাম ছুঁই ছুঁই।
কালীপুজোর ২-৩ দিন আগে থেকেই মূলত বিক্রিবাট্টা বাড়ে। প্রতি বছরের মতো এই বারেও তার অন্যথা হয়নি।
এক শিল্পী জানাচ্ছেন, গ্রাহকেরা এসে প্রথমেই সবচেয়ে আলাদা দেখতে ডাকিনী-যোগিনী খোঁজেন। কখনও কখনও মূর্তির আদল এমনই হয় যে, হাসি পেতে বাধ্য।
মুঠোফোন আর ভিডিয়ো গেমের যুগে কালী প্রতিমার পাশে ডাকিনী-যোগিনীর মতো চরিত্রগুলি বাস্তবিক ভাবেই তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
আজও মণ্ডপে আট থেকে আশির চোখ আটকে যায় ডাকিনী-যোগিনীতে, অন্তত এক বার হলেও। হঠাৎই যেন বড়দের চোখে ফের শৈশবের সেই ভয় মেশা কৌতূহল!