কালীপুজো, ভাইফোঁটার প্রায় সপ্তাহব্যপী উৎসবের রেশ রয়ে গিয়েছে এখনও। তার মধ্যেই বাদ্যি বেজে উঠেছে জগদ্ধাত্রীপুজোর।
হেমন্তের আমেজ মেখে সেজে উঠছে চন্দননগর, কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত পুজোগুলি, যাদের বেশ কয়েকটির গায়ে ইতিহাসের গন্ধ। তেঁতুলতলা বারোয়ারির উদযাপনের বয়স যেমন প্রায় দুই শতাব্দী পার!
দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী প্রথম সূচনা করেছিলেন এই জগদ্ধাত্রীপুজো। যিনি ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের বন্ধুও বটে। তাঁর হাত ধরেই শুরু হয়েছিল এই পুজো।
প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন এই পুজোর রয়েছে কিছু তাক লাগানো অদ্ভুত নিয়ম! উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে জানা গেল সে সবের খুঁটিনাটি।
অত্যন্ত জাগ্রত এই পুজোয় প্রতি বছর অংশগ্রহণ করেন লক্ষাধিক মানুষ। দেবীর জনপ্রিয়তা বিপুল। ভক্তদের ভিড়ও হয় দেখার মতো। তার মধ্যে পুজোর কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে অগত্যা উদ্যোক্তারা প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে পুজোটিকে চার দিন ব্যাপী উৎসবের রূপ দিয়েছেন।
আগে শুধুই নবমীর দিনে বিশাল আকারে পুজো হত। জনশ্রুতি বলে, তখন ছিল ইংরেজ আমলের শুরুর দিক। চার পাশে ঘন জঙ্গল। তারই মধ্যে ছিল ডাকাতদের আখড়াও। বাড়ির মহিলারা তাই বাড়ি থেকে বেরোতেন না। দেবী বরণের উপায় ছিল না তাঁদের।
এই পরিস্থিতিতেঁ পুজোর উদ্যোক্তা পুরুষরাই মহিলাদের মতো শাড়ি পরে, শাঁখা সিঁদুর পরে মা জগদ্ধাত্রীকে বরণ করতেন। আজও তেঁতুলতলার পুজোয় সেই রীতি মেনেই দেবী বরণ হয়। মায়ের বরণে কোনও মহিলার হাত লাগানোর রেওয়াজ নেই।
দশমীর দিন সুতো কেটে পুজো সম্পন্ন হয়ে গেলে মূল মন্দির থেকে বার করে আনা হয় প্রতিমা। উন্মুক্ত দালানে আজও পুরুষরা শাড়ি পরে এসে বরণ করেন দেবীকে।
এই অনবদ্য ও অভিনব রীতি দেখতে উপচে পড়ে দর্শনার্থীদের ভিড়। পুজোর এই চোখধাঁধানো জৌলুস উপভোগ করতে দূরদুরান্ত থেকে মানুষ আসেন এই এলাকায়।
আজও পুজোর সময়ে প্রচুর ছাগবলি হয় এখানে। দেবীর কাছে মানত করে অনেকেই বলি দেন আর প্রার্থনা করেন নানা মনোবাঞ্ছা পূরণের উদ্দেশে।