প্রিজ়ন ভ্যানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। হাতে ‘ভিক্ষাপাত্র’। —নিজস্ব চিত্র।
কোনও ঘোষণা ছাড়াই আচমকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির অদূরে ‘ভিক্ষাপাত্র’ হাতে হাজির সুকান্ত মজুমদার। সুকান্ত পৌঁছোতেই প্রায় ‘গেরিলা’ কায়দায় আশপাশের গলি থেকে রাস্তায় হাজির বিজেপি কর্মীরা। হাজরা মোড়ে ধস্তাধস্তি বিজেপি ও পুলিশের মধ্যে। গ্রেফতার করা হয় রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত-সহ অনেককে। সুকান্তের প্রশ্ন, মুর্শিদাবাদে আক্রান্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কেন বাধা দিল পুলিশ?
মুখ্যমন্ত্রী মমতার বাসভবনের অদূরে হাজরা মোড়ে বিজেপি মঙ্গলবার যে কোনও কর্মসূচি পালন করবে, তার কোনও ঘোষণা আগে থেকে ছিল না। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ বিজেপির তরফ থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়, ৫টায় হাজরা মোড়ে একটি কর্মসূচিতে সুকান্ত হাজির থাকবেন। কিন্তু কী সেই কর্মসূচি, তা বিশদে তখনও জানানো হয়নি। এর কিছু ক্ষণ পরেই সুকান্ত হাজরা মোড়ে পৌঁছোন। তিনি ছাড়াও পৌঁছোন রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদক দীপাঞ্জন গুহ, উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপি সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ এবং অনুপম ভট্টাচার্যেরাও। তাঁরা পৌঁছোতেই আশপাশের বিভিন্ন গলি ও পাড়া থেকে বিজেপি কর্মীরা হাজরা মোড়ের দিকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেন।
সুকান্ত-সহ বিজেপি নেতাদের হাতে ছিল ছোট ছোট বাক্স। তাতে লেখা, ‘ঘরছাড়াদের জন্য ভিক্ষাপাত্র’। সেই পাত্র হাতে নিয়ে পথচলতি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মুর্শিদাবাদের ‘ঘরছাড়া’দের জন্য আর্থিক সাহায্য চাইতে শুরু করেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। পুলিশ সুকান্তদের এই ‘ত্রাণ সংগ্রহে’ বাধা দেয়। পুলিশ জানায়, বিজেপির এই কর্মসূচির জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। প্রথমেই বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে আটক করার চেষ্টা করে পুলিশ। ফলে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। সুকান্ত প্রশ্ন তোলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে আক্রান্ত মানুষের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করতে কেন অনুমতি নিতে হবে? যারা মুর্শিদাবাদে অশান্তি করেছে, তার কার অনুমতি নিয়েছিল?’’
সুকান্তকে গ্রেফতার করে লালবাজারে পাঠানো হয়। একে একে গ্রেফতার করা হয় জগন্নাথ, দীপাঞ্জন, তমোঘ্ন, অনুপমদেরও। বিজেপি, যুব মোর্চা এবং মহিলা মোর্চার কর্মীদেরও গ্রেফতার করে লালবাজারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৭টা ২০ নাগাদ তাঁদের ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে যে কায়দায় বিজেপি মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অদূরে এমন অভিনব কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামল, তার দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক অতীতে বিরল।