ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়
বাঙালির সারা বছর কাটে এই চারটে দিনের মুখ চেয়ে। পুজো ঘিরে এই উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনাই ভীষণ প্রিয় ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়ের।
ছোটবেলার পুজোয় ছিল রোজকার পড়াশোনা, স্কুলে যাওয়া থেকে পুরোপুরি ছুটি পাওয়ার আনন্দ। বাবা-মায়ের সঙ্গে, পাড়ার এবং স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে হইহই করে ঠাকুর দেখতে বেরনো। ঋতব্রত জানাচ্ছেন, ছোটবেলার সেই সব স্মৃতির সিংহভাগ জুড়ে আছে সারা দিন, সারা রাত ঠাকুর দেখা। সেটাই তখন পুজোর বোনাস!
কোভিডের কারণে পুজোর সেই চেনা রুটিনে ফাঁক পড়েছিল। তবে ২০২১ থেকে আবার জমিয়ে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা শুরু করে দিয়েছেন ঋতব্রত। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া বন্ধুবান্ধবরা পুজোয় বাড়ি ফিরলে সারা বছরের রসদ জোগানোর আড্ডা, মজা তো করতেই হয়!
ঋতব্রতর পুজো মানে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া আর প্রেমও বটে! কৈশোরে পুজো মানে তখন বলিউডি প্রেমের স্বপ্ন। হাসতে হাসতেই জানালেন, ক্লাস সিক্স-সেভেনে পাড়ার বান্ধবীর সঙ্গে পুজোর চার দিন কেটে যেত এ ভাবেই, সপ্তম স্বর্গে! ল্যান্ডলাইনে বন্দি সারা বছরের চুপিচুপি প্রেম মুক্তির স্বাদ পেত কেবল পুজোর ক’টাদিন। চেনা গন্ডি আর চেনা শাসনের বাইরে দু’জনে মিলে যেন ডানা মেলার ওড়ার স্বাদ!
এ বছরের পুজোর প্ল্যানিং তা হলে কী? পুজোর আগে নতুন সিরিজের শ্যুটিং নিয়ে রীতিমতো ব্যস্ত ঋতব্রত। সেই সঙ্গেই রীতিমতো গর্বিত গলায় জানালেন, এ বছর মহালয়ার আগেই তাঁরা মঞ্চস্থ করতে চলেছেন উৎপল দত্তের বিখ্যাত নাটক ‘দিল্লী চলো”। তাই রিহার্সালের চাপ তো রয়েইছে। সঙ্গে রয়েছে দর্শকদের কথা ভেবে উত্তেজনাও। পুজোর ক’টাদিন তাই এখন ছুটি মেলা ভার। তবে ভরপুর ব্যস্ততা পেরিয়ে যখন ছুটি আসে। সঙ্গে থাকে অনাবিল শান্তি আর দ্বিগুণ হয়ে যায় পুজোর উন্মাদনা। পুজোর দিনগুলোর আশপাশে অনেক শো থাকলেও ছোটবেলার বন্ধুদের প্ল্যান বাদ যাচ্ছে না মোটেই!
ছোটবেলার লাগামছাড়া আনন্দের পুজোই কি বেশি ভাল ছিল, এখনের ব্যস্ত জীবনে কুড়িয়ে বাড়িয়ে পাওয়া ছোট্ট ছুটির চেয়ে? অভিনেতা জানালেন, বছর পাঁচেক আগের সময়টা ফিরে দেখলে বছর সতেরোর ঋতব্রতর কাছে এখনকার এই সাফল্য কিংবা ব্যস্ততা খুব গর্বের কারণ হয়ে উঠত। তাই ছোটবেলার পুজোর সঙ্গে এখনকার পুজো তুলনার জায়গাতেই আসে না। আজকের এই ব্যস্ত রুটিনের মাঝে এক টুকরো ফুরসতের পুজো তাঁর কাছে প্রিয়, বড্ড গর্বেরও।
এই পুজোয় যদি পূরণ হত যে কোনও তিনটি বর, তা হলে কী চাইতেন তিনি ?
আমুদে গলায় উত্তর এল টেলিফোনের ওপার থেকে- “ভীষণই ব্যক্তিগত একটি বর চাইব, যেন আমি লম্বা হই!’’ দ্বিতীয় বর হিসেবে ঋতব্রত চান, পরিবারে তিনি তাঁর বাবা মায়ের সঙ্গে যেন সব সময় একটা টিমের মতো করেই কাজ করতে পারেন। গত কয়েক বছরে যত কাজের চাপ বেড়েছে, ততই পরিবার হিসেবে কাছে এসেছেন তাঁরা। এমনটা চলুক সারা জীবন, চান ঋতব্রত। আর তৃতীয় বর হিসেবে তাঁর চাওয়া, আরও ভাল ভাল কাজ করে শুধু টলিঊড নয়, বিশ্বের অন্যান্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজের সুযোগ পাওয়া।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।