ছোটবেলায় পুজোর চারটে দিন যেন হাতে স্বর্গ পেতাম। পড়া নেই। শাসন নেই। ছুটিই ছুটি।
ছোট বেলায় আমার পুজো মানেই এক টাকার চারটে চালতার টুকরো। নুন, তেল, লঙ্কাগুঁড়ো সহ যাবতীয় মশলা মাখানো। ওই যে, আচারওয়ালার কাছে বিক্রি হত না? ওটার প্রতি কী অদম্য আকর্ষণ। পুজোয় হাতখরচ মিলত তখন। তাই দিয়ে প্রায় প্রতিদিন ওই ‘নিষিদ্ধ’ বস্তু খেয়ে ঠোঁট, জিভ, হাতের আঙুল কটকটে হলদে! আমার যেন তাতেই শান্তি। আর মায়ের বকুনি অগ্রাহ্য করে রাত-দিন চার দিন পুজো মণ্ডপে পড়ে থাকা। মা শেষে স্নান-খাওয়ার জন্য এক সময় হিড় হিড় করে টানতে টানতে বাড়ি নিয়ে যেতেন। নইলে আমার টিকি কেউ ছুঁতে পারত না!
যত বড় হয়েছি, পুজোর সেই অপাপবিদ্ধ আনন্দগুলো এক এক করে ‘স্মৃতি’র ঘেরাটোপে বন্দি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দগুলোও বদলে গিয়েছে। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরা তার পরেও ছিল এবং আছে। কিন্তু সেই নির্ভার জীবনটাই আর নেই। চারটে দিন যেন হাতে স্বর্গ পেতাম। পড়া নেই। শাসন নেই। ছুটিই ছুটি। নিজে থেকেই সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। দিনগুলো যেন হাওয়ায় ভাসত। ক্রমশ এত রকমের দায়-দায়িত্ব বাড়তে আরম্ভ করল যে তার চাপে একেক সময় যেন বড্ড হাঁপিয়ে উঠি!
যত বড় হয়েছি, পুজোর সেই অপাপবিদ্ধ আনন্দগুলো এক এক করে ‘স্মৃতি’র ঘেরাটোপে বন্দি।
এ বছরের পুজোর কথাই ধরুন। এ বার আর একার পুজোর নয়, নির্বাচনী কেন্দ্রের সমস্ত অধিবাসীদের নিয়ে আমার পুজো। ফলে, পুজোর সময় অতিমারির সমস্ত নিয়ম মেনে যাতে পুজো হয় সে দিক কড়া নজর রাখতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়ির দিকটাও দেখতে হবে। সপ্তমী থেকে নবমী ঢালাও রান্নাবান্না বাড়িতে হয়। তার মধ্যেও অষ্টমীর অঞ্জলি আর দুপুরের খিচুড়ি ভোগ চাই-ই চাই। এক দিন পাঁঠার মাংস না খেলে মন ওঠে না। সঙ্গে বিরিয়ানি হলে লা-জবাব। তবে বিরিয়ানিটা বাড়িতে রান্না হয় না। ওটা দোকান থেকে আনানো হয়।
আর একার পুজোর নয়, নির্বাচনী কেন্দ্রের সমস্ত অধিবাসীদের নিয়ে আমার পুজো।
পুজো এলেই লাভলি মৈত্র বিশুদ্ধ বাঙালিনী। শাড়ি ছাড়া আর কিচ্ছু পরি না। প্রতি বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৭ সেপ্টেম্বর আমার জন্মদিনে শাড়ি দেন। আরও অনেক উপহার পাই। আমিও কাজের ফাঁকে কেটাকাটা সেরেছি। এতেই পুজো জমে যাবে। সঙ্গে চাই একটু পুরনো দিনের গয়না। আর অবশ্যই চওড়া শাঁখা-পলা। সিঁথিতেও চওড়া সিঁদুর থাকবে। সঙ্গে বড় লাল টিপ, লিপস্টিকস কাজল, ঘাড়ের কাছে হাতখোঁপা আর ফুল---- এর থেকে ভাল পুজোর সাজ আর কী হতে পারে?