‘কাহানি’র বিদ্যা বাগচীকে মনে আছে? কিংবা সেই ছোট্ট ‘উমা’কে, যার জন্য দেবীপক্ষের আগেই গোটা শহর মেতেছিল দেবীর আরাধনায়? দর্শকদের মনে হয়তো আজও অমলিন ‘দেবদাস’ ছবির সেই ‘ডোলা রে’ গানের দৃশ্য! গল্প এবং চরিত্রের নিরিখে প্রত্যেকটা ছবি আলাদা হলেও ছবিগুলিকে একই সুতোয় বেঁধেছে কেবলমাত্র একটি বিষয়ই। বাঙালির আপন দুর্গাপুজো। হিন্দি, বাংলা মিশিয়ে এমন অনেক সিনেমা আছে যা দেখলেই মুহূর্তে অনুভব করা যায় পুজোর আমেজটা। দেখুন তো আপনার পছন্দের তালিকায় এই ছবিগুলি আছে কি না ।
উমা: গল্পটা ৭ বছরের ইভান লেভারসেজের গল্প। ক্যানসারে মৃত্যুপথযাত্রী ইভানের ইচ্ছেয় কানাডার সেন্ট জর্জের বাসিন্দারা ২০১৫-র অক্টোবরেই তৈরি করেছিলেন আস্ত একটা বড়দিন। কিন্তু ডিসেম্বরের ‘বড়দিন’ আসার আগেই মারা যায় সে। এই ঘটনার আধারেই কলকাতার দুর্গাপুজোকে ক্যামেরায় ধরেছিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ছোট্ট উমার জন্য মার্চ-এপ্রিলেই কলকাতায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন সিনেমার সেটের মতো দুর্গাপুজো।
অসুর: ২০২০ সালে মুক্তি পেয়েছিল জিৎ, নুসরৎ জাহান এবং আবীর চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ছবি ‘অসুর’। মূল ধারার ছবি হলেও ভিন্ন স্বাদের বুননটা বেশ ভালই দেখিয়েছিলেন পরিচালক পাভেল। একজন শিল্পীর জীবনের ওঠাপড়া, তাঁর বেঁচে থাকার লড়াই, সবটাই অপূর্বভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি এবং সেই সঙ্গে অবশ্যই দর্শকদের মন ছুঁয়ে ছিল দুর্গাপুজোর আমেজ।
বলো দুগ্গা মাইকি: ২০১৭ সালে পুজোর আবহেই মুক্তি পায় অঙ্কুশ হাজরা-নুসরত জাহান অভিনীত ‘বলো দুগ্গা মাইকি’। দম ফাটা হাসির মেজাজ, আদ্যোপান্ত বাণিজ্যিক ছবি এবং তার সঙ্গে বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর প্রেক্ষাপট। সব মিলিয়ে পুজোর মরশুমে এর থেকে মন ভাল করা ছবি আর কী হতে পারে!
বিসর্জন: দুর্গাপুজোর ভাসানে কেবল মাত্র দুই বাংলাই মেলে না, মেলে দুই ধর্ম, ভেদাভেদ। ছবির কোন বিষয়টি দর্শকদের মনে নাড়া দেবে, সেই পরীক্ষায় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় উত্তীর্ণ! জয়া আহসান, আবীর চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিসর্জন’ ছবিটিও ঠিক তাই। পুজোর প্রেক্ষাপট, ভালবাসা-বিচ্ছেদের সুর আর সেই সঙ্গে বাংলার আপন লোকগান, ছবিটি আজও দর্শকদের মনের মণিকোঠায়।
দুর্গা সহায়: পরিচালক অরিন্দম শীলের ছবি ‘দুর্গা সহায়’ ছবিটিকেও এই তালিকায় রাখতে হয়। বনেদি বাড়িতে কাজের লোক হয়ে আসে দুগ্গা নামের এক মেয়ে। কিন্তু তার মধ্যেই অকালে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে দেখতে পায় বাড়ির ছোট বউ। কিন্তু এর মধ্যেই চুরির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর? উত্তরটা যাদের অজানা, তারা সময় করে দেখেই ফেলতে পারেন এই ছবি।
মেরি পেয়ারি বিন্দু: ২০১৭ সালে মুক্তি পায় ‘মেরি পেয়ারি বিন্দু’। সিনেমার শুরুতেই প্রথম দৃশ্যে মা দুর্গাকে ‘সঙ্গী’ করে বাঙালির আবেগকে বেশ ভাল ধরেছিলেন পরিচালক অক্ষয় রায়। এমনিতেই ছবির একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে শহর কলকাতা। তার উপর দুর্গাপুজোর সিকোয়েন্স যেন উপরি পাওনা।
দেবদাস: সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘দেবদাস’ ছবিতে দুর্গাপুজোর সময়ে মাধুরী দীক্ষিত এবং ঐশ্বর্যা রাইয়ের ‘ডোলা রে’ গানের দৃশ্য কার না মনে আছে! দুই দশকের বেশি সময় কেটে গেলেও দর্শকদের মনে আজও টাটকা এই ছবি।
কাহানি: সিনেমায় ক্রাইম থ্রিলারের চৌহদ্দিকে আরও কিছুটা প্রসারিত করেছিলেন পরিচালক সুজয় ঘোষ। নেপথ্যে বিদ্যা বালন অভিনীত ‘কাহানি’। ২০১২ সালে এই ছবি বলিউডে হইচই ফেলে দিয়েছিল। সঙ্গে দুর্গাপুজোর আমেজকে গল্পে ধরেছিলেন বাঙালি পরিচালক সুজয়।
উৎসব: ঋতুপর্ণ ঘোষের হাত ধরে সেলুলয়েডের পর্দায় বহুবারই জায়গা করে নিয়েছে বাঙালির আপন ‘উৎসব’ দুর্গাপুজো। ২০০০ সালে মুক্তি পায় এই ছবি। ছবিটি দেখলেই বোঝা যায় এটির একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে দুর্গাপুজো। বনেদিবাড়ি এবং যৌথ পরিবারের আবহকে পর্দায় তুলে ধরতে পারেন, তাঁর চেয়ে ভাল আর কে-ই বা ছিলেন!