শাড়িতেই উষ্ণতা। পুজোর থিম এটাই। পুজো মানেই সনাতন। আবার পুজো মানেই পুরনোর মাঝেই নতুন কিছু। শাড়িতে মোহময়ী এ কথা কে না জানে।
বঙ্গতনয়ারা এই পোশাকেই সবার মনে ঝড় তুলছেন দশকের পর দশক। পরিস্থিতি যাই হোক, শাড়ির বিকল্প আজও আসেনি। 'নো মেক আপ' লুকে হালকা কাজলের ইশারা এবং অর্গানিক কটনের শাড়িই হতে পারে এ পুজোর স্টাইল স্টেটমেন্ট।
পুজো মানেই জিন্স-টপ-কুর্তির ভিড় ঠেলে ফের শাড়ির তাকে হাত। করোনা আবহে রোজকার জীবনে শাড়ির নামগন্ধই হারিয়ে যাচ্ছিল প্রায় বা ইচ্ছে থাকলেও ঠিক শাড়িটা পরে উঠতে পারেন না, আলমারিতে শুধু জমছিল নতুন শাড়ির পাহাড়। তাঁরাও এ বার পছন্দের শাড়িটি বেছে নিলেন।
পুজোয় অফিস করেন যাঁরা কিংবা একটু-আধটু বাইরে বেরনো বা লং ড্রাইভের পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য অর্গানিক কটনের শাড়ি আদর্শ, এমনই মনে করছেন ডিজাইনাররা।
ব্যস্ত জীবনে সময়ের বড় অভাব। ফলে শরীরচর্চার সময় কমেছে। তাই বলে শরীরের গঠন বা খাঁজ নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলারও দরকার নেই।
শাড়ি শরীরের ভাঁজকে যেন আরও মোহময়ী করে তোলে। আরও সুন্দর করে তোলে প্রত্যেককে। যে কোনও মাপের, যে কোনও উচ্চতার জন্য শাড়িই সবচেয়ে পছন্দের। এমনই জানালেন ডিজাইনার শুভা মিত্র।
শুভ ডিজাইন স্টুডিয়োর কর্ণধার শুভা মিত্র এবং পুনম মল্লিক এ বারের পুজোয় অর্গানিক কটনকেই পছন্দের তালিকায় রেখেছেন। আরামদায়ক, সহজেই কেচে ফেলা যায় এবং অর্গ্যানিক কটনের ব্যবহার অর্থাৎ পরিবেশবান্ধবও এই শাড়িগুলি জানান শুভা।
ক্রান্তীয় অঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ায়, এখানে বছরের ১০ মাসই বেশ গরম। তার মধ্যে এ বছরের পুজো ভিন্ন পরিস্থিতিতে, তাই এই অর্গানিক কটনের শাড়ি পরলে সবাই আরাম পাবেন।
বাংলার সংস্কৃতির ফেলে আসা উপকরণ তাঁর পোশাকে ফিরিয়ে এনেছেন শুভা। শাড়িতেই মহাভারত কিংবা রবি বর্মার ছবি তুলে ধরছেন তিনি। শাড়িতে ফুটে উঠছে রামায়ণের গল্প। বিশেষ করে আঁচলের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি ডিজাইনার হিসেবে। ক্যামেরা কিংবা পুরনো দিনের প্রিয় নায়িকার ছবিও থাকছে শাড়ির বুননে।
সাজগোজের সূত্রে কথা হল ডিজ়াইনার অভিষেক দত্তের সঙ্গে। বাংলার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা, কমবয়সিদের মধ্যে ফের শাড়ির সাজ ফিরিয়ে আনা, হারিয়ে যাওয়া নানা ধরনের শাড়িকে ফ্যাশনে ফিরিয়ে আনা—এটা খুব জরুরি।
অর্গানিক কটনই এ বার ফ্যাশনে কেন ইন, এ প্রসঙ্গে অভিষেকের বক্তব্য, সহজেই পরে কেচে ফেলা যাবে এ ধরনের শাড়ি। করোনা নিয়ে আতঙ্কের কারণেই পরিবেশবান্ধব শাড়ি পরলে ফ্যাশনেও থাকা যাবে, আবার সাবধানও।
সাহানা বুটিকের কর্ণধার ডিজাইনার পারমিতাও অর্গানিক কটনকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। তাঁর মত, এই শাড়ি পরেও আরাম। স্নিকার্স, বুট কিংবা লং হিল থাকুক পায়ে। ট্যাঙ্ক টপ বা টি শার্ট দিয়ে এ ধরনের শাড়ি পরলে একেবারে অন্য লুকস পেয়ে যাবেন আপনি।
প্রিয় জনের সঙ্গে একান্তে ঘণ্টাঘানেক নৌকাবিহার কিংবা এক দিন সাবধানতা মেনে রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়া, সঙ্গী হোক অর্গানিক কটনের শাড়ি, বলছেন পারমিতা। শাড়ি এবং নারীর সেই আদি অকৃত্রিম সম্পর্ক। তাই এ সম্পর্ককে পুজোর সময় আরও একটু ঝালিয়ে নেওয়া আর কী।
যতই কেয়ূরে-কঙ্কণে কুসুমে রতনে সাজো হে কন্যে, অঙ্গে শাড়িখানি জড়ালে তবেই ঢল নামবে তব লাবণ্যে। এ কথাটা আজকের আধুনিকারাও মানেন নিশ্চয়ই। তাই নিজের সেরা রূপটি তুলে ধরতে আস্থা রাখতেই পারেন অর্গানিক কটনের শাড়িতে।
শুধু বঙ্গনারী কেন, কঙ্গনা রানাউতকেও কিন্তু চমৎকার একটি অর্গানিক কটনে দেখা গিয়েছিল বিমানবন্দরে। সেই শাড়িটি কঙ্গনা কিনেছিলেন কলকাতারই রাস্তা থেকে। স্থানীয় তাঁতি এবং শিল্পীদের সাহায্য করা ফ্যাশনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, জানিয়েছিলেন সে কথাও।
এই লকডাউনেই দিয়া মির্জা উল্লেখ করেছিলেন অর্গানিক কটনের শাড়ির কথা। বলেছিলেন, ‘সাসটেইনেবল ফ্যাশন’-এর কথা। প্রকৃতির কাছে মনকে মেলে ধরতে পুজোয় আপনার সঙ্গী হোক অর্গানিক কটনের শাড়ি। সনাতনী পোশাকে এ বার পরিবেশবন্ধুতার ছোঁয়া। ছবি সৌজন্য: শুভা মিত্র (প্রথম ১৪টি) এবং টুইটার।তথ্য-রোশনি কুহু চক্রবর্তী।