সপরিবার অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়
বন্ডেল রোডে পুষ্পাঞ্জলি আবাসনের ছাদে মণ্ডপ। ইতঃস্তত ছড়িয়ে বসে অতিথিরা। দেবীর নবমীর ভোগ উৎসর্গের উদগ্রীব অপেক্ষা। ছাদে তখন সাদা ধুতি, নীল পাঞ্জাবিতে আপন মনে ঘুরঘুর করছে ছোট্ট আদিদেব। নীচের তলায় ততক্ষণে ভোগ সাজাতে ব্যস্ত মা সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। তদারকিতে অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়।
কাঁটায় কাঁটায় বেলা আড়াইটে। ভোগের থালা হাতে ছাদে উঠে এলেন অগ্নিদেবের বড় ছেলে আকাশ চট্টোপাধ্যায়। পিছু পিছু বাড়ির অন্য সদস্যরা। দলে সুদীপার হবু বৌমা হিন্দোলা-ও। প্রত্যেকের হাতে রকমারি ভোগের থালা। গলদা চিংড়ি, নিরামিষ খাসির মাংস, পোলাও, ডাল, ভাজা, রকমারি নিরামিষ তরকারি, পদ্মার ইলিশ, ক্ষীরের মিষ্টি, চাটনি, পায়েস, পান— এলাহি ভোগের আয়োজন।
দেবী প্রতিমার উদ্দেশে নিবেদিত মহানবমীর মহাভোগ
নবমীর দুপুরে অগ্নিদেব-সুদীপার বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজোয় প্রতি বছরই তারকার ঢল নামে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, বাবুল সুপ্রিয়, বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়—বাদ যান না কেউই! করোনা-কাঁটায় গত বছর থেকে সেই চেনা ছবি বদলেছে। অতিমারির কথা মাথায় রেখে এ বছর আমন্ত্রিত অতিথিদের দুটো দিনে ভাগ করে দিয়েছেন কর্তা-গিন্নি। সেই অনুযায়ী নবমীতে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজোয় সামিল হন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়, শঙ্কর চক্রবর্তী।
এ বছর মা তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী বড় নথ পরেছেন।
ত্রুটি নেই অতিথি আপ্যায়নেও। পোলাও, তরকারি, লুচি, ভাজা, পায়েস, গরম গরম পান্তুয়া থরে থরে সাজানো। এর আগে সুদীপা আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, নবমীতে ‘মা’ সাজেন শিউলি ফুলের মালায়। প্রতি বছর এই মালা জোগাড় করতে কালঘাম ছোটে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের। প্রতিমা সেজে ওঠেন নানা ধরনের সোনার গয়নাতেও। যেমন, মায়ের নাকে বাংলাদেশের কমল হিরে। বুক জুড়ে থাকে রুপোর অহেন বর্ম। দেবী যুদ্ধ-সাজে থাকেন বলেই এই বিশেষ অলঙ্কারের রীতি। এ ছাড়া, মাথা থেকে পা পর্যন্ত আছে সীতাহার। আছে ভিক্টোরিয়ার আমলে তৈরি জড়োয়ার ময়ূর কণ্ঠহার। পাশাপাশি, সকলেই প্রতি বছর কিছু না কিছু অলঙ্কার মাকে উপহার হিসেবে দেন। এ বছর যেমন মা তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী বড় নথ পরেছেন। দেবীর বাহন সিংহও সাজে সোনার মুকুটে!
সুদীপার কথায়, ‘‘সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় অগ্নিদেবের। ও নিজে মাকে বিদায় জানালে তবে মায়ের প্রতিমা নড়ানো যায়।’’
পুজোর আনন্দে বিদায়ের সুর বাজে নবমীতেই। তাই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই খুশিতে ঝলমলে মুখগুলো প্রতিমা বিসর্জনের ব্যথায় ম্লান। সুদীপার কথায়, ‘‘সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় অগ্নিদেবের। ও নিজে মাকে বিদায় জানালে তবে মায়ের প্রতিমা নড়ানো যায়।’’ এই নিয়ে নাকি এক অলৌকিক ঘটনাও আছে চট্টোপাধ্যায় পরিবারে। রান্নাঘর-এর কর্ত্রীর দাবি, ‘‘প্রতি বছর দশমীতে বরণের পরে মায়ের সামনে হাঁটু মুড়ে বসেন অগ্নিদেব। জোড়হাতে মাকে পরের বছর আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় দেন। বলেন, ‘‘আবার এসো মা। এক বছর এই নিমন্ত্রণ জানাতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। সে বছর কেউ কিছুতেই দেবীপ্রতিমা নাড়াতে পারেননি! শেষে আমার স্বামী হাত জোড় করে জানু পেতে মায়ের সামনে বসে আমন্ত্রণ জানাতেই নড়ে ওঠে কাঠামো।’’
রীতি মেনে দশমীর বিকেলে প্রতিমাকে সিঁদুর খেলে বরণ করবেন চট্টোপাধ্যায় পরিবার।