একমাত্র বাংলাতেই হিমালয়ের কন্যা পার্বতীর অন্য পরিচয় ঘরের মেয়ে উমা হিসেবে। বাংলায় তিনি পূজিত হন সপরিবার।
দেশের অন্য অংশে যাঁরা স্বতন্ত্র দেবদেবী, সেই লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিককে এখানে কল্পনা করা হয়েছে মা দুর্গার সন্তান-সন্ততি রূপে।
বৈদিক ও পৌরাণিক সূত্র অনুযায়ী,চার জনের কেউ মা দুর্গার গর্ভজাত নন।
মার্কণ্ডেয় চণ্ডী, কালিকাপুরাণ, ভগবৎপুরাণের মতো উৎসে কোথাও পার্বতীর সন্তানদের উল্লেখ নেই।
পৌরাণিক সাহিত্যে লক্ষ্মী কোথাও নারায়ণের স্ত্রী। আবার কোথাও তিনি সমুদ্রমন্থনের ঘৃত থেকে উত্থিত।
বৈদিক লক্ষ্মী হলেন ‘মহালক্ষ্মী’। এই মহালক্ষ্মী বা মহাশক্তি থেকেই সব সৃষ্টির জন্ম। মহাশক্তির শাখাশক্তি রূপেই ঐশ্বর্য ও বিদ্যার প্রতীক রূপে দেখা দিলেন দুই দেবী।
জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী সরস্বতীর সঙ্গে নদীর গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
বাল্মীকির রামায়ণে কার্তিক বা মহাতেজ কার্তিকেয় অগ্নির সন্তান এবং গঙ্গার গর্ভজাত। পাশাপাশি, মহাভারতে কার্তিকেয় হলেন অগ্নিদেব ও দক্ষকন্যা স্বহার সন্তান।
গণেশের জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে প্রচলিত আখ্যানের মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় শিবপুরাণের কাহিনি। দুর্গা এক দিন স্নানের আগে হলুদবাটা দিয়ে তিনি একটি মূর্তি বানালেন। তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করে জন্ম হল গণেশের।
এ বার পার্বতী নির্দেশ দিলেন গণেশকে। যাতে তাঁর ঘরে কেউ প্রবেশ না করে। এ দিকে সেই সময় দরজায় উপস্থিত মহাদেব। কিন্তু পার্বতীর আদেশ মেনে গণেশ তাঁকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন না। কুপিত মহাদেব নির্দেশ দিলেন সেই বালককে হত্যা করার। কিন্তু সবাই সেই বালকের শক্তির কাছে পরাস্ত হলেন।
এ বার স্বয়ং শিবের রোষে কাটা পড়ল গণেশের মুণ্ড। শোকস্তব্ধ পার্বতীকে শান্ত করতে একটি হস্তিমস্তক শিব স্থাপন করলেন গণেশের দেহে।
পরে তাঁকে গণাধিপতি উপাধিতে অভিষিক্ত করেন শিব। গণেশ প্রকৃতপক্ষে শিব বা মহাদেবেরই এক রূপ। সৃষ্টির এই উপাখ্যান নিয়ে প্রথম থেকেই নানা মত প্রচলিত।