কৌশানী মুখোপাধ্যায়
আমার ছোটবেলাটা স্বপ্নের মতো সুন্দর। বিশেষত, দুর্গাপুজোর স্মৃতি আমার কাছে খুব আনন্দের। পুজো মানেই ছোটবেলা থেকেই পরিবার আর ভাইবোনদের বুঝি আমি। দিনে একটা জামা আর রাতে আর একটা জামা, এ ভাবে পাঁচ দিনে দশটা জামা হতো আমার। ভাইবোনদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতো, কার ক'টা জামা হল! পুজো মানে ছিল নতুন জুতো পরে হেঁটে হেঁটে ঠাকুর দেখা। প্রচুর হাঁটতাম, পায়ে ফোস্কা পরে গেলে ব্যান্ডেড লাগিয়ে আবার। ভাইবোনদের সঙ্গে ফুচকার প্রতিযোগিতা, দেদার আড্ডা আর রাতভর হুল্লোড় চলত।
আরও একটা ব্যাপার ছিল। পাড়ার ক্লাবের পুজোয় ভলান্টিয়ার আমাকে হতেই হবে! তাই ভলান্টিয়ার হওয়ার পাস জোগাড় করাও ছিল আমার অন্যতম বড় কাজ। বন্ধুদের ভিআইপি লাইন থেকে সোজা ক্লাবের প্যান্ডেলে ঢুকিয়ে দিতে পারাটা আমাদের কাছে একটা বীরত্বের কাজ ছিল সে সময়ে। ছোটবেলা থেকেই নাচতে ভালবাসতাম বলে পাড়ার ক্লাবের পুজোয় নাচের অনুষ্ঠানও থাকতই। আমার বাবা যে বার জিপসি গাড়ি কিনল, সেই হুডখোলা গাড়িতে আমরা ঘুরতে বেরিয়েছিলাম।
একটু বড় হতে অবশ্য পুজোর সংজ্ঞাটা একটু পাল্টাল। মডেলিং কম্পিটিশনে নাম দিতাম আর জিততাম। ফলে প্রচুর অ্যাটেনশন পেতাম। তার পরে পরিচিতি বাড়তেই জীবনে এল প্রচুর প্রেম। পুজো মানে অবশ্য তখনও প্রচুর খাওয়া আর অনেক আড্ডা।
এ বছর পুজোয় আমার ছবি ‘বহুরূপী’ মুক্তি পাচ্ছে। অভিনেত্রী হিসেবে এটা আমার কাছে বড় পাওনা। ছবির প্রচারের জন্য প্রতি বছরের মতো ষষ্ঠী অবধি কাজ করে পুজোর বাকি দিনগুলো পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কাটানোর প্ল্যান আছে। আর হ্যাঁ, পুজোয় জমিয়ে খাওয়ার ইচ্ছেও আছে। তাই এখন থেকেই খাওয়াদাওয়ায় রাশ টেনে রেখেছি। বদলে অপেক্ষা করে আছি ছানার ডালনা, খিচুড়ি-আলুর দম, বিরিয়ানি, ফুচকার জন্য!
আন্দোলন আর প্রতিবাদে আমরা সকলে আছি। সময় করে উঠতে পারলে সশরীরে প্রতিবাদে সামিলও হয়েছি। কিন্তু পুজো হোক পুজোর মতো। এই চার-পাঁচটা দিনের সঙ্গে বহু মানুষের রুজি-রোজগার জড়িয়ে। যার ইচ্ছে পুজোয় আনন্দ করার, তার তা করা উচিত। এর জন্য কাউকে ট্রোল করা উচিত নয় বলেই আমার মনে হয়। সারাদিন অফিস করে ফেরার পরেও মানুষ যে গড়িয়াহাটে কেনাকাটা করছেন, এই ছবিটা আমার কাছে খুব ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। প্রতিবাদ-আন্দোলন যেমন চলছে চলুক। সঙ্গে পুজো আসার যে আমেজ, রং, গন্ধ, সে সবও এক থাকুক।
এই প্রতিবেদনটি আনন্দ উৎসব ফিচারের একটি অংশ।